X

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এওয়ার্ড বাণিজ্য

মিটফোর্ড হাসপাতালের ঠিক উল্টো দিকেই একটি হাসপাতাল আছে যার সাথে ঢামেক হাসপাতাল এর নামের কিছুটা মিল আছে। একদিন এক রিকশাওয়ালা এক রোগী ও তার পরিবারকে এই হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে বলছে এইটাই ঢাকা মেডিকেল। দোষ আসলে কার সে তর্কে পরে যাই, চলুন জেনে এই একটি ব্যবসায়ী চক্রের কথা যারা এওয়ার্ড বাণিজ্য করে।

এওয়ার্ড বাণিজ্য বাংলাদেশে নতুন না। ক্রেস্ট আর সম্মাননা বাণিজ্যে ভালো লাভ, গুণীজনদের ডেকে পুরষ্কার দিয়ে ডোনেশন আদায় করার মাধ্যমে এরা ব্যবসা করে। এ জিনিস দেশের বাইরেও আছে। এমনই এক প্রতিষ্ঠানের নাম ইউরোপ বিজনেস এসেম্বলি। ২০০০ সালের দিকে স্যাভভ নামের দুই ইউক্রেনিয়ান বাবা ছেলে মিলে এ প্রতিষ্ঠানটি খোলে, যার একটি অফিস যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহরে। অক্সফোর্ড শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না, এটি একটি শহরের নাম, সেখানের বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির নাম, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড। যাহোক এই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি উইকিপিডিয়া পেইজ আছে সেখানে বলা আছে এরা ফেইক এওয়ার্ড বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান(https://en.m.wikipedia.org/wiki/Europe_Business_Assembly)। এরা যে ফেইক এওয়ার্ড বিক্রি করে অক্সফোর্ডের নাম বেচে তার প্রমাণ পাওয়া যায় যুক্তরাজ্যের টাইমস পত্রিকার একটি লিঙ্কে ( https://www.thetimes.co.uk/article/oxford-university-in-fake-awardsfarce-fh9876jnw), পরিষ্কার ভাবেই বলা আছে এরা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন কলেজের ছবি ব্যাবহার করে, চটকদার সামিট, কনফারেন্স, ব্যাজ এর লোভ দেখিয়ে একাডেমিক ইউনিয়ন অক্সফোর্ড (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই) এর মেম্বারশিপ, অনারারি প্রফেসরশিপ এইসব টাইটেল অফার করে মিডল ইস্ট, আফ্রিকা, সাউথ এশিয়া এইসব দেশে। এ বাবদ তারা ৮-১০ হাজার পাউন্ড চায় এডম্নিনিস্ট্রেটিভ ফি হিসেবে, তারা সক্রেটিস আল্মানাক নামের একটি জার্নালে পাবলিকেশন এর অফার করে যা সম্পূর্ন ভুয়া, কপি পেস্ট ভরপুর নিজস্ব প্রকাশনা এবং এখানেও পাবলিশ এর জন্য তারা ফি নেয়। এ ব্যাবসা করে তারা মিলিয়ন পাউন্ড এর উপরে কামিয়েছে এমন একটি আর্টিকেল ডেইলি মেইলে প্রকাশিত হয়েছিলো (https://www.dailymail.co.uk/news/article-4724826/amp/Ukrainian-businessmen-make-millions-selling-fake-honours.html)

যাহোক, এইসব চতুর ব্যবসায়ীরা একটু বেশিই চতুর হয়। আপনাদের জানা আছে বিসিএমডিসি এর কথা। বিএমডিসির মত কাছাকাছি নাম নিয়ে রেজিস্ট্রেশন বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান৷ তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা কারন তারা আগেই বিভিন্ন আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের প্রায় “ইমিউন” করে রেখেছে। সেরকম ভাবেই এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রেস কাউন্সিলে টাইমস পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলো যে তাদের নামে মিথ্যা অপবাদ রটানো হচ্ছে, এওয়ার্ড ফেইক না। এই দাবীটি আসলে সত্য, এওয়ার্ড ফেইক না, এওয়ার্ড ঠিকই দেয়া হয় কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এবং যেভাবে দেয়া যাদের দেয়া হয় তা শঠতায় পরিপূর্ণ। এখন কেউ যদি জেনে শুনে টাকা দিয়ে এই এওয়ার্ড নিতে চায় তাতে আইনগত কোন বাধা নেই। যাহোক, অভিযোগটি প্রেস কাউন্সিল আমলে নেয়নি (https://www.ipso.co.uk/rulings-and-resolution-statements/ruling/?id=19508-17)

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট এর লিংক এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেখে নিতে পারেন, আসলে এরা কারা, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাথে আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কিনা, এর পরিচালক কারা, তাদের যোগ্যতা কি।
https://oau.ebaoxford.co.uk/about-us-oau/edu-about
https://ebaoxford.co.uk/

এই লেখাটি এখানে প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলো এসব প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়াকে টার্গেট করে। তাদের পলিসি হলো, দেশের কয়েকজন খ্যাতিমান মানুষদের তারা অ্যাওয়ার্ড এর জন্য মনোনীত হয়েছেন লিখে চিঠি পাঠায়। দুবছর আগে ইন্ডিয়া এক প্রফেসর এই এওয়ার্ড পেয়েছে এমন খবর টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছিলো (https://timesofindia.indiatimes.com/city/chandigarh/PU-professor-to-get-honoured-membership-of-Oxford-academic-union/articleshow/54347398.cms)

আমাদের দেশের গুণীজন ও আমাদের শিক্ষকেরা এ ধরনের এওয়ার্ড নয় এর চেয়ে অনেক বড় মাপের এওয়ার্ড পাবার যোগ্য। তারা এ ধরনের ব্যবসায়িক প্রপাগান্ডার ফাদে যেন জড়িয়ে না পড়েন সেটি আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়লেও ইলেক্ট্রনিক লিটারেসি বা ডিজিটাল লিটারেসি আমাদের কম৷ আমরা সহজে যা পাই তাই বিশ্বাস করি ফেলি তাই প্লাস্টিক এর চালের গুজব ছড়াতে সময় লাগেনা। আমাদের স্যারদেরও এত সময় নেই তারা সব কিছু যাচাই বাছাই করবেন। তাই কেউ যদি জেনে থাকেন আমাদের কোন শ্রদ্ধেয়ভাজন স্যার এমন ফাদে পড়ছেন তাদের এই তথ্যগুলো জানিয়ে সতর্ক করুন। কেউ এই এওয়ার্ড নিতে চাইলে ক্ষতি নেই তবে এটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কোন এওয়ার্ড না এমনকি স্বীকৃত কোন সায়েন্টিক কমিউনিটির সাথেও এর কোন সম্পর্ক নেই এ ব্যাপারটুকু অন্তত জানা থাকুক।

ডা. মারুফুর রহমান অপু
ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড 

ওয়েব টিম:
Related Post