X

কোভিড-১৯ এবং ইদুল আযহা

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার

প্রফেসর ডা. রোবেদ আমিন
মেডিসিন বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

সুপ্রিয় পরিবার ও বন্ধুগণ,
এই বছরের ইদুল আযহা চলে আসলো, যদিও আমরা এখনো ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ কে সাথে নিয়েই জীবন কাটাচ্ছি। এটাই এখন আমাদের “নিউ নরমাল”। ধর্মীয় নিয়ম পালনের সাথে সাথে ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্যও আমাদের কিছু বৈজ্ঞানিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।

নিয়ম গুলো তুলে ধরা হলো:
১) যদি সম্ভব হয় গরুর হাটে যাওয়া বাদ দিতে হবে। যদি একান্ত যেতেই হয়, অবশ্যই আশে পাশের‌ মানুষের সাথে ২ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

২) সবসময় মাস্ক (সার্জিকাল/কাপড়ের) ব্যবহার করুন এবং আশেপাশের মানুষদের মাস্ক পরতে বলুন। আইন অনুযায়ী ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করতে সবাই এখন বাধ্য। সুতরাং আপনার অধিকার আছে অন্যকে সঠিক ভাবে মাস্ক পরতে‌ বলার।

৩) গ্লাভস ব্যবহার না করে বারবার হ্যান্ড ওয়াস ব্যবহার করুন। হাটে গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে রাখুন।

৪) হাটে দীর্ঘ সময় ব্যয় করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব কুরবানীর পশু কিনে বাসায় চলে আসুন। বাহিরে থাকা অবস্থায় মাস্কের বাহির দিক স্পর্শ করবেন‌ না।

৫) বাসায় ফিরে জুতা বাহিরে রাখুন। প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। এরপর পেছন থেকে ধরে মাস্ক খুলে‌ ফেলুন। কাপড় ধুতে দিন এবং গোসল‌ করুন।

৬) পশুর মাংসে ভাইরাস উপস্থিত থাকার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং কাঁচা মাংস নাড়াচাড়া বা রান্না করা মাংস খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই।

৭) সবচেয়ে বড় ব্যপার হচ্ছে পশু কোরবানি ও এর পরবর্তী মাংস প্রসেসিং এর ব্যপারটা এবং এতে নিয়োজিত কর্মীরা। এ ক্ষেত্রে যত সম্ভব কম মানুষ নিয়ে কাজটি করতে হবে। তাদের সকলকে মাস্ক পরতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
তারা গ্লাভস ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু গ্লাভস হাতে থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে মুখ বা এর আশেপাশে স্পর্শ করতে পারবে না। তাদের আশেপাশে বারবার ব্যবহারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে পারলে‌ ভালো‌ হয়।
মাংস কাটার যন্ত্রপাতিতে ভাইরাস লম্বা সময় থাকতে পারে। কর্মীরা তাদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেই ভালো। এবং তা ব্যবহারের‌ পর সাবান-পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৮) মাংস সাধারণত পলিথিনে বিতরন করা হয় এবং পলিথিনে ভাইরাস টিকে থাকতে পারে। বিতরনের সময় যত কম মানুষের কাছে যাওয়া যায় ও কম সময় থাকা যায়, তত ভালো। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাংস ধরার আগে ও‌ পরে হাত ধুতে হবে। পলিথিনের‌ উপর জীবাণুনাশক ছিঁটাতে হবে এবং পলিথিনের মুখ ভালো ভাবে বন্ধ করতে হবে।

৯) বাসায় এনে মাংস প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এবং তারপর নিরাপদে ফ্রিজে সংরক্ষণ ও রান্না করা যাবে। পলিথিন বাইরে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

১০) খাবার মাংসে/ফ্রিজের মাংসে ভাইরাস এর উপস্থিতি নিয়ে বেশি চিন্তার দরকার নেই, কারণ এটা প্রমাণিত নয় এবং সম্ভাবনা খুব কম। প্যাকেট করার‌ সময় সতর্ক থাকা এবং নিয়ম মেনে প্যাকেট জীবাণুমুক্ত করা বেশি‌ প্রয়োজন।

১১) ইদের জামায়াতে ‌দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক ব্যবহার করুন। কোলাকুলি/ হাত মিলানো পরিহার করুন। নামায শেষে দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে যান এবং নতুন নিয়মে কোরবানি করুন।

১২) এবং হ্যাঁ, আল্লাহ এর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ক্ষমা, ক্ষমা এবং ক্ষমা। একমাত্র আল্লাহ ই জীবন দান করেন এবং রক্ষা করার মালিকও তিনি।

প্রয়োজনীয় সতর্কতা (দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া) অবলম্বন করুন; আল্লাহ ই আমাদেরকে রক্ষা করবেন।
সবাইকে ইদ‌ মোবারক।

Sarif Sahriar:
Related Post