X

এবারের ঈদেও রোগীদের ভোগান্তি (এড়াতে কাজ করছেন অমুসলিম ডাক্তারেরা)

শিরোনামটি একটু অদ্ভূত মনে হতে পারে। প্রথম অংশটুকুতেই সবাই অভ্যস্ত, সমস্ত পত্রিকা, অনলাইন নিউজ মিডিয়া, টেলিভিশন, রেডিও সব জায়গায় প্রথম কথাটিই ফলাও করে বলা হয়, পরের অংশটির কথাটি কেউ বলে না। এমনিতেই বাংলাদেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যায় অনেক অনেক কম, তারপরেও এই ঈদের বন্ধে ১০জন ডাক্তারের কাজ একাই সারেন একজন অমুসলিম ডাক্তার। ঈদের সময়ে সারাদেশবাসী যখন পোলাও কোর্মা খেতে খেতে পরিবার পরিজন নিয়ে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান দেখেন তখন দেশের প্রতিটি হাসপাতাল, ক্লিনিক কোন না কোন অমুসলিম ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেন। ঈদের সময়ে বেশিরভাগ স্থানে দোকানপাটও বন্ধ থাকে তাই এই ডাক্তারদের তিনবেলা খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তাও পাওয়া যায় না অনেক সময়। এরকম পরিবেশে টানা ৪-৫ দিন অনেকাংশে এক সপ্তাহ পর্যন্ত একজন ডাক্তার দ্বায়িত্ব পালন করেন। না সবার মত ৯টা ৫টা ডিউটি নয়। দিনে ২৪ ঘণ্টা করে একটানা ৪-৫ দিন এর ডিউটি।

আচ্ছা এটাই যদি হবে তাহলে পত্রিকায় কেন বলে ডাক্তার নাই, রোগীর ভোগান্তি? প্রথমত ডাক্তার নাই কথাটা বলার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে ডাক্তার কারা। আমাদের দেশে একেবারে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ সামান্য সর্দি জ্বরের জন্যেও প্রফেসর খোজে। কিন্তু একজন প্রফেসরের দ্বায়িত্ব সর্দি জ্বর সারানো নয়, তার দ্বায়িত্ব নতুন ডাক্তারদের পড়ানো, জটিল রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক দ্বায়িত পালন করা। আর একজন এমবিবিএস ডাক্তারের দায়িত্ব সব রোগী দেখা এবং সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য রেফার করা। ঈদের বন্ধ হোক কিংবা সারা দেশে ভূমিকম্প হোক, জরুরী চিকিৎসাসেবা কখনোই বন্ধ থাকে না। একজন মানুষ হিসেবে ডাক্তারেরও সাপ্তাহিক ছুটি, ধর্মীয় ছুটি, রাষ্ট্রীয় ছুটি পাওনা। সেটাই করা হয় ভাগ করে দ্বায়িত্ব বন্টন করে। তাই সব রকম ছুটিতেও সব হাসপাতালে ক্লিনিকে নূন্যতম একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকেন। কিন্তু আমাদের মানসিকতা তাদের ডাক্তার বলে পরিচয় দিতে চায় না হয়ত তাই নিউজ হয়, ডাক্তার নেই!

এবার হাসপাতালের  ভিতরের চিত্রটি চিন্তা করুন। বন্ধের সময়ে রোগ বালাই তো বন্ধ থাকে না, তাই রোগীর চাপও কমে না। অথচ ১০জন ডাক্তারের কাজ সামলাতে হয় ১ জনকে, তাহলে তার উপর কি পরিমান কাজের চাপ থাকে সেটা চিন্তা করুন। প্রায় ২৪ ঘন্টাই তাদের জেগে থাকতে হয়, কাজের ফাকে ফাকে হয়ত চেয়ারে বসেই মিনিট খানেক জিরিয়ে নেবার সুযোগ পান, খুব ভালো ভাগ্য হলে, রোগীর চাপ কম থাকলে পূর্ন বিশ্রাম নেবার সুযোগ হয়ত পাওয়া যায়। এমন অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা কেউ যদি মারা যায় সব রকম ডাক্তারি বিদ্যা খাটানোর পরেও তখন কি কেউ ঐ ডাক্তারকে বলবে, “আহারে বেচারা আপনি অনেক চেস্টা করছেন, তাও কপালে ছিল না, তাই রোগী বাচল না”। না এটা কেউ বলবে না, বরং সবাই মিলে ডাক্তারের উপর চড়াও হবে, টেনে হিচড়ে তাকে বের করবে, লাঠি দিয়ে মারতে মারতে তাকে তিনতলা থেকে নিচ তলায় নামিয়ে আনবে, মাথায় ফাটিয়ে সিড়ি, মেঝে রক্তাক্ত করবে, হাসপাতাল ভাংচুর করে ডাক্তারকে ভূল চিকিৎসার অভিযোগে পুলিশে দেবে। জ্বী এটাই বাস্তবতা, কয়েকদিন আগেই এটা ঘটেছে চাদপুরের রয়েল হাসপাতালে। এরকম ঘটনা একটি নয় প্রায় প্রতি মাসেই ঘটে, ঘটছে হয়ত আরো ঘটবে।

অথচ আমাদের কি উচিত ছিল না এই অক্লান্ত পরিশ্রমী মানুষগুলোর প্রতি একটু সমবেদনা প্রকাশ করা? আমাদের কি উচিত ছিল না ঈদের দিনের একটু ফিরনি পায়েশ পোলাও নিকটস্থ হাসপাতালে ডিউটিরত অমুসলিম ডাক্তারের জন্য পাঠিয়ে মানবিকতার পরিচয় দেবার? আমরা কি চাইলেই পারিনা ঈদের দিনে তাদের কাছে যেয়ে কুশল বিনিময়, কোলাকুলি করতে? আমরা কি পারি না সেচ্ছায় কিছুটা সময় একাকী কর্মরত এসব ডাক্তারকে ঘন্টা খানেক এর জন্য কাজে সাহায্য করতে? এটুকু পড়ে যদি আপনার বিবেক জাগ্রত হয় তাহলে আসুন অন্তত ঈদের দিন নিকটস্থ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারের খোজ নেই, কুশল বিনিময় করি, খুব ছোট কোন কাজ করে হলেও তাকে সাহায্য করি।

লেখকঃ ডাঃ মোঃ মারুফুর রহমান অপু

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (1)

  • অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটা টপিক লেখার জন্য, মনের কথা বলে ফেলেছেন॥

Related Post