X

স্বেচ্ছায় রক্তদান সম্পর্কে কিছু কথা

১৪ই জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।
আজকের এই দিনে বিশেষ ধন্যবাদ সেই সকল মহৎপ্রাণ রক্তদাতাদের যাদের দান করা রক্তের প্রবাহে বেঁচে যায় কিছু মুমূর্ষুপ্রাণ, সুন্দর ধরণীতে বেঁচে থাকার অবলম্বন পায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিছু অসহায় মানুষ।
স্বেচ্ছায় রক্তদান সম্পর্কে কিছু কথা:
*রক্ত কেন দিবো?
-প্রতি ১২০ দিন মানে চার মাস পরপর রক্ত যেসব কণিকা দ্বারা তৈরি সেসব কণিকা (RBC) এর মৃত্যু হয়।তাই ৪ মাস পরপর নতুন রক্ত তৈরি হয়।প্রতি চার মাস পর পর রক্ত আপনা-আপনি নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট না করে সেই রক্ত এর মাঝে মাত্র ৩৮০ মিলিলিটার রক্ত দান করাই যায়।
*রক্তদানের উপকারিতা কি?
-রক্ত দান করলে রক্ত যেসব জায়গা থেকে উৎপন্ন হয়(bone marrow,spleen) সেসব organ সক্রিয়(active) থাকে, তাই সেসব oragan সংশ্লিষ্ট জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
-রক্ত দানের পরে,সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবাহিত হবার আগে screening test করা হয়,যার মাধ্যমে বিনামূল্যে কতিপয় জীবনঘাতী ভাইরাস(HBV,HCV,SYPHILIS,MALARIA,HIV) এর পরীক্ষাও হয়ে যায় যে তাদের উপস্থিতি রক্তে রয়েছে কি না…
*রক্তদান করলে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় কি না?
-রক্ত দিলে কোনো ধরণের শারীরিক অসুবিধা হয় না,কারণ যেই রক্তটুকু ৪ মাস পর নষ্ট হবার কথা ছিল,তার অল্প অংশ(৩৮০মিলিলিলিটার) বের করে নেওয়া হচ্ছে।তবে হ্যা,যেহেতু যেই প্রক্রিয়া naturally হবার কথা ছিল কিন্তু আমরা artificially & quickly (4-5minutes) রক্ত দানের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করি,তাই সাময়িক hypovolumia হয়ে মাথা ঘুরতে পারে।তবে সেটি অল্প বিশ্রাম আর পানি খেলেই ১০-১৫ মিনিটে ঠিক হয়ে যায়।
*রক্ত দানের মানবিক দিক কি?
-চিন্তা করুন,আপনার দান করা রক্ত(যেটা কিনা এমনিতেই normal physiological প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যেত) একজন মুমূর্ষু মানুষের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্তের কারণে তার জীবন প্রদীপ জ্বলছে….হয়ত আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্তই তার জীবনের বেঁচে থাকার পারিধি বৃদ্ধি করে দিচ্ছে….সেইসব মুমূর্ষু মানুষগুলো যদি আপনার দেওয়া রক্তের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠে,তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রক্তদাতার জন্য তার মনের গহীন থেকে দোয়া-আশীর্বাদ করে যায়,হয়ত সেটা তার নিজেরও অজান্তে।আপনার দেওয়া রক্ত,অন্যের শরীরে প্রবাহিত হয়ে তাকে সুস্থ স্বাভাবিক রখছে,এর চেয়ে ভালো মানবিক কাজ আর কি হতে পারে?
*কারা রক্ত দিতে পারবে না?
-বয়স : <১৮ বছর
-ওজন : <৪৫ কেজি
-রক্তশূন্যতা এর উপস্থিতি
-রক্তদানের পুর্ববর্তী ৬ মাসে major কোন operation, ম্যলেরিয়া,জন্ডিস,টাইফয়েড হয়ে থাকলে।
-প্রেশার,ডায়াবেটিস থাকলে।
-মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালে,প্রেগনেন্ট এবং ব্রেস্ট ফিডিং চলাকালীন সময়ে।
-কোন ভেক্সিন চলাকালীন সময়ে।
*সন্ধানী তে কেন রক্ত দিবেন?
-আপনার দেওয়া রক্ত সন্ধানী তে মজুদ হসেবে গণ্য হবে।সন্ধানী তে রক্ত দিলে আপনাকে একটি ডোনার কার্ড দেওয়া হবে,যেটি দিয়ে আপনি বাংলাদেশের যেসব মেডিকেল কলেজে সন্ধানী এর ইউনিট রয়েছে সেসব ইউনিট থকে ডোনার কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে আপনার চাহিদা মত গ্রুপের(আপনার রক্তের গ্রুপ যেটিই হোক না কেন) রক্ত উত্তোলন করতে পারবেন।
আপনি আমি সুস্থ আছি,হয়ত আমাদের মতই রক্ত-মাংসে গড়া কোনো মানুষ হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, হয়ত জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো মানুষটির জরুরী রক্ত দরকার,হয়ত তার আত্মীয়-স্বজনেরা রক্তের সন্ধান করে যাচ্ছে হন্যে হয়ে।”মানুষ মানুষের জন্য”,আমরা রক্ত দিয়ে সেসব মুমূর্ষু মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারি।
রক্ত দিন জীবন বাঁচান
প্রচারে: সন্ধানী
কার্টেসী : মাসুউদুর রহমান সৌরভ,সাধারন সম্পাদক, সন্ধানী রংপুর মেডিকেল কলেজ ইউনিট।
ফয়সাল আবদুল্লাহ:
Related Post