X

ওমর ফারুকের ডিগ্রি নেই তবুও এমবিবিএস ডাক্তার!

গত ১০ মে ঘটেছে ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। দুই লাখ টাকায় রফাদফা। শুক্রবার রাতে এমনই ঘটনা ঘটেছে মতলবের নারায়ণপুর পল্লীমঙ্গল হাসপাতালে। প্রত্যক্ষদর্শী আল মদিনা ডেকোরেশনের মালিক খোকন প্রধান জানান, তার দোকানের শ্রমিক আলমের স্ত্রী মুক্তি টনসিল চিকিৎসার জন্য পল্লীমঙ্গল হাসপাতালে এলে হাসপাতালের মালিক ওমর ফারুক তাকে অপারেশনের জন্য ভর্তি করেন। শুক্রবার বিকেলেই ঢোকানো হয় অপারেশন থিয়েটারে। ভুয়া এমবিবিএস ওমর ফারুক নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ইনজেকশন পুশ করেন। এতে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীর ফুলে যায় এবং ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর স্বজনদের চাপের মুখে ঢাকা পাঠানো হলে পথেই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, রোগীর ফুসফুসে সমস্যা ছিল। ডাক্তার ছিদ্দিকুর রহমান তার চিকিৎসা করেন। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। এলাকাবাসী জানায়, গাইনি, কার্ডিওলজি, মেডিসিনসহ সব রোগের বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক। ডিগ্রি নেই একটিও, তবু বহু রোগের চিকিৎসক তিনি!একজন ভুয়া ডাক্তার এখন হাসপাতালের মালিক। নিজের হাসপাতালে নিজেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ব্যবস্থাপত্রে নিজের নামের শেষে এমবিবিএস লিখছেন। করছেন আলট্রাসনোগ্রাম এবং অপারেশনও। কোনোটিরই প্রশিক্ষণ নেই তার। রোগী দেখছেন ১০০-২০০ টাকা ভিজিটে। পাঁচ বছর ধরে এভাবে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের পল্লীমঙ্গল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বাড়ি উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকায়। গত জুনে সিভিল সার্জনের কাছে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় সিভিল সার্জন তাকে এমবিবিএস পরিচয়ে চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি এ নির্দেশ উপেক্ষা করে রোগী দেখলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।গত বছরে ঘোড়াধারী গ্রামের লতিফা বেগমকে সিজার করতে গিয়ে তার খাদ্যনালি কেটে ফেলা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা করা হলে এখনও তিনি অসুস্থ। নারায়ণপুর গ্রামের সিরাজ তালুকদারের ছেলের স্ত্রীকে ভুল চিকিৎসা দিলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডিগ্রি না থাকলেও ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস শব্দ ব্যবহার করে রোগী দেখছেন ওমর ফারুক। গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ করে তিনি সহজ-সরল রোগীদের তার হাসপাতালে নিয়ে আসেন।ক্ষিদিরপুর গ্রামের লাকী বেগম তলপেটের ব্যথা নিয়ে কিছুদিন আগে তার কাছে আলট্রাসনোগ্রাম করেন। রিপোর্টে তিনি জরায়ুতে টিউমার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। পরে সন্দেহবশত তিনি চাঁদপুরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে জানেন, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস। ওমর ফারুক দাবি করেন, ২০০৫ সালে কলকাতার অলটারনেটিভ মেডিকেল কাউন্সিল থেকে তিনি ডিগ্রি নিয়েছেন। ডিগ্রি না থাকলেও ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস ব্যবহারের বিষয়ে শেখ ওমর ফারুক বলেন, আগে করতাম এখন করি না। আলট্রাসনোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও আগের কথা।চাঁদপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওমর ফারুক মূলত একজন আয়ুবের্দিক হেকিম। এমবিবিএস বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের সনদ নেই তার।

ওয়েব টিম:

View Comments (2)

Related Post