X

আমার এফসিপিএস পার্ট-১ অভিজ্ঞতা (মেডিসিন)

অর্জনটা অনেকটা কপালের জোরেই, পড়াশুনার ভূমিকা সেখানে কমই ছিল তবু যেটুকু করেছি তার হিসেবেই লিখছি সামনে যারা পরীক্ষা দিবেন তাদের জন্য। পোস্টের শেষে Kaiser Anamভাইয়ের আরো খুটিনাটি একটা লেখা জুড়ে দিয়েছি।
আমার কাছে যেটুকু মনে হয়েছে এমবিবিএস লেভেলে আমরা যা পড়ে এসেছি প্রশ্ন আসলে সেখান থেকেই আসে। কিন্তু দীর্ঘদিন আমরা বেসিক সাবজেক্ট এর পড়াশুনার সাথে সম্পৃক্ত থাকি না বলে প্রশ্ন কঠিন মনে হয়। অন্য বিষয়ের কথা জানিনা, মেডিসিনের ক্ষেত্রে বলব এমবিবিএস লেভেলে প্রফ এর জন্য যা পড়েছি, যা গুরুত্বপূর্ন ছিল এখানেও তাই, এটুকু জানতেই হবে (সেটা গাইড বই হোক, কোচিং এর নোট হোক কিংবা মূল টেক্সট বই হোক)। এই পড়াগুলো আগে যেখান থেকে পড়েছেন সেখান থেকেই ঝালিয়ে নেয়া ভালো, নতুন করে হাচিসন, ডেভিডসন, গাইটন গ্যানং, কুমার ক্লার্কের বোঝার নিচে পড়ে থাকার কোন মানেই নেই। যে যেখান থেকে আগে পড়েছেন পুরোনো বইগুলোই আবার পড়ুন। মূল বই অবশ্যই পড়তে হবে, মেডিসিনের জন্য ডেভিডসন পড়াটা জরুরি কিন্তু প্রতি পাতা পড়ে যাওয়ার কোন মানে নেই। সব ডিজিজের বেসিক প্যাথলজি, এপিডেমিওলজি, মেনিফেস্টেশন, ম্যানেজমেন্ট এভাবে পড়া গুছিয়ে নিলে ভালো, সাথে বইয়ের বক্স এবং ছবিগুলো। আর বেসিক সাবজেক্টের ক্ষেত্রে মেডিসিনের জন্য এনাটমী অতটা গুরুত্বপূর্ন নয় (কিছু প্রশ্ন আসে যদিও)। এনাটমী আলাদা করে পড়ার দরকার নেই অতটা, ডেভিডসনের সাথে যেটুকু আছে ওটাই যথেস্ট মনে করি। ফিজিওলজি থেকে অনেক প্রশ্ন আসে, এটা আগে যেখান থেকে পড়েছেন সেখান থেকেই ঝালিয়ে নিন, মাইক্রো এর জন্য LANGE review টা মোটামুটিভাবে দেখে যেতে পারলে খুবই ভালো। ফার্মাকোলজির জন্য আমি ভিশন পড়তাম। এটা খুবই কাজে লেগেছে। পুরোনো গাইড, নোটবই লেকচারগুলো ফেলে না দিয়ে এই সময়ে একটু উলটে পালটে দেখুন, সব আপনার পড়াই আছে। যদি সম্ভব হয় আলাদা স্লিপ প্যাড বা কাগজে বিভিন্ন বইয়ের তথ্যগুলো লিখে মূল বইয়ের ভাজে ভাজে রেখে দিন যেন এক যায়গায় সব পাওয়া যায়। কোচিং করা ভালো না খারাপ এই তর্কে যাব না, যারা করছেন করুন কিছু ফল অবশ্যই পাবেন তবে কোচিং এর কারনে নিজের সময়টা যেন নস্ট না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন। বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স আমরা এমবিবিএস লেভেলে তেমন পড়িনা। এবার অনেক প্রশ্ন এসেছে। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কারো কাছে যদি আলাদা নোট থাকে সংগ্রহ করে নিন অথবা ইন্টারনেট ঘেটে বায়োস্ট্যাট এর বেসিক বিষয়গুলো একটু দেখে নিন। জেনারেল প্র্যাকটিস থেকে যে প্রশ্নগুলো আসে সেটা ফরেন্সিক মেডিসিনে শুরুর দিকে পড়েছি, পরীক্ষার আগে ওইটুকুই আরেকবার দেখে যান। শেষ কথা হল প্রতিদিন কিছু না কিছু হলেও পড়ার অভ্যাস রাখুন। ৬ মাস অনেক সময়। শেষ দু মাসে পড়ার গতি বাড়িয়ে দিন। আশা করি বিফল হবেন না!

এফ.সি.পি.এস এর হিসাব-কিতাবঃ কায়াসার আনাম
এইখানে এফ.সি.পি.এস(মেডিসিন) পার্ট ওয়ান নিয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু কথা বলব। ফাইনাল পার্ট নিয়ে বলার কিছু নাই। ওখানে ৩% পাশ করে। চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি দোয়া করতে থাকতে হবে যেন বাকী সবকিছু পারফেক্ট হয়। যেমন, যে স্যার পরীক্ষা নিবেন সেদিন যেন ওনার পেটে ভুট-ভাট গ্যাস না হয়, সকালে পেট ভালো ভাবে ক্লিয়ার হয়ে থাকে এবং মুড ভালো থাকে।

পার্ট ওয়ানে ১৫-২০% পাশ করে থাকে। তাই এখানে কথা বলার কিছু স্কোপ আছে। যারা প্রথমবার পরীক্ষা দেয়, তাদের মনে অনেক ভয় থাকে,অনিশ্চয়তা থাকে। এখন আমি যে বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছি তা যদি পরীক্ষার আগে জানতাম তাহলে অনেক কম দুশ্চিন্তা হতো। এখনো সব অভিজ্ঞতা তাজা আছে। তাই, এখনি সামনে যারা পরীক্ষা দিবে তাদের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।

এখানে কতো নাম্বার পেতে হবে সে নির্দেশনা নোটিসে দেওয়া হয়নি। জনশ্রুতি থেকে যে নিয়মগুলো উদ্ধার করা গেছে সেগুলো হল-

১। সব বিষয় মিলিয়ে ৭০% নাম্বার পেতে হবে। অর্থাৎ, মোট ২১০ নাম্বার পেতে হবে।

২। কোন একটি বিষয়ে ৬৫% এর নিচে নাম্বার পাওয়া যাবেনা।

৩। কোন একটি বিষয়ে ৭৫% এর বেশী নাম্বার পেয়ে লাভ নেই। বাড়তি নাম্বার যোগ করা হবেনা।

বোঝা যাচ্ছে যে পার্ট ওয়ান কোন ম্যাক্সিমাম নাম্বার পাওয়ার পরীক্ষা না। এটা একটা মিনিমাম নাম্বার পাওয়ার পরীক্ষা।

একটু প্রস্তুতি নিলে ৬৫ নাম্বার তোলা মোটেই কঠিন কিছু না। ধরে নিলাম কারও পরীক্ষা বেশ খারাপ হল। তার সিঙ্গেল বেস্ট আন্সার থেকে যদি পাঁচটাও হয়, তাহলে ভেতরের স্টেম থেকে ৬২টা অপশন ভুল করলেও ৬৫ নাম্বার থাকবে। যথেষ্ট খারাপ পরীক্ষা হলেও ৬২টা ভুল হওয়া উচিত না। এর বেশী ভুল হলে বুঝতে হবে প্রেপারেশনে ঘাটতি ছিল। আর এতো ঘাটতি নিয়ে পার্ট ওয়ান পাশ না করাই ভালো। নাহলে এই ঘাটতিগুলো পরে পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

ঐদিকে ৭৫ নাম্বার তোলার হিসাবটা দেখে নিই। যদি সিঙ্গেল বেস্ট আন্সার থেকে আটটা হয়, তাহলে ভেতরের স্টেম থেকে ৫২টা অপশন ভুল করলেও ৭৫ নাম্বার থাকবে। যাদের মোটামুটি প্রস্তুতি আছে, তাদের সবচেয়ে খারাপ পরীক্ষাটাতেও এতগুলো স্টেম ভুল করার কথা না।

এই টার্গেট নাম্বারগুলো পূরণ করা খুবই অ্যাচিভেবল। এর জন্য কোন এক্সটিক পদ্ধতি গ্রহণ করার দরকার নাই। একেকবার একেক প্রশ্ন আসে ঠিকই। কিন্তু ঘুরেফিরে কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই এসব প্রশ্ন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্দিষ্ট কিছুই আছে। তাই বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধান পড়তে হবে। তারপরে সেগুলো কোথা থেকে এসেছে, সেই জায়গাগুলো বই থেকে বের করে পড়ে ফেললে, আর ডেভিডসনের বক্স, চার্টগুলো পড়লে যে প্রস্তুতি হবে সেটাই যথেষ্ট। লাইন বাই লাইন ডেভিডসন মুখস্ত করারও কোন দরকার নাই। মনে রাখতে হবে ৯৫ নাম্বার পেয়ে কোন উপকার হবেনা। আগেও যেটা বলেছি, পার্ট ওয়ান কোন ম্যাক্সিমাম নাম্বার পাওয়ার পরীক্ষা না। এটা একটা মিনিমাম নাম্বার পাওয়ার পরীক্ষা।

এবার দেখলাম যে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী কোচিং করা। মনে হয়না সেটার দরকার হবে। ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। উপরের যে পদ্ধতি বললাম সে অনুযায়ী, কারও যদি বেসিকে বেশী গ্যাপ না থাকে তাহলে ইন শা আল্লাহ ম্যাক্সিমাম ১ মাসেই সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব।

Don’t just study hard, study smart!

আগামীবারের পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা। আল্লাহ সবার সহায় হোন।

লেখকঃ ডাঃ মারুফুর রহমান অপু

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (9)

  • মার্কিং টা আরেকটু বুঝিয়ে বলা দরকার মনে হয়। তিনটাতেই পেপারে ৭০% নাম্বার পেতে হবে। নাহলে রেজাল্টে পাস আসবে নানা। যেকোন একটা পেপারে ৭০ এর নিচে কিন্তু ৬৫ এর বেশি পেয়েও পাস করার একটা সু্যোগ থাকে যদি অন্য কোন পেপারে ততটুকু বা তারও অধিক বেশি নাম্বার পায়। যেমন কোন একটা পেপারে ৬৭ পেল, অন্য একটা পেপারে ৭৩ বা তার বেশি পেতে হবে। অন্য দুইটা পেপারে ৭২ থাকলেও হবে না। আবার একটা পেপারে ৭৫, কিন্তু অন্য দুইটা পেপারে ৬৯.৮ করে থাকলেও হবে না। আর এই পাস গুলি বিসিপিএস নিজে নিজে ঘোষণা করবে না। পরীক্ষার দুই মাস পর ৩০০ টাকা দিয়ে মার্কস তুলতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রেজাল্ট রিভিউ এর আবেদন করতে হবে, তারপর পাস ঘোষণা হবে।

Related Post