X

বিশ্বাসে মিলায় ভূত – শাফকাত সিনহা

প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -১১

“বিশ্বাসে মিলায় ভূত”

লেখকঃ
শাফকাত সিনহা
রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ।

বছর পাঁচেক আগের কথা। রোজার ঈদে দাদাবাড়িতে ফুপুরাও ছিল আমাদের সাথে। ঈদের পরদিন। গল্প করে আর টিভি দেখেই দিন কেটে গেছে। আকাশটাও মেঘলা। তাই বেরোনোও হয়নি ঘর থেকে। ফুপু সন্ধ্যার একটু আগে বলল কিছু জিনিস লাগবে। আশেপাশে তেমন দোকানপাট নেই। দুএকটা যা আছে সেগুলোও তেমন ভালো না। একমাত্র উপায় বাজারে যাওয়া। খুব দূর নয়। মিনিট পনেরোর পথ। আমি আর সাগর ভাইয়া বেড়িয়ে পড়লাম। সাগর আমার ফুপাতো ভাই, দুবছরের বড়।

অন্ধকার হয়ে এসেছে তখন।কথা বলতে বলতে অবশ্য বাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এ সময় সামনে পড়লো প্রকাণ্ড এক আমগাছ। গাছটার কাণ্ড সোজা,ডালপালাগুলো সমান্তরালে বিস্তৃত হয়ে কেমন একটা ভীতিকর আকৃতি তৈরি করেছে। গাছটাকে নিয়ে অনেক জনশ্রুতিও প্রচলিত আছে গ্রামে। সেদিকে তোয়াক্কা না করে হাঁটতে লাগলাম। বাজারে যখন পৌঁছেছি তখন মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে চা খেলাম। ততক্ষণে চারদিক অন্ধকার। ভুলে টর্চ ও নিয়ে আসি নি। টর্চের কথা বলতে ভাইয়া বলল, “রাস্তায় তো গাড়ি চলছেই।আর মোবাইলের টর্চ আছে তো।””ভয় পাচ্ছ?” হঠাৎ প্রশ্ন করল সাগর ভাইয়া। আমি বললাম ,”নাহ্”। সাগর ভাইয়া তিনটা চুইংগাম একসাথে মুখে পুরে আমাকে দুটো দিয়ে বলল,”চুইংগাম চিবোলে ভয় করবে না!”

বাড়ির দিকে রওনা হলাম। যত কিছু নিয়েই কথা বলি, গল্প ঠিক জমছিল না। বাড়িঘর পেরিয়ে নির্জন জায়গাটায় চলে এসেছি। আশেপাশে মানুষজন নেই। মোবাইলের চার্জ ও শেষ। অন্ধকারে ধীরে চলত লাগলাম। একটা বাঁশঝাড় পেরিয়ে আমগাছটার সামনে আসতেই রক্ত হিম হয়ে গেল। গাছের মতো লম্বা কী একটা পাঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়ে আছে! আমি আর ভাইয়া রীতিমতো কাঁপছি। কারো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। হাঁটতেও পারছি না। দুজন ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। এ সময় একটা গাড়ি পাশ দিয়ে দ্রুত চলে গেল। আর তার হেডলাইটের আলোতে যা দেখলাম, ভাবলে এখনো হাসি চেপে রাখতে পারি না। কেউ একজন পেয়ারা গাছে পাঞ্জাবী ঝুলিয়ে রেখে একটু দূরে কী যেন করছিল। আর তার মোবাইলের মৃদু আলোতেই আমাদের সেই ভূতদর্শন হলো।

Mahbubul Haque:
Related Post