X

রেসিডেন্সি ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশনঃ সিদ্ধান্ত নিন এখনই

“কার্ডিওলজি” উচ্চারণ করতে গিয়ে মুখ যতটা বড় হয়, বুক ফুলে উঠে বাস্তবতার বিচারে “কার্ডিওলজি”/ইন্টারনাল মেডিসিন বা এরকম স্পেশালিটিতে ক্যারিয়ার করা কতটা ভালো সিদ্ধান্ত? কোন সাবজেক্টকে ছোট করা নয়, সামনে রেসিডেন্সি পরীক্ষায় আপনাকে আরেকটু সতর্ক হয়ে বিষয় নির্বাচনে সাহায্য করতে প্ল্যাটফর্ম ক্যারিয়ার উইং এর পক্ষ থেকে আমার এই লেখা।

প্রথমত,
১০০০ হাজার জন চিকিৎসকের এক লাইনের পেছনে আপনি এক হাজার এক তম হবেন না ১০ জনের লাইনে ১১ তম ব্যক্তি হবেন প্রথমে এ সিদ্ধান্ত নিন । রোগী দেখাই যদি ডাক্তারি পড়ার মূল উদ্দেশ্য হয় তবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের স্পেশালিটি বেছে নিতে হলে সবার আগে হিসেব করতে হবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের পর আপনার সাবজেক্টের রোগীদের চাহিদা কেমন থাকবে? সরকারি চাকরি করতে চাইলে আপনার বিষয়ে মেডিকেল কলেজ অথবা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে কী পরিমাণ(কন্সাল্টেন্ট/অধ্যাপক) পদ আছে? পাশ করতে করতে কতটা ফাঁকা থাকবে অথবা নতুন পোস্ট সৃষ্টির সুযোগ আছে কিনা? সরকারি চাকরি না করতে চাইলে বেসরকারি ফাইভ স্টার হাসপাতালগুলোতে(স্কয়ার/এপোলো/ইউনাইটেড) কোন চাহিদা আছে কিনা আপনার স্পেশালিটির? পপুলার/ল্যাব এইড বা এ ধরনের সেন্টারগুলোতে মূলত সিনিয়র অধ্যাপকগণ সরকারি চাকরিতে থেকে অথবা অবসর নেবার পর কাজ করেন-এটা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন/ট্রেনিং চলাকালে পেরিফেরিতে অথবা বড় শহরগুলোতে আপনি নিজের স্পেশালিটির নলেজ দিয়ে স্বাধীনভাবে চেম্বার/বড় স্যারদের সহকারী হিসেবে কাজ করে নিজের খরচ চালাতে পারবেন কিনা? পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কিনা নাকি কোন প্রাতিষ্ঠানিক/দলগত সাপোর্ট লাগবে? মূল কথা ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ বিবেচনায় রেখে প্রাথমিকভাবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন স্পেশালিটির জন্য চেষ্টা করা।

দ্বিতীয়ত,
১০ তলা সিড়ি ভাঙ্গার কষ্ট করলেন, কিন্ত ৩ তলা পর্যন্ত উঠতে পারলেন অথবা বেসমেন্ট/আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরেই উঠতে পারলেন না। যে স্পেশালিটি বেছে নিয়েছেন সেটায় পার্ট ওয়ান অথবা রেসিডেন্সিতে সুযোগ পাওয়া কতটা সহজ? রেসিডেন্সি থেকে সুযোগ পাওয়ার পর আপনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা/ডেডিকেশনের পরেও ডিগ্রি কমপ্লিট করা কতটা অযৌক্তিক/অন্যায় বাঁধা মুক্ত? আবার ফিরে আসি “কার্ডিওলজি” প্রসঙ্গে। নাহ কার্ডিওলজির সাথে কোন শত্রুতামি নেই, বা ব্যর্থ কার্ডিওলজি পরীক্ষার্থীও আমি নই। রেসিডেন্সিতে একটা সিটের বিপরীতে প্রতিযোগিতা কোনটায় বেশি? আপনার মেধা, ধৈর্য, প্রস্তুতি সব কিছু মিলিয়ে আপনি কি সত্যি সত্যি কার্ডিওলজি/এন্ডোক্রাইন/নিউরো সার্জারির মত স্পেশালিটিতে ফাইট দিতে পারবেন? নাকি একটা বছর শুধু শুধু নষ্ট করছেন? হতাশ হচ্ছেন? দশ তলায় উঠার পরিশ্রম করছেন কিন্তু গ্রাউন্ড ফ্লোরে পৌঁছাতে পারবেন না? ব্রাজিল হবেন না ইতালি হবেন আগেই ঠিক করে নিন? পাঁচ গোল দিবেন না এক গোল না খেয়ে কিভাবে জিতে আসা যায় আবার নতুন করে পরিকল্পনা করবেন? এরকম নজির একসময় ছিল, পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের জন্য বাড়ির কাঁচা বাজার ও করে দিতে হয়েছে সুপারভাইজারের(নাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবেন না)। আবার এরকম কিছু বিষয় আছে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে আপনাকে ফার্স্ট এসিস্টেন্ট হিসেবে দাঁড়াতে হবে নুন্যতম পাঁচ-সাত বছর(এটা স্কিল বাড়ানোর জন্য হলে ঠিক ছিলো কিন্তু সেজন্যে নয়, রোগী পাবেন না তাই) বা ল্যাবে নামকরা অধ্যাপকের অধীনে মাসিক বেতনে চাকরি করতে হবে(কারণ স্বাধীনভাবে ল্যাব চালানো অসম্ভব)। তাহলে দ্বিতীয় বিবেচনা হবে, নিজের সামর্থ্য/মেধা/পরিশ্রম অনুযায়ী কোর্সে সুযোগ পাওয়া এবং সর্বোচ্চ যোগ্যতা অর্জনের পর ডিগ্রি কমপ্লিট করার সম্ভাব্যতা।

তৃতীয়ত,
হিমালয়ের চূড়ায় কি একা উঠবেন? সম্ভব? পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ও একা একা সম্ভব নয়। প্রস্তুতি, ট্রেনিং/কোর্স সব খানেই আপনাকে বিভিন্ন মানুষের সাথে এক সাথে কাজ করতে হবে। যা আছে তাই মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা মেডিকেল কলেজেই তৈরি হয়ে যায় সেটার চরম পরীক্ষা দিতে হবে। তৃতীয় পয়েন্টটার গুরুত্ব আসলে কোর্স শুরু হবার পর তবু গত কয়েক বছরে চান্স পেয়েও আমার কাছের অনেক চিকিৎসক কোর্স ছেড়ে দিয়েছেন তাই লিখছি। বেসিক সাব্জেক্টগুলোতে স্বভাবতই মহিলা চিকিৎসকদের আধিক্য থাকে, আপনি যেটায় সুযোগ পেলেন এরকম দেখলে সেটাই মানিয়ে নিতে হবে। একটা স্পেশালিটিতে প্রতিদিন প্রতিটা রেসিডেন্টকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টে লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতে হয় অঘোষিত ভাবে, সেটা আগে থেকে জানলে মাথায় রেখেই ঢুকতে হবে, না জানলে সুযোগ পেলে মানিয়ে নিতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন ইন্সটিটিউট এমনকি খোদ মাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে কোর্সের ভবিষ্যত নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন, ঢাকার বাইরের অনেক ইন্সটিটিউটে অতটা গুছিয়ে হয়ত পরিচালিত হবে না তবে সবসময় সুযোগ পাবার আগের দিনগুলো আর পাশ করার পরের সুসময়ের কথা ভেবে পার করতে হবে সব কিছু। তৃতীয় এবং সম্ভবত টিকে থাকার উইনিভার্সাল সূত্র হচ্ছে-যাই আসুক কোর্সে যাবার পর মানিয়ে নিতে হবে।

আমাদের সবারই স্বপ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা দেয়া। মেডিকেলে চান্স পাবার পর থেকেই অবচেতন মনে অথবা সচেতনভাবেই আমরা কোন না কোন বিষয়ের সেরা হতে চেয়েছি। কিন্তু স্বপ্ন এবং সেটা অর্জনের মধ্যে যে ব্যবধান সেটা উপযুক্ত সময়ে সঠিক কিছু সিদ্ধান্তের অভাবে আক্ষেপের কারণ হয়। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ করতে প্ল্যাটফর্ম ক্যারিয়ার প্ল্যানিং উইং এর প্রচেষ্টার প্রথম কিস্তি। পরের কিস্তিতে প্রস্তুতি নিয়ে কিছু লিখবো।

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (12)

Related Post