X

প্ল্যান কেন্দ্র থেকে না হয়ে প্রান্ত থেকে হোক

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার

ডা. শুভদীপ চন্দ

গ্রামের বৃদ্ধ মহিলারা কানে শোনে কম বোঝে বেশি। সাথে যদি তাদের পরিবার পরিজন থাকে নিজেকে রানী ভিক্টোরিয়া ভাবতে থাকে। চিৎকার করে সব বাতাসের দখল নিয়ে নিলো। কেন এখানে চিকিৎসা হবে না, করোনাকে আমরা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছি, আল্লা একদিন এর বিচার করবেন- আরও অনেক কিছু। ঘটনা হচ্ছে তারা যে রোগী নিয়ে এসেছে তার কমপ্লেনই হচ্ছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট বুকে ব্যথা। এখন স্যাচুরেশন ক্রমাগত নিচে নামছে। সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে তাকে বেশিক্ষণ বাঁচানো যাবে না। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে যেতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন।

ছবিঃ প্রতীকী

আমি মানি এটা। দীর্ঘদিন একসাথে থাকলে নতুনত্ব হারিয়ে যায়। অন্যায়গুলোকে তখন স্বাভাবিক মনে হতে থাকে। চেনা অন্যায়কে ধরতে সবার আগে প্রয়োজন অচেনা চোখ। বুড়ী অন্যায্য কিছু বলেন নি। এভাবে চিকিৎসা হয় না। আমরা রোগী থেকে যত দূরে সম্ভব থেকে বোঝার চেষ্টা করি। বিন্দুমাত্র সন্দেহে নির্ধারিত হাসপাতাল থেকে সনদ আনতে বলি।

ডেডিকেটেড হাসপাতাল থাকুক, সাথে উপজেলা লেভেলে সব হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা হোক। আমাদের এখানে সপ্তাহে তিন দিন পিসিআর পরীক্ষা হয়। সেও নির্ধারিত সময়ে। একজন শ্বাসকষ্টের রোগী আসলে তাকে ডেডিকেটেড হাসপাতালে পাঠানো ছাড়া অন্য উপায় কি। তিনটি আইসোলেটেড বেড রেডি রাখা হয়েছে। কিন্তু কে যাবে দেখতে, অক্সিজেন নল লাগাতে, খাবার দিতে। সুবিধা কই। পিপিই মাস্ক ছাড়া একজন আক্রান্ত হওয়া মানে একজন কমে যাওয়া। অপেক্ষা, অপেক্ষা, অপেক্ষা- নিশ্চিত হবার জন্য। পরীক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন, পরীক্ষা সহজলভ্য করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়। যে লোকটা আক্রান্ত মনে হচ্ছে তাকে ওই মুহূর্তে পরিবার থেকে না সরালে সে আরও কয়েকজনে ছড়িয়ে দিয়ে যাবে। কনটাক্ট ট্রেসিং আমাদের জন্য খুব বাজে শব্দগুচ্ছ। এটি সম্ভব নয়। লোম বাছতে কম্বল উজাড় হয়ে যায়। এমনকি যে রোগীটাকে জেলা শহরের ডেডিকেটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়- কিভাবে যাচ্ছে সে নিয়েও ভাবা প্রয়োজন। প্রচলিত এম্বুল্যান্স সেফ নয়। উপজেলা হাসপাতালে এম্বুল্যান্স থাকেই একটি দুইটি।

আরও ঢালাও ভাবে সাজানো প্রয়োজন। বাস্তব সম্মত উপায়ে। ইউরোপ আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড চিন্তা করে লাভ নেই। আমরা এমন দেশে থাকি যেখানে ইমার্জেন্সির বিপি মেশিন এক মাসে নষ্ট হয়। গ্লুকোমিটার আজ কিনলে কাল খুঁজে পাওয়া যায় না। ওয়েট মেশিন ছাড়াই হাসপাতাল চলে বছরের পর বছর। দুইটার পর সরকারি হাসপাতালে আর টেস্ট হয় না। ইসিজি এক্সরে করতে বাইরে পাঠানো লাগে। এম্বুলেন্স ড্রাইভার একজন- চব্বিশঘণ্টা ডিউটি। ধোপা নেই। ভর্তি রোগীরা প্রায়ই বাড়ি থেকে বিছানার চাদর নিয়ে আসে। হাসপাতালের খাবারের মান নিন্ম। এখানে চিন্তা করতে হবে নিজস্বতা অনুযায়ী। কিভাবে স্বল্প সম্পদে সুরক্ষিত দূর্গ তৈরি করা যায়।

প্রতিদিন টকশোতে বুদ্ধিজীবিরা এসে কথা বলেন। শুনে শুনে ক্লান্তি লাগে। একই টেস্ট কোথাও একশো টাকায় হচ্ছে, কোথাও সাড়ে তিন হাজার সাড়ে চার হাজার টাকায়। দামের ভ্যারিয়েশন সার্ভিসে এক বড় শূন্যস্থান দিয়ে দিচ্ছে। যারা কথা বলেন তাদের উপজেলা জেলা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো ধারনাই নেই। অথচ এখনি সময় বাস্তবসম্মত উপায়ে সাজিয়ে নেয়া। দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দেরী হয়ে গেছে, কিন্তু তৃতীয় ঢেউয়ের আগে তো আমাদের হাতে সময় আছে। এটা স্পষ্ট এটিই শেষ মহামারী নয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয়, চতুর্থ ঢেউ আসবে। কোভিডের চেয়ে বড় বিপদজনক সংক্রামক রোগ আসবে। রাজারা সবসময় বিদেশ পালাতে পারবেন না। তাই নিজের দেশকে নিজের মতো করে গড়ে নেয়া প্রয়োজন। সেটা লোকাল ডিমান্ড অনুযায়ী হোক।

প্ল্যান কেন্দ্র থেকে না হয়ে প্রান্ত থেকে হোক। তবেই সব বদলে যাবে।

 

Silvia Mim:
Related Post