X

কি খাবো এবং কখন খাবো..

কি খাবো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কখন খাবো সেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ…..

আমি খুবই স্বাস্থ সচেতন, আমি কবে খাসির মাংস খেয়েছি বলতে পারবো না। সপ্তাহে এক বা দুইদিন মুরগী খাই আর মাছ ও সবজি প্রতিদিন খাই, কোন মিষ্টি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাই না। 2 মাস আগে খেয়াল করলাম আমার খুব ক্ষুধা লাগে। রাতে 9 টার সময় ভাত খাই, এরপর 11টার পরেই গিয়ে ফ্রিজ খুলে খাবার খুঁজি। সকালে হাসপাতালে এসে রাউন্ডের পরেই ক্ষুধা লাগে। আর কিছু দিন পর ক্ষুধা লাগার সাথে শুরু হল পেট জ্বলা। এবার আর আমার বুঝতে বাকি থাকল না আমার কি হয়েছে। আমার পেটে ঘা মানে ডিউডেনাল আলসার হয়েছে। চিকিৎসা শুরু করলাম, দ্রুত আরোগ্য হলাম।

এবার কারণ খোঁজার পালা, কেন আলসার হল। খুব সহজেই খুঁজে পেলাম। 2001 সালে আমি মেডিকেল এ ভর্তি হয়। এর আগে জীবন অনেক সুন্দর ও সহজ ছিল। সকালে ম্যাচের খালা ভাত, ডাল আর ভর্তা করে দিতেন, সকাল সাড়ে 7 টার মধ্যে খেয়ে কলেজ যেতাম। মেডিকেলে ক্লাস শুরু হয় সকাল 7 টা থেকে, ঘুমাতে ঘুমাতে রাত 1 টা, কোনদিন 2টা থেকে 3 টা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনরকম রেডি হয়ে দৌড় কলেজে। নাস্তা করা হয় না। নাস্তা একেবারে 11 টায়। এটাই অভ্যাস হয়ে গেল। গত 16 বছর এভাবেই চলল। সকালের নাস্তা দেরি করে খাবার কারণেই আমার আলসার হয়েছে।

আমাদের বাপ দাদারা কি করতেন, কি খেতেন, কিভাবে চলতেন, সেটা আমরা মেনে চললে আমাদের অনেক সমস্যাই কমে যাবে। উনারা সকালে দাঁত মেজেই কিছু খেতেন। খাবার সাথে সাথে কখনই বিছানায় শুয়ে পড়তেন না। আমাদের সকালের নাস্তাটা যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত ভালো। নাস্তা রেডি না হলে ব্রাশ করে বিস্কুট বা মুড়ি খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত সকাল ৮ টার মধ্যে নাস্তা করতে হবে।আর সকালে অবশ্যই পেট ভরে খেতে হবে। এর কারণ আমরা আমাদের দিনের প্রধান কাজগুলো সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে করে থাকি। তাই কঠিন কাজের জন্য বেশি খাবার খেতে হবে। সকাল ও দুপুরের মাজখানে হালকা খাবার খেতে হবে। দুপুরের খাবার 1 টা থেকে দেড়টার মধ্যে খেতে হবে। বিকেলে হালকাকিছু খেতে হবে, যেমন কোন ফল খাওয়া যেতে পারে। আর রাতের খাবার সেটা রাত না, সন্ধ্যা 7টার মধ্যে খেতে হবে। কারণ হল ঘুমানোর আগেই যেন সেটা হজম হয়। শেষে ঘুমানোর আগে একটু ফল বা বিস্কুট বা অন্য হালকা কিছু খেতে হবে। ভরা পেট নিয়ে ঘুমানো যাবে না।
যেগুলো করা যাবে না
১. খালি পেটে চা খাবেন না।
২. পান সুপারি বেশি খাবেন না।
৩. কোন ধূমপান, জর্দা, গুল খাবেন না।
৪. চর্বি জাতীয় জিনিস যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, চিংড়ী মাছ, দুধের সর খাবেন না।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্যাসের ঔষধ খাবেন না।
৬. খাবার পর পরই বিছানায় শোবেন না।
যা করবেন
১. প্রতিদিন প্রচুর পানি খাবেন কমপক্ষে দেড় থেকে 2 লিটার।
২. প্রচুর শাক সবজি ও ফল খাবেন (দেশি ফরমালিন মুক্ত ফল)
৩. প্রতি দিন ৩০ মিনিট হাঁটবেন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন (মনে রাখবেন মোটা হলেন তো গেলেন, অতিরিক্ত ওজন সকল রোগের উৎস।)
৫. পরিমিত খাবার খান (কম খাবার জন্য কেউ বড় অসুখে ভোগে না, কিন্তু বেশি খাবার জন্য প্রতি মুহুর্তে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে)
শেষ কথা সময়মত খাবার খান, পরিমিত খাবার খান, আর প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। কোন আলসার, কোন গ্যাস, হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হাটের অসুখ আপনাকে ছুঁতে পারবে না।

….
ডাঃ রতিন মন্ডল, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন ।

drferdous:
Related Post