X

আর্মি মেডিকেল কোর

লেখকঃ শামস

ইন্টার্ন কমপ্লিটের পর আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি একটি পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি, বিসিএস বা ক্ষ্যাপ মারার জন্য। ক্ষ্যাপ মারা বা বিসিএসের তুলনায় অনেক নিরাপদ এবং সম্মানজনক চাকরি হিসেবে বেছে নিতে পারেন আর্মি মেডিকেল কোরকে। ছোট থেকেই অনেকের স্বপ্ন থাকে আর্মি অফিসার হবার। পরিবারের চাপে বা বিভিন্ন পরিস্থিতি বা আর্মির আইএসএসবির কঠিন পরীক্ষার অনেকের সেই স্বপ্ন পূরন হয়না। তাই ডাক্তার হবার পর সেই স্বপ্ন পূরন করতে পারেন আর্মি মেডিকেল কোরে যোগদানের মাধ্যমে।

আর্মি মেডিকেল কোরে তিনভাবে যোগদান করা যায়। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হওয়া, স্বল্প মেয়াদি কমিশনের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগদান, পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে সরাসরি মেজর হিসেবে যোগদান।

বছরে দুই হতে তিন বার পত্রিকায় এবং ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আর্মি মেডিকেল কোরের সার্কুলেশন পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা http://www.joinbangladesharmy.mil.bd

পরীক্ষা চারটি ধাপে হয়ে থাকেঃ

১) লিখিতঃ একশো নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় মেডিকেল বিষয়, সাধারণ জ্ঞান, সাম্পতিক বিশ্ব, বাংলাদেশের ইতিহাস হতে প্রশ্ন করা হয়। ৩০টি সত্যমিথ্যা এবং ৮টি রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া লাগে। লিখিত পরীক্ষা খুবই সহজ হয়ে থাকে। নম্বরের ভিত্তিতে এবং কতজনকে সেইবছর কোর্সে নেওয়া হবে সেই ভিত্তিতে লিখিত পরীক্ষা হতে ভাইভার জন্য ডাকা হয়।

২) মৌখিক এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ ডিজিএমএস এর উপস্থিতিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষার কোন নির্দিষ্ট বিষয় নেই। যে কোন বিষয় থেকে জানতে চাওয়া হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক ভাবে আলোড়োন তোলা কোন রোগ সম্পর্কে অনেককেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। একইদিনে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওজন, উচ্চতা, দৃষ্টিশক্তিসহ কিছু প্রাথমিক বিষয় এক্সামিন করা হয়। শারীরিক খুব বড়সড় সমস্যা না থাকলে এখানে আটকানো হয়না।

৩) আইএসএসবিঃ আর্মিতে যোগদানের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার নাম এটি। চারদিন ব্যাপি এই পরীক্ষা হয়ে থাকে। মেয়ে এবং ছেলেদের আলাদা সময়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আইএসএসবি এর প্রস্তুতির জন্য ডিফেন্স কোচিং বা নীলক্ষেত থেকে ডিফেন্স গাইডের সাহায্য নিতে পারেন। অন্যান্য যে কোন পরীক্ষার থেকে এটি সম্পূর্ন আলাদা তাই এর জন্য আলাদা প্রস্তুতি নেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আইএসএসবি সম্পর্কে হালকা ধারনা দেবার চেষ্টা করছি স্বল্পপরিসরে।

প্রথম দিনঃ আপনাকে চারদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হবে এখানে। প্রথমদিন আউট হয়ে গেলে স্ক্রিন্ড আউট বলা হয়। দুইবার স্ক্রিন্ড আউট হলে আর্মির জন্য এপ্লাই করা যায়না। প্রথম দিন দিনের বেলা দুটি এক্সাম হয়। আইকিউ টেস্ট এবং পিপিডিটি।

আইকিউ টেস্ট মূলত আপনার আইকিউ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা সম্পর্কে যাচাই করা হয়। এটি একটি লিখিত পরীক্ষা। ডিফেন্স গাইডে অনুশীলন অধ্যায় বারবার সমাধান করলে সহজেই এটি পাস করা যায়। আইকিউ এক্সামের পরপরি রেজাল্ট দেওয়া হয়। এখানে যারা বাদ পড়ে তাদের আইএসএসবি ছেড়ে যেতে হয়।

পিপিডিটি স্ক্রিনে একটি অস্পষ্ট ছবি দেখে ঘটনার বর্ণনা লেখা এবং তা নিয়ে আলোচনার পরীক্ষা পিকচার পারসেপশন এবং ডেসক্রিপশন টেস্ট। প্রথমে লিখিত এবং তারপর আপনার লেখা নিয়ে গ্রুপে আলোচনায় অংশ নেয়া। এই এক্সামের পরপর রেজাল্ট দেওয়া হয় এবং স্ক্রিন্ড আউট করে দেওয়া হয়। বাকিরা চারদিন আইএসএসবিতে থাকার যোগ্যতা লাভ করে।

রাত্রে বেশ কিছু লিখিত পরীক্ষা হয়। যেমন পার্সোনালিটি টেস্ট, এসে রাইটিং। সবগুলোই সাইকোলজিকাল টেস্টের অন্তভূক্ত। অনেকগুলো বায়োডাটা পূরন করতে হয়। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আইএসএসবির চারদিনে অনেকবার আপনাকে বায়োডাটা পূরন করতে দিবে নানা ফরমে। সবগুলোতেই যেন আপনার তথ্য একই থাকে। এটি করা হয় তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। রাত্রে দশ থেকে এগারোটার মধ্যে সাইকোলজিক্যাল এক্সাম শেষ হয় এবং প্রথম দিনের সমাপ্তি ঘটে।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনঃ এই দুইদিনে গ্রুপ ডিসকাশন, প্রগ্রেসিভ গ্রুপ টাস্ক, হাফ গ্রুপ টাস্ক, ইনডিভিজুয়াল অবস্ট্যাকল, এক্সটেমপোর স্পিচ, প্ল্যানিং এক্সারসাইজ ও ডিসকাশন, কমান্ড টাস্ক, মিউচুয়াল এসেসমেন্ট এবং ডিপি ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়।

আইএসএসবির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ভাইবা সম্পর্কে বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন। এখানে আপনাকে নানাভাবে প্রশ্ন করে উত্তেজিত করা হবে। খুব পার্সোনাল প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। যেমন গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে, শারীরিক মিলন হয়েছে কিনা এধরনের নানা প্রশ্ন করে আপনাকে রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। রেগে গিয়ে উল্টোপাল্ট কিছু বললেই ধরা খেয়ে যাবেন। এটিকে এক ধরনের মাইন্ড গেম হিসেবে নেয়ার চেষ্টা করুন। পার হয়ে যাবেন।

আইএসএসবির সব পরীক্ষায় সর্বদা চটপটে ভাব দেখাতে হবে। গ্রুপ টাস্কে নিজের কমান্ড এবং ডিসিশন দেবার দক্ষতা দেখাতে হবে। সবসময় একজন সাইকোলজিস্ট আপনার দিকে লক্ষ্য রাখবে আপনার মানসিক ক্ষমতা দেখার জন্য। জিটিও থাকবে শারীরিক ক্ষমতা দেখার জন্য। আর আইএসএসবির প্রত্যেক কর্মচারির কাছেই নজরদারির নির্দেশ দেওয়া থাকে। ডাইনিং এর বয়রাও আপনার চেস্ট নাম্বার লিখে রিপোর্ট দিয়ে দিতে পারে, তাই চারদিন থাকাকালে কোন রকম উগ্রতা বা অশালীন আচরন করা যাবেনা।

চতুর্থদিনঃ এইদিনে কোন এক্সাম হয়না। সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট এবং ডেপুটি প্রেসিডেন্ট, সাইকোলজিস্ট ও জিটিওরা সবার রেজাল্ট নিয়ে বোর্ডে বসেন। যাদের যোগ্য মনে হয় তাদের পাস করানো হয়। যদি মতপার্থক্য হয় তবে যে কারো কারো ভাইভা বা গ্রাউন্ড টেস্ট সকালে পুনরায় নেওয়া হয়। রেজাল্ট দিতে দিতে বিকেল হয়ে যায়। ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রুমে ডেকে গ্রিনকার্ড এবং রেডকার্ড ধরিয়ে দেন।

চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ সিএমএইচে চুড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে থাকে। এখন এর কিছু অংশ আইএসএসবিতে নেওয়া হয়। এক্সরে, ব্লাড, ইউরিন থেকে সব চোখ কান সবকিছুরই পরীক্ষা করা হয়। চুড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের আর্মি হেডকোয়াটারে ডাকা হয় জয়নিং লেটার এবং বিএমএতে যোগদানের তারিখ জানানোর জন্য।

প্রশিক্ষণঃ ডাইরেক্ট শর্ট সার্ভিস কমিশনে তিনিটি ধাপে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়ে থাকে। ১১ সপ্তাহ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাসিক মিলিটারি ট্রেনিং, ৬ সপ্তাহ আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার এন্ড স্কুলে অফিসার্স ব্যাসিক কোর্স, ৪ সপ্তাহ ঢাকার এএফএমআইতে মেডিকেল অফিসার্স ব্যাসিক কোর্স। প্রশিক্ষনের রেজাল্ট এবং চাহিদার ও পছন্দের সাপেক্ষে পোষ্ট গ্রাজুয়েশনের সাবজেক্ট দেওয়া হয়। যারা পার্ট ওয়ান করে ঢুকবেন তাদের সেই সাবজেক্ট দেওয়া হয়ে থাকে।

সফল প্রশিক্ষন শেষে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট, সিএমএইচ, ফিল্ড এম্বুলেন্স, নেভি, এয়ারফোর্স, বিজিবি, কোস্ট গার্ড বা র‍্যাবে পোস্টিং দেওয়া হয়ে থাকে।

আইএসএসবির আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঘুরে দেখতে পারেন http://www.issb-bd.org বাংলাদেশ সেনাবাহীনিতে যোগদান করে একইসাথে মানুষ এবং দেশের সেবা করার সুযোগ নিন।

 

ক্যাপ্টেন শামস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (3)

Related Post