X

পোস্ট গ্রাজুয়েশন কিসে করব?

মেডিকেলে ঢোকার পর থেকেই কম বেশি সবাই জিজ্ঞেস করেছে “তুমি কিসের ডাক্তার হব?” আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে বিশাল সমুদ্রে পড়লাম। বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু টাইটেল/পদবী/ডিগ্রী নিয়ে আলোচনা করছি-

বিসিএসঃ

এটা ডিগ্রি নয় চাকুরী, সার্জারীতে যারা ক্যরিয়ার করতে চায় তাদের জন্য জরুরী। আপনার অর্থনৈতিক ভিত্তি কতটা মজবুত তার উপর নির্ভর করে আপনাকে ডিসিশন নিতে হবে আপনি বিসিএস করবেন কি না।

বেসিক সাবজেক্টঃ

এখানে দুই রকম ব্যপার। দেশে থাকব নাকি বিদেশে?
যদি দেশে থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে এনাটমি, ফিজিওলজি,বায়োকেমিস্ট্রি,প্যাথলজি,মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি তে ২ বছরের এমফিল কোর্স করে বিভিন্ন মেডিকেলে টিচার হওয়া যাবে। চান্স পাওয়া তুলনামূলক সহজ ক্লিনিক্যালের চেয়ে। কোর্স দ্রুত কমপ্লিট হয়। এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে জয়েন করলে সময় ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে প্রফেসর হওয়া যেতে পারে। অল্প সময়ে এস্টাব্লিশড হতে চাইলে বা ক্লিনিক্যালের ঝামেলা এড়াতে চাইলে এই পথে আসা যেতে পারে। আরেকটি অপশন MPH। পাব্লিক হেলথ এর উপর ১-২ বছরের ডিগ্রি। সবচেয়ে ভাল হয় নিপসম অথবা ব্রাক থেকে করতে পারলে। নিপসম এ চান্স পেতে হয়। ব্রাকে টাকার ব্যপার। ব্রাকে খরচ প্রায় আট লাখের মত। এছাড়া আরো ভাল প্রতিষ্ঠান আছে NSU বা AIUB। এখানে সপ্তাহে ১/২ দিন ক্লাস। যারা জবের পাশাপাশি MPH করতে চান এখানে করতে পারেন। পাশ করার পরে কম বেশি স্কোপ আছে। তবে শুধুমাত্র নিপসম থেকে MPH করলে তা সরকারীভাবে স্বীকৃত।
যদি কেউ বিদেশে যেতে চান নন ক্লিনিক্যালে ক্যারিয়ার করতে তাহলে প্রথমে মাস্টারস করুন দেশে। তাহলে স্কলারশিপ পেতে সুবিধা হবে। USA যেতে হলে GRE লাগবে। ইউরোপে IELTS ই যথেস্ট। বিদেশে ননক্লিনিকাল সাব্জেক্টে ভাল স্কোপ আছে। তাই এটা হতে পারে একটা ভাল অপশন।

ক্লিনিক্যাল ক্যারিয়ারঃ
শুরুতে ডিগ্রী সম্বন্ধে ধারণা দেই। তারপর সাবজেক্ট অনুযায়ি বলার ট্রাই করব।

ডিপ্লোমাঃ

এটা ২ বছরের course। তবে পাশ করতে ২ বছরের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এনেস্থিসিয়া তে পাশের হার ভাল। অল্প সময়ে বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে ডিল্পোমা করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে ভ্যালু কিছুটা কম। পেরিফেরি তে অনেক ডিমান্ড। ভ্যালু কিছুটা কমে গেলেও ডিল্পোমা কে ছোট করে দেখার উপায় নেই।

MCPS

এটা বিসিপিএস এর মেম্বারশিপ কোর্স. এমবিবিএস এর পর ৪ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। তবে ১ বছর যে সাব্জেক্টে ক্যারিয়ার করতে চান সেই সাবজেক্ট এ ট্রেনিং লাগবে। তারপর এক্সামে বসে যাবেন। কোন part 1, part 2 systm নাই। ভ্যালু ডিপ্লোমা সমতুল্য। তবে পাশের হার জঘন্য।

FCGP :

এটা কিন্তু BMDC. রিকগ্নাইজড না। এটা ফ্যামিলি মেডিসিন/ জেনারেল প্রাক্টিস এর জন্য ১ বছরের course. ৭৫ হাজার এর মত টাকা লাগে। সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস। শুক্র,শনি। এটা প্রাইভেট প্রাক্টিস এ হেল্প করতে পারে।

FCPS :

এটা ফেলোশিপ। বাংলাদেশে প্রচুর ডিমান্ড। ভারত পাকিস্তানে ও ডিমান্ড আছে। কিন্তু অন্য দেশে এটা রিকগ্নাইজড নয়। এক্ষেত্রে শুরুতে part 1 পাস করতে হবে। তারপর ৩ বছর ট্রেনিং + ১ বছর course. part 1 পাসের হার মোটামুটি হলেও final part পাস করা যথেষ্ট কস্টসাধ্য। তাই fcps পাস করা ডাক্তার দের মান প্রশ্নাতীত।
fcps ট্রেনিং অবস্থায় ডাক্তার দের Honorary Medical officer নামে বিনা বেতনে শ্রম দিতে হয়। তাছাড়া ডিজারটেশন বলে একটা ব্যাপার আছে (থিসিস এর মতন) যা বেশ ঘাম ঝড়িয়ে ছাড়ে

রেসিডেন্সি (MD/MS) :

রেসিডেন্সি কোর্স ৫ বছর। শুরুতে এডমিশন টেস্ট হয় mcq প্যাটার্ন। এডমিশন টেস্ট সাধারণত নভেম্বর এ হয়। course শুরু হয় March এ। এখানে সিট সিস্টেম। তবে এখানে বিদ্যার জোড়ের সাথে টেকনিক্যাল হলে ভাল ফল পাওয়া যায়। সাবজেক্ট চয়েস করতে হবে নিজের যোগ্যতা, ডিমান্ড,ভাল লাগা এসবের উপর। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল MD/MS এ mother subject যেমন Medicine,General surgery etc এর চেয়ে ব্রাঞ্চ এ করা ভাল। MD/MS এ সবচেয়ে বড় সুবিধা হল দ্রুত course শেষ করা যায়। রেসিডেন্ট দের ১০ হাজার করে ভাতা দেয়া হয়। এখানে আপনি honorary medical officer নয় বরং Resident Medical officer/ Resident surgeon হিসাবে সম্মান পাবেন। তবে course এর পাশাপাশি অন্য জব,ঢাকার বাইরে খ্যাপ। বেশ কষ্টসাধ্য। এবং এখানে অন্য কোন ট্রেনিং কাউন্ট করা হয় না।

অন্যান্য

এখন বলি কিছু ছোট খাট course এর কথা। যেটা আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্ট এ বেশ হেল্প করবে।
CCD :

এটা Diabetes এর উপর certificate course. BIRDEM ৎেকে দেয়া হয়। প্রাইভেট প্রাক্টিস এ বেশ সুবিধা পাওয়া যায় এই course এ। তবে এখন এতে চান্স পাওয়া টাও বেশ প্রতিযোগিতার ব্যপার হয়ে যাচ্ছে।

CPR :

এটা আসলে সব ডাক্তার, মেডিকেল স্টুডেন্টস দের ই জানা উচিত। DMC,BIRDEM সবচেয়ে ভাল হবে। মেডিকেল স্টুডেন্ট রাও course করতে পারবে।

CMU/DMU :

এটা আল্ট্রাসনোগ্রাফির ওপর course. CMU certificate course আর DMU ডিপ্লোমা। ডিমান্ড বেশ ভাল।

PGT/ Post graduation Training :

এটা আসলে কোন ডিগ্রি/ course নয়। এটা just. training. যা আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্ট এ বেশ হেল্প করবে। কিছু সাবজেক্ট যেমন Dermatology তে ট্রেনিং টা part 1 এ হেল্প করে। তবে course এ ঢুকার আগে ট্র্বনিং এ না ঢুকাই ভাল। কারণ ওই সময়ে বিনা বেতনে শ্রম দেয়ার চেয়ে course এ ঢুকার প্রিপারেশন নেয়া বেটার।

সাঈদ হাসান
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ

drferdous:

View Comments (20)

Related Post