X

দুদকের জেনেরিক নেইম ও বাঙ্গালি সমাচার

ইংরেজ শাসনামল। দিল্লিতে সাপের তীব্র উৎপাত। ইংরেজ সরকার ঘোষণা দিল সাপ মেরে সাপের মাথা জমা দিলে পুরষ্কার হিসেবে টাকা দেওয়া হবে। শুরু হল সাপ নিধন। কিছু দিনের মধ্যে ফলাফল এল চমৎকার। সাপের উৎপাত কমে গেল।
কিন্তু উপমহাদেশের মানুষ ভালো কিছু কোন দিনই গ্রহন করতে পারেনি। মানুষ ঘরে ঘরে সাপ পালন করা শুরু করল টাকার লোভে। সাপ পালন রীতিমত একটা শিল্পে পরিনত হল।ইংরেজ সরকার পদ্ধতিটাকে যতটা স্মার্ট ভেবেছিল ঠিক সেভাবে কাজ করল না। তারা সাপ নিধন স্কিম বন্ধ করে দিল। জনগণ দেখল যে এখন আর সাপ লালন পালন করে লাভ নেই। তারা তাদের সব সাপ ছেড়ে দিল।ফলাফল সাপের পরিমান আগের থেকে বেড়ে গেল!
সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে সমস্যা আরো প্রকট করে ফেলাকে ‘কোবরা ইফেক্ট’ বলে।
একটা অখ্যাত কোম্পানির সেফট্রায়ক্সন ইঞ্জেকশান নেওয়া একটা রুগী এসেছিল। ১০ টা ইঞ্জেকশান নিয়েও তার কাজ হয়নি। ভালো একটা কম্পানির ফ্লুক্লক্সাসিলিন ক্যাসুল ৫ দিন খাওয়ার পরেই দেখি কাজ হয়ে গেছে।
ইন্টার্নির সময় এক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আমাকে বলেছিলেন তারা ডাক্তার থেকে কোয়াক এবং একটু গ্রামের ফার্মেসিম্যানদের ভিজিট করলে বেশি লাভবান হন, কারণ তারা সুযোগ খুজে বেশি; সুযোগ নেয় বেশি।
প্রেস্ক্রিপশানে জেনেরিক নেম লেখার জন্য সুপারিশ করা হল। ফলাফল হবে কোবরা ইফেক্টের মত। ওষুধ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে নিম্নস্তরের কোম্পানিগুলো সুযোগ নিবে। তারা মানি মার্কেটিং শুরু করবে। ফার্মাসি আর কোয়াকদের জন্য মজাদার স্কিম ছাড়বে। আরও মানহীন ওষুধ কোম্পানি বাজারে চলে আসবে। ফলাফল ভালো-মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলো মার খাবে।
বেশি ভোগান্তিতে পড়বে সাধারন মানুষ। দেশের ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ এখনো ফার্মেসি আর কোয়াক নির্ভর – বাচ্চা নষ্ট করা থেকে শুরু করে ছোট খাট সার্জারি, ডায়াবেটিস, জ্বর, ঠাণ্ডা কাশি সব কিছুতেই।
প্রতিটা প্রফেশানেই ভালো একটা অংশ থাকে আর কালো একটা অংশ থাকে। ডাক্তার সমাজের কালো অংশের প্রতিনিধিত্বকারী অংশ খুব বেশি বড় না। তাদেরকে আইন করে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে জেনেরিক নেমে ওষুধ লিখার সুপারিশ এসেছে, কিন্তু সুপারিশদাতারা ভরসা করছেন কার উপরে? ফার্মেসিম্যান আর কোয়াকদের উপরে?
যে দেশে মুদি দোকানে এন্টিবায়োটিক বিক্রি হয়, এত মানহীন ওষুধ কোম্পানির সেখানে কাকে কাকে, কয়জনকে আইন দিয়ে কন্ট্রোল করবেন?
ফলাফল কোবরা ইফেক্টই হবে। পুরা সিস্টেমটাই বাজে ভাবে ব্যাকফায়ার করবে।
লিখেছেন:
ডা. মোঃ কামরুজ্জামান 
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ 
সেশান – ২০০৭-২০০৮
ফয়সাল আবদুল্লাহ:
Related Post