X

মেডিসিন ক্লাবের আয়োজনে অনলাইনে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতামূলক জাতীয় মতবিনিময় সভা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, রবিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

“এ যাত্রা কারো একার নয়”- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিসিন ক্লাব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ তারিখ দুপুর ১২ ঘটিকায় তারা আয়োজন করে অনলাইন ভিত্তিক জাতীয় মতবিনিময় সভা যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা, ডা. আজিজুল আলিম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এমএন্ডসিএইচ, প্রফেসর ডা. আশরাফুন্নেসা, চেয়ারম্যান, গাইনি অনকোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আরো উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, ডিরেক্টর, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনষ্টিটিউট এবং হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. বেগম রোকেয়া আনোয়ার, বিভাগীয় প্রধান, গাইনি অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রজেক্ট ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন,সাধারণ সম্পাদক, গাইনি অনকোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ, অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, সভাপতি, ওজিএসবি, ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, সহযোগী অধ্যাপক, ক্যান্সার এপিডেমিওলজি সহ ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি, দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনসহ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেডিসিনি ক্লাবের সদস্য বৃন্দ।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার নারীদের একটি অন্যতম ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী রোগ। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নারী এই রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৬ হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন এই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কারণে। বাল্যবিবাহ, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থা, অপরিচ্ছন্ন বাসস্থান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাবের কারণে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। কিন্তু সচেতনতা, নিয়মিত স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সুস্থ মানুষের শরীরে রোগ শনাক্তকরণ এবং প্রতিষেধক গ্রহণের মাধ্যমেই এই রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আজকের আলোচনা সভায় বক্তারা তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে এখনো পর্যন্ত কতটুকু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং তা অর্জনের জন্য কিভাবে সম্মিলিত সমন্বয় প্রয়োজন – এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ২০১৯ সালে ৩,৬৫,০০০ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা গেলেও ২০২০ সালে করোনার কারণে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২,৪০,০০০ (নভেম্বর পর্যন্ত)। সরকারের পক্ষ থেকে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রতিষেধক এর জন্য “গ্যাভী” তে আবেদন পত্র পাঠানো হয়েছে। সকল উপজেলায় জনসংখ্যা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করার জন্য ৩১০টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ দেয়া সমাপ্ত হয়েছে। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। ২০০৫ সালে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ৩১০ টি উপজেলা সহ মোট ৫০০ টি ভায়া সেন্টার রয়েছে। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ভায়া টেস্ট করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে সরকারের এই কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এগিয়ে আসে।

৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলাদের স্ক্রিনিং এর আওতায় আনা, ভায়া পজেটিভ রোগীদের সঠিক রেফারেলের মাধ্যমে পরবর্তী কল্পোস্কপি ক্লিনিকে পাঠানো, ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিং সিস্টেম এর আওতায় আনা, দেশের বাস্তবতার নিরিক্ষে সঠিকভাবে WHO এর টার্গেট টুলকিট সমন্বিতভাবে কিভাবে অর্জন করা যায়- এ নিয়ে বক্তারা বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে এজন্য তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মেডিসিন ক্লাব এর উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করেন। মেডিসিন ক্লাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরমান হোসেন আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে জাতির স্বার্থে এ কার্যক্রমে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকবেন বলে জানান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেডিসিন ক্লাবের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বৃন্দ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাতে হাত রেখে এই জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিহত হবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রেখে হোক প্রতিরোধ জরায়ু মুখ ক্যান্সার।

অংকন বনিক:
Related Post