X

বিজ্ঞান ও বিস্ময়ঃ পর্ব-০৬ || চুইংগামে দুশ্চিন্তা মুক্তি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, সোমবার 

ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

আমরা যখন কোন দুশ্চিন্তায় থাকি তখন আমাদের শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম কাজ শুরু হয়। এটা শুরু হলে আমাদের প্রচুর ঘাম হয়, মুখ শুকিয়ে যায়, দ্রুত হৃদস্পন্দন করে ও প্রেশার বেড়ে যায়। এটা শরীরকে অস্থির বানিয়ে ফেলে। এই দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের উল্টো একটা সিস্টেম আমাদের শুরু করানোর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এটা স্বাভাবিকভাবে শুরু করানো সম্ভব হয় না, যদি না আমরা কোন একটা টেকনিক এপ্লাই করি।

সিম্প্যাথেটিক এর উল্টো সিস্টেমকে প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম বলে। এই সিস্টেম শুরু হলে প্রেশার কমে, ঘাম কমে, অস্থিরতা কমে ও শরীর শান্ত হয়। এখন আমাদের একটা বুদ্ধি বের করতে হবে যে কীভাবে সহজে এই প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকে সচল করে দুশ্চিন্তা কমানো যায়। এর জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আমাদের পাকস্থলীকে উত্তেজিত করে এর ভেতরে পাচকরস নিয়ে আসা কেননা দুশ্চিন্তায় থাকলে আমাদের পাকস্থলী নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। এখন আমরা যদি এমন কিছু মুখে দিই যা একদম গিলে খেতে হবে না, কেবল মুখে থাকা অবস্থায় পাকস্থলী উত্তেজিত হয়ে যাবে তাহলে খুবই ভালো হয়। এরকম সবচেয়ে উপাদেয় জিনিস হল চুইংগাম। তবে অবশ্যই কম চিনি যুক্ত হলে উত্তম।

ছবিঃ প্রতীকী

কীভাবে চুইংগাম দুশ্চিন্তা কমাবে?

আমরা চুইংগাম চিবুতে থাকলে মুখের স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে পেটে কিছু আসতে চলেছে। তখন আমাদের মস্তিষ্ক এই তথ্য পেয়ে ভেগাস নামক স্নায়ু দিয়ে পাকস্থলীকে জানিয়ে দেয় যে তুমি যেকোন ভাবেই তৈরি হও খাবার হজমের জন্য। তখন পাকস্থলী তার ভেতরে পাচকরস জমা করতে থাকে ও নড়াচড়া করতে থাকে। এর ফলে দুঃশ্চিন্তার কারণে পাকস্থলীতে যে অবস্থা হয়েছিল সেই পরিবেশ মুহুর্তে পাল্টে যায়। শরীর ভাবতে থাকে যে আমাকে যেহেতু খেতে হবে তাই দুশ্চিন্তা করলে চলবে না। কেননা দুশ্চিন্তায় থাকলে খাবার হজমের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম চালু হয়ে যায় আর সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম অচল হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক চাইলেও তেমন দুশ্চিন্তা করতে পারেনা। এটাতেই আমাদের কার্য হাসিল হয়।

এই সিস্টেমে দুশ্চিন্তা কমে বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। তাই সাইকোলজিস্টরা খেলোয়াড়দের মাঠে অনেক সময় চুইংগাম চিবুতে পরামর্শ দেন। এই পদ্ধতিতে আমরা পড়ালেখার সময় বা পরীক্ষার আগের দুশ্চিন্তা সহ ব্যক্তিগত প্রায় সব দুশ্চিন্তা দ্রুত কমাতে পারব। প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাগুলো সম্পূর্ণভাবে না গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে পারবেন চুইংগাম চিবিয়ে। তবে মুখের দুই পাশেই সমান ভাবে চিবালে ভালো হয়। এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জীবনে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।

Md. Nafiul Islam:
Related Post