X

মেডিকেলিও যন্ত্রপাতিঃ পর্ব ১- স্ফিগমোম্যানোমিটার

আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্ল্যাটফর্ম ওয়েবের নিয়মতি সিরিজ , মেডিকেলিও যন্ত্রপাতি । রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫৫তম ব্যাচের ছাত্র আব্দুর রাফি লিখেছেন ডাক্তারদের অতি প্রয়োজনীয় কিছু ইন্সট্রুমেন্ট এর ইতিহাস বৃত্তান্ত । আজকের পর্বে থাকছে আমাদের অতি পরিচিত “প্রেসার মাপার যন্ত্র” যাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় ‘স্ফিগমোম্যানোমিটার’, তার ইতিহাস ।

রক্তচাপ পরিমাপের ইতিহাসটার সূচনা হয় ১৭৩৩ সালে যখন স্টিফেন হেলস ধারণা দেন হৃদপিন্ড দ্বারা সৃষ্ট চাপ রক্ত প্রবাহের পরিমাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি একটা ঘোড়ার ধমনীতে টিউব প্রবেশ করান, যার অন্য প্রান্ত একটা কাচনলের সাথে যুক্ত ছিল। দেখা যায় কাচনলের ভেতর রক্তপ্রবাহ প্রায় ৯ ফুট পর্যন্ত উঠে যায়। অবশ্য পরিমাপকৃত রক্তচাপ ঘোড়াটির কোনো কাজে লাগার আগেই সে ইহলোক ত্যাগ করেছিল। :’-(

পরবর্তীতে ১৮২৮ সালে জিন লিওনার্দো ম্যারি পয়সুলি একটি ম্যানোমিটার তৈরি করেন, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘হিমোডায়নামোমিটার’। এতে একটি U আকৃতির টিউবের ভেতর পারদ ছিল এবং টিউবের মাথায় একটি ক্যানুলা লাগানো ছিল, যার ভেতর ছিল ‘retractable core’। ক্যানুলাটি যখন ধমনীতে প্রবেশ করানো হতো তখন রক্তপ্রবাহ এর কোরের উপর চাপ প্রয়োগ করতো এবং সেই চাপের প্রভাবে টিউবের ভেতরের পারদ উঠানামা করতো। পারদের উচ্চতার পার্থক্য থেকে রক্তচাপ পরিমাপ করা হতো। ১৮৪৭ সালে কার্ল লুডভিগ এ পদ্ধতির আরো আধুনিকায়ন করেন ম্যানোমিটারের পারদস্তম্ভের সাথে সঞ্চারণক্ষম কলম ও ঘূর্ণায়মান ড্রাম সংযুক্ত করে (অনেকটা বর্তমানে ব্যবহৃত স্পাইরোগ্রামের মতো)। ফলে রক্তচাপের graphical presentation সম্ভব হয় এবং এ যন্ত্রের নাম দেয়া হয় কাইমোগ্রাফ।

কিন্তু এ পদ্ধতিগুলোর সমস্যা হলো এতে ‘invasive measure’ দরকার পড়ে। “ধমনীতে রক্ত যে চাপে প্রবাহিত হয়, রক্তপ্রবাহ থামাতে তার সমান বিপরীত চাপ (counter pressure to stop circulation) প্রয়োগ করতে হয়”- এ ধারণার ভিত্তিতে ১৮৫৫ সালে প্রথম ‘non invasive’ পদ্ধতিতে রক্তচাপ মাপার চেষ্টা করা হয়। ১৮৬০ সালে এটিন জুলস ম্যারি সর্বপ্রথম আবদ্ধ গ্লাস চেম্বারে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় বিপরীত চাপ পরিমাপ করেন। ১৮৮১ সালে স্যামুয়েল সিগফ্রিড কার্ল রিটার ভন বাস্ক এ পদ্ধতিকে আরো উন্নত করেন। তিনি একটি রাবার ব্যাগ distal pulse এর উপর স্থাপন করেন এবং সেটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত পানিপূর্ণ করেন, যতক্ষণ না সেই পালস বিলুপ্ত হয় অর্থাৎ রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে পিয়েরে পোটেন কম্প্রেসন ব্যাগে পানির পরিবর্তে বাতাস ব্যবহার শুরু করেন। ১৮৯৬ সালে সিপিয়ন রিভা রকি বাহুর চারপাশে কাফ বাধা শুরু করেন এবং বর্তমানে প্রচলিত রেডিয়াল পালস এর সাপেক্ষে রক্তচাপ পরিমাপের পদ্ধতি চালু করেন। কিন্তু এসব পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হলো এতে কেবল systolic pressure ই মাপা সম্ভব ছিল।


প্রথম diastolic pressure মাপা সম্ভব হয় ১৯০৫ সালে যখন রাশিয়ান বিজ্ঞানী নিকোলাই কোরটকফ ‘korotkoff sound’ সনাক্ত করতে সক্ষম হন। যখন কাফ প্রেশার ও সিস্টোলিক প্রেশার সমান হয়, তখন বন্ধ ধমনীতে পুনরায় রক্ত চলাচল শুরু হয় এবং ‘korotkoff sound’ এর সূচনা হয়। ধমনীতে কাফের দুপাশে চাপের পার্থক্য এবং প্রতি হৃদস্পন্দনের সাথে সেই পার্থক্যের পরিবর্তন রক্তের ‘turbulent flow’ সৃষ্টি করে, যার ফলে ‘korotkoff sound’ এর সৃষ্টি হয়। যখন কাফ প্রেশার আর ডায়াস্টোলিক প্রেশার সমান হয় তখন ধমনীতে কাফের দুপাশে চাপের পার্থক্য থাকে না এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। ফলে কোনো শব্দ শোনা যায় না। এভাবে systolic ও diastolic উভয় রক্তচাপই মাপা সম্ভব হয়।

এটিই মূলত আধুনিক sphygmomanometer এর বেসিক কনসেপ্ট। পরবর্তীতে রক্তচাপ পরিমাপ পদ্ধতির আরো উন্নতি হয়েছে, আধুনিক ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এবং আশা করা যায়, উন্নতির এ ধারা অব্যাহত থাকবে, আরো সহজীকরণ হবে জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ পদ্ধতির।

পরবর্তী টুল Reflex hammer

লিখেছেনঃ
ABDUR RAFI
56MBBS,RMC
SESSION 2014-15

drferdous:
Related Post