X

ওষুধ নয়, প্রতিরোধমূলক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাই কোভিড-১৯ দমনের প্রধান উপায়

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ জুন ২০২০, শনিবার:

প্রমাণিত ওষুধ বা ভ্যাক্সিনের অনুপস্থিতিতে, নন-ফার্মাসিউটিক্যাল পদ্ধতিই কোভিড-১৯ দমনের প্রধান উপায়-

প্রতিরোধমূলক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলি একটু খুলে বলা দরকার। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক কোয়ারেন্টাইন এলাকার জনগণকে ব্যাপক হারে  মাস্ক ব্যবহার, বার বার হাত ধোয়া ও হাঁচি কাশির শিষ্টাচার চর্চার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
তাদেরকে নিজেদের স্বাস্থ্য [উপসর্গ] পর্যবেক্ষণের ব্যপারেও উৎসাহিত করতে হবে এবং সে বিষয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যখন পর্যবেক্ষণে আসবেন তাদের জানাতে হবে।

কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন:
কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন এই রোগ দমনের প্রধান হাতিয়ার। এর মাধ্যমে সমাজে এই রোগের সংক্রমণ বহুলাংশে সীমিত করা যায়।

কোয়ারেন্টাইন:
কোয়ারেন্টাইন হল সেসকল সুস্থ ব্যক্তি  যারা কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসেছে কিন্তু এখনও কোন উপসর্গ প্রকাশিত হয়নি তাদের অন্যদের আলাদা করে রাখা কারন তাদের মধ্য সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিশ্চিত বা সন্দেহজনক রোগীর সংস্পর্শে আসা সকলের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন/ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন  এর ব্যবস্থা করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে দেয়া আছে। যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হবে তাদের সকলের আগে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরুপন করতে হবে। যাদের বয়স ৬০ এর বেশি এবং যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তাদেরকে নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করতে হবে। এটি তাদের প্রাথমিক উপসর্গ গুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে, তাদের পরীক্ষা ও স্থানান্তর সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা গাইডলাইন দেয়া আছে।

আইসোলেশন:
আইসোলেশন হল উপসর্গযুক্ত ব্যক্তি যারা সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কোভিড-১৯ রোগী তাদের আলাদা করে রাখা। একজন রোগীকে আইসোলেশন করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আদর্শমান বিবেচনায় প্রত্যেক রোগীকে নির্দিষ্ট আইসোলেশন কক্ষে বা নেগেটিভ প্রেসার বিশিষ্ট কক্ষে রাখতে হবে যেখানে ঘণ্টায় ১২ বা তার বেশি সংখ্যক বার বাতাসের আসা যাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
তবে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থাপনার অভাবে সকল পজিটিভ  কোভিড-১৯ রোগীকে একটি পৃথক ওয়ার্ডে যেখানে পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহ আছে সেখানে একসাথে রাখা যাবে। একই ভাবে সকল সন্দেহভাজন রোগীকে পৃথক ওয়ার্ডে একসাথে রাখা যাবে। কোন অবস্থাতেই এদেরকে একত্রে রাখা যাবে না। সকল কোভিড হাসপাতাল/ সাধারন হাসপাতালের কোভিড ব্লকে বা  সকল অস্থায়ী হাসপাতালে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত রোগীর জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। পাশাপাশি বেডের মাঝে ন্যূনতম ১ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। এবং সকল রোগীকে ৩ স্তর বিশিষ্ট সার্জিকেল মাস্ক সব সময় পরতে হবে।

সংক্রমণ দমনে সামাজিক দূরত্ব:
সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থা যথাযথ প্রতিপালনের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যদের মাঝে রোগের সংক্রমণ অনেকখানি সীমিত হয় এবং এটা কোভিড-১৯ এর সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নিম্নোক্ত ব্যবস্থাপনা গুলো গ্রহন করা যেতে পারে-

স্কুল, কলেজ, ও অন্যান্য কার্য প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রাখা-
প্রশাসনিক আদেশ জারি করে সংক্রমিত এলাকা ও বাফার জোনের স্কুল, কলেজ, ও অন্যান্য কার্য প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ করে দিতে হবে। একই সাথে জোরালো ভাবে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমের সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে এবং তাদেরকে প্রাথমিক ভাবে ২৮ দিনের জন্য বাসায় থাকার ব্যপারে উৎসাহিত করতে হবে, পরবর্তীতে ঝুঁকি পর্যালোচনা সাপেক্ষে এটা বাড়ানো যেতে পারে। ঝুঁকি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ও সংক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হলে সীমিত আকারে অল্প সময়ের জন্য অফিস ও মার্কেট পুনরায় শুরু করা যেতে পারে।

সকল প্রকার জনসমাবেশ বাতিলকরণ:
সংক্রমিত এলাকা ও বাফার জোনে সকল প্রকার প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত জনসমাবেশ বাতিল করতে হবে,  যতক্ষণ না পর্যন্ত এলাকাটি কোভিড মুক্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয় বা মহামারীর তীব্রতা এমন ভাবে হ্রাস পায় যে দমন পদ্ধতির পরিবর্তে প্রশমন পদ্ধতি গ্রহন করা যেতে পারে।

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান সমূহ এড়িয়ে চলা:
জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত সংক্রমিত এলাকা ও বাফার জোনের জনগণকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান সমূহ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে হবে। একটি পর্যবেক্ষণকারী সারভিলেন্স দলের সাহায্য প্রশাসনকে সংক্রমিত এলাকা ও বাফার জোনের সকলের জন্য ৩ স্তর বিশিষ্ট সার্জিকেল মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সকল গনপরিবহণ বাতিল বা সীমিতকরণ-
ভৌগোলিক কোয়ারেন্টাইন কৃত এলাকায় প্রবেশ ও বহির্গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকায় কোন বাস বা ট্রেন স্টেশন থাকলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও সংক্রমিত এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ী ও ট্যাক্সির চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে সেই এলাকা থেকে জনগনের বহির্গমন প্রতিহত করতে হবে। এই সকল নিয়মের কারনে যেহেতু জনগণ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বে, তাই প্রশাসনকে বিভিন্ন ভাবে এসকল নিয়ম কানুন পালনের সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে।

ভৌগোলিক কোয়ারেন্টাইন এলাকা নির্দিষ্টকরণ-
জরুরী সরবরাহ কাজ ব্যতীত ভৌগোলিক কোয়ারেন্টাইন কৃত এলাকায় সকল প্রকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ চেক পোস্ট বসানো হবে এবং পুলিশ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। যারা সরকারের আদেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বর্তমানে সারা দেশকে বিভিন্ন জোন এ বিভাজন করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণ এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিরোধমূলক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গুলোর সঠিক বাস্তবায়নের উপর এই কাজের সফলতা নির্ভর করবে।

অনুবাদ

ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম

ডা. নাওমি নূর

Firdaus Alam:
Related Post