X

“Midlife crisis”- কী এবং কেন?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, শনিবার

লেখাঃ ডা. অনির্বাণ সরকার

‘Midlife crisis’ শব্দবন্ধের জনক কানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানী এলিয়ট জ্যাকুইস। ১৯৬৫ সালে এ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন তিনি। বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে মধ্যবয়সের সংকট বা Midlife crisis নিয়ে, কত বছর বয়সে এটা হয়, কাদের হয়, লক্ষণ কি কি- এসবও জানা গেছে। কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে- মিডলাইফ ক্রাইসিস বলে কিছু আছে, সেটিই অনেকে স্বীকার করতে চান না।

মোটামুটি ৪৫ থেকে ৬৫ বছরকে মিডলাইফ ক্রাইসিসের সময় ধরা হয়েছে, আর এ সংকটের প্রধান ভুক্তভোগী পুরুষরা। ৪৫ থেকে ৬৫- মোটাদাগে এ বয়সেই এটি হতে পারে, পুরুষের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ বছর স্থায়ী হয় এটি, আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ বছর।

মিডলাইফ ক্রাইসিস একটি মানসিক অবস্থা, কখনও কখনও তা গুরুতরও হতে পারে, আবার কেউ কেউ যে এই মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তা নিজেরাই বুঝতে পারেন না।
মিডলাইফ ক্রাইসিসের কারণগুলো হচ্ছে- ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়া, বার্ধক্যের ভয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাববোধ, জীবনে যা করার ইচ্ছে ছিল, তা করতে না পারার ব্যর্থতাবোধ, সঙ্গীর সাথে যৌনজীবনের বিচ্ছেদ বা অবসান- ইত্যাদি।

যারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কিংবা প্রাচুর্যে আছেন- তাঁদের ক্ষেত্রে এটি কম দৃশ্যমান হলেও একেবারে নেই- তা নয়। যেমন- যে ব্যক্তি বিত্তবান, কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ, তিনি আসন্ন বার্ধক্য ও জরাগ্রস্ততা নিয়ে চিন্তিত- এমন মানুষের এটা হতে পারে।

এ সংকটের লক্ষণগুলো হচ্ছে- অবসাদ, কাজে স্পৃহা কমে যাওয়া, খিটখিটে স্বভাব, যৌনইচ্ছার অভাব- ইত্যাদি৷ এ সময় অনেকে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেন; নিজের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, শরীরের ওজন কমছে না- বাজে দেখাচ্ছে, চাকুরিজীবনের উপার্জন স্থির নয়, ভবিষ্যতের সঞ্চয় নেই, সন্তান প্রতিষ্ঠিত নয়- ইত্যাদি সমস্যায় অনেকে একে অস্বীকার করে যৌবনের হারানো দিনগুলো ফিরে পেতে চান। পুরুষেরা চেষ্টা করেন কিশোরী, তরুণীদের মন পেতে; নারীরাও এ বয়সে এসে অনেকে যুবকদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই আকর্ষণ এবং প্রচেষ্টা কখনও কখনও সফলতার মুখ দেখে, পারস্পরিক সম্মতিতে তৈরি হয় অসমবয়সী প্রেম এবং কিছু ক্ষেত্রে যৌনসম্পর্ক। এসবই সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে, যদি একপক্ষ বিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে তো কথাই নেই।

বাংলাদেশে বৃদ্ধ বয়সী মানুষদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাঁদের জন্য নানারকম বিশেষ চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি সমাজে তাঁদের অবস্থানের গুরুত্ব ও অধিকার নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানারকম প্রচারণা ও কাজও হচ্ছে।
কিন্তু, মিডলাইফ ক্রাইসিস বা মধ্যবয়সের সংকট নামের যে মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয় বহু পুরুষ ও অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরও, তা নিয়ে আলোচনা ও সমস্যা উত্তরণের পথের সন্ধানের ঘাটতি রয়েছে। বয়স চল্লিশ পার হলে অনেকে নিজ উদ্যোগেই নানারকম শারীরিক পরীক্ষা করান, কিন্তু মানসিক অবস্থা কেউ নিজ বা পরিবার থেকে যাচাই করান না নিতান্ত অসুস্থ না হলে। মিডলাইফ ক্রাইসিসকে রোগ হিসেবে বলতে চান না অনেকেই। তবে, এটির বাস্তব অস্তিত্ব আছে, পরিবারের সদস্যদের সঠিক অবলোকন ও জ্ঞান ছাড়া এটি চিহ্নিত করাও সহজ নয়। সবার আগে এটি জানা দরকার।

হৃদিতা রোশনী:
Related Post