X

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার-রোগীদের অনন্য ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন

২ জানুয়ারি ২০২০

রাত তখন প্রায় বারোটা পাঁচ কি সাত বাজে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডক্টর্স রুমে বসে ছিলেন ডা. মারুফ হাসান এবং ডা. ওয়াসেক। কিছুক্ষণ আগেই তারা কেবিন ব্লক থেকে নেমেছেন।

হঠাৎ কোনো এক রোগীর স্বজন এসে তাদের বললেন যেন তার সাথে একটু ওয়ার্ডে যান। রোগীর স্বজনকে তারা জানালেন, ওয়ার্ডে তাদের শিক্ষানবিস চিকিৎসক আছেন। রোগীকে যেন প্রথমে উনাকে দেখানো হয়। তারপর প্রয়োজন মনে করলে সেই চিকিৎসকই তাদেরকে জানাবেন। কিন্তু রোগীর স্বজন একরকম অনুরোধের সুরেই তাদেরকে ডাকলেন।

তখন নতুন বছর কেবল মাত্র শুরু হয়েছে। চারিদিকে আতশবাজি আর হৈ-হুল্লোড়ের চাপা শব্দ জানান দিচ্ছিল ২০২০ শুরু হবার। মনে একটু দ্বিধা হওয়া স্বত্বেও তারা যাওয়ার জন্য সম্মত হলেন।

তাদের মধ্যে প্রথমে ডা. ওয়াসেক ওয়ার্ডে গেলেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি ডা. মারুফকে ফোন করে দ্রুত ওয়ার্ডে আসতে বললেন। ডা. মারুফ প্রথমে ভাবলেন হয়তো খারাপ কিছু ঘটেছে। তিনি দ্রুত ওয়ার্ডে গেলেন,
ওয়ার্কিং স্টেশনের সামনে জটলা দেখে ভাবলেন হয়তো কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সামনে এগুতেই তার ভুল ভাঙলো।

হাজারো সমস্যার মাঝে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের একটি অংশ, নতুন বছরের শুরুতে কর্তব্যরত চিকিৎসকবৃন্দ, নার্স, ওয়ার্ড বয় সবার কথা চিন্তা করে দুটো কেক এনেছেন।

উদ্দেশ্য ছিলো হাসপাতালে অবস্থান করলেও সবার সাথে নতুন বছরের একটি শুভ সূচনা হোক। মুহুর্তেই চিকিৎসকদের মনের ভেতর একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো। সাম্প্রতিক কাপাসিয়া, ঈশ্বরদীর ঘটনায় রোগীর সাথে আসা লোকদের ডাক্তারদের প্রতি করা বিরুপ আচরণের পর এই ঘটনায় তারা রীতিমতো মুগ্ধ হলেন। তখন কর্তব্যরত নার্সরাও সকালে থেকে দেয়া হবে এমন ভায়েলগুলো দিয়ে লিখে ফেললেন, “Happy New Year 2020″।

কেককাটা পর্ব শুরু হওয়ার আগে বাকি রোগীদের কথা চিন্তা করে, সবাইকে অনুরোধ করা হলো উদযাপনের সময় যেন খুব বেশী শব্দ না করা হয়। অতঃপর প্রায় নিঃশব্দেই, জুনিয়র ডাক্তার, নার্স এবং আয়োজনকারী রোগী ও স্বজনদের নিয়ে কেক কাটার মাধ্যমে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনেই তাদের একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে।

ডা. মারুফ এই ঘটনায় উৎফুল্ল হয়ে জানান, তাদের হাসপাতালে এই রোগীদের মতই সবাই আসলে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু সংখ্যালঘু একটি অংশের কারণে ডাক্তার ও রোগীদের সম্পর্কের মাঝে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। তিনি আশাবাদী ভিশন ২০২০ হবে সবার জন্য একটা অন্যরকম ল্যান্ডমার্ক; যাতে রোগীদেরকে নির্দ্বিধায় ডাক্তাররা বলতে পারেন, “We are thankful to you, for choosing us to serve the humanity”

তথ্যসূত্রঃ ডা. মারুফ হাসান অভি
স্টাফ রিপোর্টার /নাজমুন নাহার মীম

Platform:
Related Post