X

দ্বিতীয়বার ভাবার সময় হয়ত এসে গেছে

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৫ আগস্ট, ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. নূর ইসরাত
আইসিইউ মেডিকেল অফিসার,
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারী হাসপাতাল।

নিচের এ ছবিগুলো মে, ২০২০ এর। আমরা একবার আমার প্রথম পোস্টিং প্লেস পঞ্চগড় থেকে বাসায় এসেছি অনেক কাহিনী করে অনেক মাস পর। লকডাউন থাকায় কয়েকজন কলিগ মিলে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ১১ ঘন্টা জার্নি করে। ছোট ছোট বাচ্চা দুইটা বমি করতে করতে শেষ। তবে প্রিয় বাসায় প্রিয় মানুষের কাছে আসার পর সব ক্লান্তি, কষ্ট যেন শেষ।

বারান্দায় আমার ছেলেকে দেখে কোয়ার্টারের তার খেলার বন্ধুরা খুব খুশি। আরে, আব্দুল্লাহ এসেছে এতদিন পর। মজা করে খেলা যাবে বিকেলে।

কি করবে? এই কোমলমতি শিশু কি আর করোনার থাবার ভয়াবহতা বুঝবে?

তবে মা, বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতিদিন পিপিই (জীবাণুরোধী সুরক্ষা পোশাক) পরে হাসপাতাল যাওয়া দেখে এবং সবার মুখে করোনার কথা শুনে আমার ছেলে মেয়ে এতটুকু বুঝতে পেরেছিল এটা একটা খারাপ জিনিস। কি করলে এটা হতে পারে, কি করলে বাঁচা যায় তাও জানা তাদের। তাই তো বন্ধুর ডাকে সাড়া না দিয়ে বারান্দা থেকেই খেলার প্ল্যান করছে। তারা জানত না, কবে এ প্ল্যান বাস্তবায়ন হবে।

এরপর আস্তে আস্তে সব খুলে দেওয়া হল। হাসপাতালের রোস্টার ডিউটি বাদ হল। সরকারই বা কি করবে? আমরা তো এত ধনী দেশ না। হয়ত প্রয়োজনের তাগিদে করা হয়েছে সব। আর কি সম্ভব? ৪ মাস তো রাখল।

আবার সবাই যেন অস্থির হয়ে গেছে। বাসগুলো এখন ২ সিট পূর্ণ। হাতির ঝিলের বিকেল যেন তার আগের মানুষে পুরোনো রূপ ফিরে পেয়েছে। রেস্টুরেন্ট গুলো যেন আগের হারানো হেংআউট করা কাস্টমার পেল এত মাস পর। জমে থাকা বিয়ের প্রোগ্রাম, বৌভাত, সব রকমের শাওয়ার প্রোগ্রাম, জন্মদিনগুলো যেন এ বছরেই করতে হবে।
অভিমানী ঘরে বন্দী বউয়ের রাগ না ভাঙালে কি হয় নাকি? চলনা সবাই মিলে ঘুরতে যাই। বেশি দূর না। এই তো দিয়াবাড়ি।

এদিকে শিক্ষাপাগল জাতি শিক্ষিত হওয়ার জন্য অস্থির। কবে খুলবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়?
কেউ কেউ মানববন্ধন করছে। সবার মধ্যে একটা ভাব এসেছে, করোনা বুঝি গেল।

তাই আমার আব্দুল্লাহও এখন নিচে যায় কয়েকদিন যাবৎ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মাস্ক পরে। তার প্ল্যান বাস্তবায়ন হয়ত হওয়া শুরু হচ্ছিল।

তবে কয়েকদিন যাবৎ একটা জিনিস লক্ষ্য করছি। নিজের আত্নীয়, পরিচিত সবার করোনার ব্যাপারে ফোন, ম্যাসেঞ্জার, মেসেজ, ফেসবুক বরাদ্দে। করোনা কি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে? নিজের হাসপাতাল সহ সব হাসপাতাল গুলোতে সিট পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে আবার। কত পরিচিত মানুষ ফোন দেয়,

“তোমার হাসপাতালে আইসিইউ সিট আছে? একটা সিট ম্যানেজ করতে পারবা?”

কাউকে যে একদিনও দিতে পারছিনা। সব ফিলআপ। কোভিড কোন নির্দিষ্ট সময় কালের রোগ না। এটার ছড়ানোর ধরন থেকে বুঝা যায় আমাদের মত অসচেতন দেশ থেকে এ রোগ সমূলে উৎপাটন করতে খবর হবে।

সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে হয়ত দ্বিতীয়বার সেই আগের মত ভাবার সুযোগ হবে না। কিন্তু জীবনটা তো নিজের। মা, বাবা ও পরিবারের মানুষ গুলো তো নিজের। তাদের ভালটাও নিজের, খারাপ হলেও নিজের।

আমার ছেলে-মেয়ের নিচে যাওয়া নিয়ে আমরা দ্বিতীয়বার ভাবছি। তারা এখন নিচে গেলে দুই ভাই বোন একা খেলে। জ্বি, নিজের স্বার্থেই আমরা একটু অসামাজিক হয়ে গেছি কদিনের জন্য।

আসুন না সবাই সেই মার্চ-এপ্রিলের মত দ্বিতীয়বার ভাবি। সিরিয়াস হই সবগুলো স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে। যতটা পারা যায় দূরত্ব বজায় রাখি পাশের জন থেকে।

মনে রাখবেন, কোভিড যায়নি। আর যদি যায়, নাক মুখ দিয়ে ফুসফুসেই যাবে।

Mosrat Moontaha Shamsi:
Related Post