X

নামমাত্র খরচে, শতভাগ সফলতার সাথে, দেশেই হচ্ছে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট

বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট – ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

২০১৪ সালের ১০ ই মার্চ বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। দেশের প্রথম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। এ পর্যন্ত ৩৫ জনের সফল অটোলোগাস বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি যুগান্তকারী সংযোজন যার মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সারসহ অন্যান্য অনেক জটিল রক্তরোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী এই উন্নত চিকিৎসা সুবিধার জন্য বিদেশ যান। কিন্তু, এখন দেশেই সম্ভব হচ্ছে।

২০১৪ সালের মার্চে প্রথম ট্রান্সপ্লান্ট হয় multiple Myeloma র এক রোগীর । এরপর লিম্ফোমা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এভাবেই ক্রমান্বয়ে চলছে, এই জটিল চিকিৎসা। কিন্তু, সফলতার অংশ হলো, এই রোগের চিকিৎসা করতে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী মারা যায়নি।

আর এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেমাটোলজি ডিপার্টমেন্ট এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মহিউদ্দিন খান( এম.এ খান) স্যার ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রান্সপ্ল্যান্ট খরচ, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায়ও অনেক কম।
ট্রান্সপ্ল্যান্ট খরচ মাত্র ৫ – ৬ লক্ষ টাকা। একই ট্রান্সপ্ল্যান্ট খরচ সিংগাপুরে ৫০ লক্ষ টাকা, আর ভারতে ১৫-২০ লক্ষ টাকা।

এখন পর্যন্ত এই কেইস গুলোর সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে এবং সফলতার হার শতভাগ ; 1. Relapsed Lymphoma 2. Multiple Myeloma 3. AML 4. Relapsed Acute promyelocytic leukaemia 5. Plasma cell leukaemia.

এছাড়াও, বর্তমানে ৪ জন পেশেন্ট এর স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়েছে, অচিরেই তাদের বোনম্যারো প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। উল্লেখ্য, ট্রান্সপ্ল্যান্ট একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, রোগীকে বেশ কয়েকমাস ফলোআপে রাখতে হয়।

তিন বছর আগে ঢামেকে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন সেলিম নামে এক রোগী। পার্শ্ববর্তী চারটি দেশের ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন খরচ ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা জেনে দেশেই ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কম খরচে দেশেই জটিল এই চিকিৎসা করতে পেরে খুশি দীর্ঘদিন পর ফলোআপে আসা এই সেলিম। আরেকজন রোগী জানান, চেন্নাইতে চিকিৎসায় অনেক অর্থ ব্যয় করেও, সুস্থ না হয়ে, ঢামেকে অল্প খরচে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন চিকিৎসা নেন এবং এখন সুস্থ রয়েছেন।

অধ্যাপক এম এ খান, প্রথম সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হওয়া রোগীর সাথে।

সামর্থ্যের অভাবে অনেকেই মনে জোর না পেয়েও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ঢামেক হাসপাতালে। পরে তাদের সুস্থতা ও সফলতার হার দেখে ভুক্তভোগীদের আস্থা বেড়েছে দেশীয় চিকিৎসায়।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায়, এরই মধ্যে আরেকটি সুখবর পাওয়া গেছে। আগামী আগস্ট মাসে শুরু হতে পারে এলোজেনিক বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, যা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট কে আরেকটি ধাপে উন্নতি করবে।

‘একটি উন্নয়নশীল দেশে এটি বিরল ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এমএ খান।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে ২৪ থেকে ২৫ হাজার মানুষের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রয়োজন। ঢামেক কতৃপক্ষ, প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদককে জানায়, চিকিৎসাটি মোটামুটিভাবে ভালোই চলছে। এই রোগের চিকিৎসা করতে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী মারা যায়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের সফলতা শতভাগ।
এছাড়াও, সরকার এর পক্ষ থেকে ভর্তুকি হিসেবে, ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর স্বল্প খরচের পাশাপাশি রোগীদের বিভিন্ন ঔষুধপত্র দেয়া হচ্ছে।

বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় ৬ থেকে ১০ গুণ আর দেশে সফলতার হার শতভাগ হওয়ায় চিকিৎসা নিতে স্বস্তি বোধ করছেন ভুক্তভোগীরা।

-নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ দেলোয়ার হোসাইন,
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ডেস্ক

ওয়েব টিম:
Related Post