X

এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্নদের স্বপ্ন যখন ডাক্তার হওয়া | প্রেক্ষাপট | কলাম

তোমার স্বপ্নটাকে যদি সত্যিই বাস্তবে রুপ দিতে চাও,
যদি তুমি তোমার স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে সত্যিকারার্থেই মেল বন্ধন তৈরি করতে চাও তাহলে ভুলেও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখো না!

-আতিকুজ্জামান ফিলিপ

আজ এসএসসির রেজাল্ট দিয়েছে!
তোমরা যারা সাফল্যের সাথে এসএসসি তে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছো তাদের সকলের জন্যই আন্তরিক অভিনন্দন ও অফুরান শুভ কামনা।

সোনালী জিপিএ পেয়ে অনেকেই হয়তো জীবনের সোনালী স্বপ্ন আঁকতে শুরু করেছো।
এটাই স্বাভাবিক, কারন স্বপ্ন আঁকার এটাই প্রথম সোপান।

তবে বলে রাখি,
তোমার স্বপ্নটাকে যদি সত্যিই বাস্তবে রুপ দিতে চাও,
যদি তুমি তোমার স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে সত্যিকারার্থেই মেল বন্ধন তৈরি করতে চাও তাহলে ভুলেও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখো না!
অন্তঃত এদেশে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কশ্মিনকালেও দেখো না!

অক্লান্ত শ্রম অতুলনীয় মেধা আর মূল্যবান সময়ের সদ্ব্যবহার করে চিকিৎসক হওয়ার পর যখন বাস্তব আর তোমার স্বপ্নের মাঝে কোন মিল খুঁজে পাবে না তখন তোমার যে মর্মপীড়া হবে সেটা না পারবে সমাজকে শেয়ার করতে না পারবে নিজে বইতে!

দেখবে তোমার মেধা শ্রম আর জীবনের অতি মূল্যবান যে সময়টার তুমি সদ্ব্যবহার করেছো সেটা আসলে সদ্ব্যবহার হয়নি, সেটা হয়েছে নিছক অপচয়!

তুমি যখন পড়ার টেবিলে মুখ গুজে দিনের পর দিন রাতের পর রাত জীবনের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করবে তখন তোমরাই বন্ধু যারা সাধারন শাখায় পড়াশুনার পাশাপাশি জীবনটাকে উপভোগ করবে একসময় দেখবে তারাই ভালো আছে, রাষ্ট্রও তাদেরকে কদর করছে।

কেন তুমি চিকিৎসক হবে ?
‘কসাই’ ডাক শুনতে!
তুমি হয়তো তোমার বাবামাকেও চিকিৎসকদের ‘কসাই’ বলে ডাকতে শুনেছো!
বাবামা যাকে ঘৃণা করে, বাবামা যে পেশাকে ঘৃণা করে তুমি কেন সেই পেশাতে যেতে চাইবে ?

তোমার জন্য আরো কতো কতো ভালো ভালো পেশা আছে যাদেরকে কেউ ‘কসাই’ বলে ডাকে না!
তোমার বাবামাও যদেরকে সমীহ করে চলে!

তুমি বরং সেই সব সোনালী স্বপ্ন দেখো!

তুমি বরং আমলা হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং বড় সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং পুলিশের বড় কর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং ট্যাক্সের বড় কর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং ব্যাঙ্কের বড় কর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং সেল্ফ এন্ট্রেপ্রেনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং বড় ব্যাবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখো!
তুমি বরং জজ বারিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন দেখো!

এদেরকে কেউ গালি দেয় না,
এরা সবাই দুধে ধোওয়া তুলসী পাতা!
এরা সবাই নমস্য!
এরা কেউ দুর্নীতি করেনা!
এরা কেউ ট্যাক্স ফাঁকি দেয় না! এরা কেউ জনগণকে চুষে খায় না!

এদেশের চিকিৎসকেরাই শুধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে বেতন নেয়, বিনিময়ে রাষ্ট্রকে কোন সেবাই দেয়না!
এদেশের চিকিৎসকরাই শুধু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে আর কেউ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে না!
জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে এদেশের চিকিৎসকেরা জনগণকে সেবা দেয় না আর অন্যরা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় না পড়েও জনগণকে সেবা দেয়!

অসুখ বিমারী নিয়ে যেসব লাখ লাখ অসহায় মানুষগুলো এদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করে ভারত সিংগাপুর আর থাইল্যাণ্ড থেকে চিকিৎসকেরা এসে কিংবা আসমান থেকে জ্বীনভূতেরা এসে তাদেরকে সেবা দিয়ে সারিয়ে তোলে!
এদেশের ষোল কোটি মানুষের অসুখ বিমারী সারিয়ে তুলতে এদেশের চিকিৎসকদের কোন ভুমিকাই নেই!

দেশের ষোলকোটি মানুষকে সুস্থ্য রাখতে এবং একমাত্র স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার(এমডিজি ফোর) প্রাপ্তিতে এদেশের চিকিৎসকের কোন ভূমিকাই নেই! স্বয়ং রাষ্ট্রের প্রধান নীতিনির্ধারকরা তাই হয়তো এদেশের চিকিৎসকদের উপর আস্থা রাখে না, ভরসা করে না!
মাথাব্যথা গলাব্যাথা হলেও কিংবা রক্ত পেশাব পরীক্ষা করাতেও তারা সিংগাপুর থাইল্যাণ্ডে ছুটে!

তারা হয়তো বিশ্বাস করে ভারত সিংগাপুর আর থাইল্যাণ্ডের চিকিৎসকদের হাতে কখনোই কোন রুগি মরে না!
তারা রুগিকে অমরত্ব দিতে পারে!

এটা অবশ্য ঠিক যে এদেশের চিকিৎসকেরা রুগিকে অমরত্ব দিতে পারে না!
তাই হয়তো এদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের অভিভাবকেরা এদেশের চিকিৎসকদের উপর ভরসা রাখে না, তাদেরকে মূল্যায়ণ করে না!

চিকিৎসাবিদ্যার ‘চ’ না জেনেও যে দেশে সাংবাদিকেরা ‘চিকিৎসকের চিকিৎসা ভুল না সঠিক’ সেটা নিরুপন করে দেয় সে দেশে অবশ্য চিকিৎসকের মূল্যায়ণ আশা করাটাও ঠিক না!

সর্বোপরি,
চিকিৎসকের পেশায় যতটুকু ত্যাগ আছে ততটুকু প্রাপ্তি নেই!
অন্যপেশায় যতটুকু প্রাপ্তি আছে ততটুকু ত্যাগ নেই!

অন্যপেশায় রাষ্ট্র ও জনগণকে দেয় সেবার মূল্যায়ণ আছে!
বিপরীতদিকে রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি চিকিৎসকের রক্তঘামে মেশানো শ্রমের কোন মূল্যায়ণ নেই!
যদি কালেভদ্রে কিছু মূল্যায়ণ কেউ করেও থাকে তাহলে তার সাথেও ‘যদি তবু কিন্তু’ মেশানো এক বালতি লাঞ্জনাও ফ্রী চলে আসে!

এতকিছুর পরেও যদি তুমি তোমার এই অধম অগ্রজের মতো চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকো তবে অবশ্যই সেটা তোমার বদন্যতা, অবশ্যই সেটা তোমার উদারতা!
তোমাকে আমার অগ্রিম অভিবাদন ও শুভ কামনা।
________

পুনশ্চঃ
হাতেগোনা কিছু ব্যাতিক্রম তো অবশ্যই আছে বাট ‘এক্সেপশন কান’ট বি এক্সাম্পল!’

তাছাড়া চিকিৎসক হিসেবে যারা সর্বোচ্চ ধাপে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন তারাও যে এই রাষ্ট্র ও জনগণ দ্বারা কখনোই হিউমিলিয়েটেড হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই!
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. আব্দুল্লাহ্ স্যারকেও লাঞ্জিত হতে হয়েছে!
চিকিৎসাবিদ্যার ‘অ আ ক খ’ না জেনেও এদেশের সাংবাদিকেরা তার চিকিৎসাকে ভুল বলে চালিয়ে দিয়েছে!
‘ভুল চিকিৎসা’র বানোয়াট মামলায় তাকেও চিকিৎসা ফেলে কোর্টের দরজায় ছুটতে হয়েছে!
________

দ্রষ্টব্যঃ
চিকিৎসাপেশায় দু’চারটা বিষফোঁড়া যে নেই কখনোই আমরা তা বলিনা কিন্তু এই দু’চারটা বিষফোঁড়ার জন্য পুরো চিকিৎসাপেশাকেই যেভাবে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেভাবে পুরো পেশাটাকেই হিউমিলিয়েট করা হচ্ছে তা সত্যিই অমানবিক অন্যায়।

ওয়েব টিম:
Related Post