X

এন্টিবায়োটিকঃ সচেতনতার শুরু এখনই

আমি যখন মেডিকেল কলেজে পড়তাম তখন আমাদের স্যার প্রায়ই বলতেন, আমরা ব্যাকটেরিয়ার মাঝে ডুবে আছি বা ব্যাকটেরিয়ার জগতে বাস করছি। কথাটা ১০০% সঠিক। এমনকি আমরা নিজেরাও নিজেদের শরীরের বাইরে বা ভিতরে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বাস করছি। এরা এদের নির্দিষ্ট স্থানে থাকাকালীন আমাদের কোন ক্ষতি করে না, কিন্ত তাদের নিজ বাসস্থান থেকে অন্যদিকে চলে গেলে আমাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এমনকি এই আণুবীক্ষণিক জীব আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। তাই এইসব ব্যাপারে আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। এদের সংক্রমণে দেহে নানা রোগ বাসা বাঁধে। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেতে হয় এন্টিবায়োটিক। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে এর ব্যবহারবিধির ওপর। তাই এ ব্যাপারে তাই সচেতনতা খুবই জরুরি।

এন্টিবায়োটিক সেবনের পূর্বে আপনার চিকিৎসককে আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থার কথা খুলে বলুন। এখানে কোনকিছু লুকানোর নেই। হতে পারে আপনি যা লুকাচ্ছেন বা যা বাদ পরে যাচ্ছে তা আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া চিকিৎসকও আপনাকে অনেককিছু জিজ্ঞেস করবে। তাকে সবকিছু খুলে বলাটাও আপনার দায়িত্ব। একটি অসুখ ভালো হবে কিনা তার অনেকাংশ নির্ভর করে রোগীর উপর। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরী। এ সম্পর্কে কিছু বিষয়ে জেনে রাখা উচিৎঃ

১. একজন মানুষের অন্যতম প্রধান সমস্যা জ্বর। মনে রাখবেন জ্বর কোন রোগ নয় এটি একটি উপসর্গ। জ্বরের জন্য কখনোই এন্টিবায়োটিক খাবেন না। প্যারাসিটামল বিপি ৫০০ এমজি. ট্যাবলেট খেতে পারেন, জ্বরের মাত্রা ১০৩-১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকলে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি নিতে পারেন। ৫-৬ দিনের মাঝে জ্বর সেরে না গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কিন্ত জ্বরের জন্য শুরুতে কখনোই এন্টিবায়োটিক খাবেন না এবং শুরুতেই ডাক্তারকে এন্টিবায়োটিক দিতে অনুরোধ বা জোর করবেন না। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবারা প্রায়ই এমনটা করেন। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জ্বর হয়েছে—এমন প্রমাণ হাতে পাওয়ার আগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না।

২. এন্টিবায়োটিক এক ধরনের কেমিকেল যা আপনার শরীরে দেয়া হচ্ছে। তাই অনেকের অনেক ধরনের এন্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে। একই অ্যান্টিবায়োটিক একজনের জন্য প্রাণ রক্ষাকারী; আরেকজনের জন্য প্রাণসংহারীও হতে পারে। কোনো ওষুধে অ্যালার্জি থাকলে তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে। ওষুধ সেবন শুরু করার পর ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। প্রয়োজনে ওষুধ বন্ধও করে দিতে পারেন।

৩. প্রায় বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় খাওয়া নিষেধ। এতে বিপদ হতে পারে। বাচ্চার নানা ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসককে নিজের শারীরিক অবস্থা জানানো জরুরি।

৪. অনেক ওষুধের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রিয়া হতে পারে। যেমন এন্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কার্যকারীতায় প্রভাব ফেলে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির আশানুরূপ কার্যক্রম নাও পেতে পারেন। তাই আপনি বর্তমানে কোন ঔষধ সেবন করছেন তা চিকিৎসককে জানাতে হবে।

৫. ওষুধ কত ঘণ্টা পরপর মোট কত দিন খেতে হবে, তা ভালোমতো জেনে নিন। ঠিক সেই সময় ধরেই ওষুধ খেতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে সাধারণত দিনে তিনবার বা চারবারের বদলে আট বা ছয় ঘণ্টা পরপর ওষুধ খেতে বলা হয়। কোনো একটা ডোজ খেতে ভুলে গেলে পরবর্তী ডোজ কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সতর্কতা জরুরী।

৬. অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স শেষ হওয়ার আগেই শরীর ভালো লাগতে পারে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। পুরো কোর্সটি শেষ করতে হবে। না হলে জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস নাও হতে পারে।

৭. অন্য কেউ কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে গলাব্যথা সারিয়েছেন—এমন তথ্যের ভিত্তিতে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। আবার আগে যে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে কাশি সেরেছে, সেটি আবার খেলে সেরে যাবে, এমন ধারণা ভুল। আগেরবারের রয়ে যাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াও ভালো কথা নয়।

৮. শিশুদের ওজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একই বয়সী আলাদা ওজনের দুই শিশুর অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স দুই রকম হতে পারে। না বুঝে-শুনে বা ধারণা করে তাই শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন না। মাত্রা ভালো করে জেনে নিন। পুরোনো মুখ খোলা অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ বা সাসপেনশন আবার ব্যবহার করবেন না। সাসপেনশন তৈরির সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

৯. চিকিৎসকের কাছে অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নিতে হবে। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে প্রস্রাবের রং লাল হয়ে যায়, কোনোটাতে আবার পেটে গ্যাস হয়। কোনটা খেলে রুচি কমতে পারে বা বমি পেতে পারে। জানা থাকলে ভালো। এতে করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরবর্তী আপনার দুশ্চিন্তা হ্রাস পাবে।

১০. কোনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে বেশি করে পানি পান করতে হয়। কোনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে কিছু খাবার বা অ্যালকোহল বিক্রিয়া করে। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যা কিডনি বা যকৃতের সমস্যায় সেবন করা যায় না। তাই নিজের শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে চিকিৎসককে সাহায্য করতে হবে।

১১. এন্টিবায়োটিক কখনোই খালি পেটে খাওয়া যাবে না।

রচনা এবং সম্পাদনাঃ তানজিল মোহাম্মাদীন

তানজিল মোহাম্মদীন:
Related Post