X

দুর্লভ একটি রক্তের গ্রুপ এইচ/এইচ বা বোম্বাই রক্ত

এইচ/এইচ রক্তের গ্রুপ, ওহ (O) বা বোম্বাই রক্তের গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। এটি রক্তের বিরলতম একটি প্রকারভেদ। এই রক্তের ফিনোটাইপটি প্রথমে বোম্বেতে (ভারত) আবিষ্কৃত হয়েছিলো ১৯৫২ সালে ডা:ওয়াই এম ভেন্ডের দ্বারা। এই গ্রুপ বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়া(ভারত,বাংলাদেশ,পাকিস্তান) এবং মধ্য প্রাচ্যের অংশ যেমন ইরানের মধ্যে পাওয়া যায়।
অবাক করা বিষয় বম্বে ব্লাড গ্রুপ- ফরোয়ার্ড গ্রুপিংয়ে হুবহু ‘O’ ব্লাড গ্রুপ।শুধুমাত্র রিভার্স গ্রুপিং করেই আমরা এই ব্লাড গ্রুপ কনফার্ম করতে পারি।
যদিও খুব রেয়ার গ্রুপ,তবুও ভুল বশত যদি ‘O’ গ্রুপ মনে করে বম্বে গ্রুপের রক্ত রোগীর শরীরে ট্রান্সফিউশন করা হয়, ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

RBC এর মেমব্রেনে কিছু কার্বহাইড্রেড থাকে। H জিন এর প্রোডাক্ট ফুকুসাইল ট্রান্সফিরেজ এনজাইম।
এই এনজাইম উক্ত কার্বোহাইড্রেডকে H সাবস্টেন্সে পরিনত করে।

এখন যে ব্যক্তির A জিন আছে তার শরীরে A জিন থেকে প্রোডাক্ট হিসেবে এন-এসিটাইল গ্যালাক্টোসামিনাইল ট্রান্সফিরেজ এনজাইম তৈরি হবে।
এই এনজাইম পূর্বে উল্লেখিত H সাবস্টেন্স কে A এন্টিজেনে পরিনত করবে। ফলে তার ব্লাড গ্রুপ হবে A.
তার RBC তে A এবং H এন্টিজেন থাকবে। প্লাজমায় থাকবে Anti- B (ল্যান্ডস্ট্যাইনারের সূত্র)।

আর যার B জিন আছে তার শরীরে B জিনের প্রোডাক্ট
গ্যালাক্টোসাইল ট্রান্সফিরেজ এনজাইম উক্ত H সাবস্টেন্সকে B এন্টিজেনে রূপান্তরিত করবে। ফলে তার ব্লাড গ্রুপ হবে B। তার RBC তে B এবং H এন্টিজেন থাকবে। প্লাজমায় থাকবে Anti- A (ল্যান্ডস্ট্যাইনারের সূত্র)।

এই ভাবে যার A এবং B দুই প্রকার জিনই আছে সেই ব্যক্তির ব্লাড গ্রুপ হবে AB।
তার RBC তে A, B এবং H এন্টিজেন থাকবে। প্লাজমায় কোন এন্টিবডি থাকবে না (ল্যান্ডস্ট্যাইনারের সূত্র)।

আর যার A বা B কোন জিনই নাই সে হবে O ব্লাড গ্রুপের। তার RBC তে শুধু H এন্টিজেন থাকবে। প্লাজমায় থাকবে Anti-A এবং Anti- B (ল্যান্ডস্ট্যাইনারের সূত্র)।
এটাই বম্বে গ্রুপের মূল ভিত্তি।

যে ব্যক্তির ওই যে শুরুর H জিন নাই তার শরীরে RBC এর কার্বহাইড্রেড H সাবস্টেন্স / এন্টিজেনে রূপান্তরিত হয় না। মানে তার শরীরে H সাবস্টেন্স/ এন্টিজেন নাই।
এই মানুষের A বা B জিন বা উভয় জিন থাকলেও A বা B এন্টিজেন তৈরি হতে পারে না। ফলে তার গ্রুপ O এর মতো হয়।
কিন্তু যেহেতু তার H এন্টিজেনও নাই তাই তার প্লাজমায় Anti-A, Anti-B এবং Anti-H থাকবে।
O গ্রুপ মনে করে বম্বে ব্লাড রোগীকে দিলে ডোনারের Anti-H রিসিপিয়েন্টের H এন্টিজেনের সাথে রিএক্ট করে ‘হেমোলাইসিস’ ও অন্য ট্রান্সফিউশন রিয়েকশন ঘটাবে।
বম্বে ব্লাড গ্রুপধারী কাউকে O গ্রুপ ব্লাড দিলেও বিপদ হবে।
বম্বে গ্রুপ শুধু মাত্র ইন্ডিয়ার বম্বের কয়েকটা পরিবারেই দেখা গেছে। বাংলাদেশেও এটা পাওয়া গেছিলো একটা পরিবারে। সেই পরিবারকে বম্বেতে শিফট করা হয়েছিলো সেই সময়।

মুলত এইচ অ্যান্টিজেনের ঘাটতি “বোম্বাই ফেনোটাইপ” নামে পরিচিত (এইচ / এইচ, ওহ হিসাবেও পরিচিত) এবং এটি ভারতের 10,000 টির মধ্যে 1 এবং ইউরোপের এক মিলিয়ন লোকের মধ্যে 1 এ পাওয়া যায়। এইচ এর ঘাটতি হওয়ার সাথে কোনও খারাপের প্রভাব নেই, তবে যদি কখনও রক্ত ​​সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় তবে এই রক্তের ধরণের লোকেরা কেবল সেসব রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে যারা ‘এইচ’ এর ঘাটতিতে রয়েছে।
কারণ এইচ অ্যান্টিজেন হলো গ্রুপ A B O রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনগুলির পূর্বসুরী, যদি এটি উৎপাদিত না হয় তবে A B O রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনগুলিও উৎপাদিত হয় না।

ডাঃ মো হুমায়ুন কবির নাহিদ
এস.এস.এম সি

প্ল্যাটফর্ম ফিচার:
ওয়াসিফ হোসেন
ন.প্রা.মে.ক

Platform:
Related Post