X

IBS: উপসর্গ, কারণ ও প্রতিকার

IBS অথবা Irritable bowel syndrome হচ্ছে মানবদেহের কোলনের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা মূলত কোলনের কিংবা বৃহদান্ত্রের অস্বাভাবিক ফাংশনের কারণে তথা কোলনের স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাতের কারণে হয়ে থাকে।

কোলনের কাজ কি?
কোলন বা বৃহদান্ত্র হচ্ছে মানুষের খাদ্য পরিবহনতন্ত্রের একটি অংশ, যা একদিকে ক্ষুদ্রান্ত্রের সাথে এবং অপরপ্রান্তে রেকটামের সাথে সংযুক্ত থাকে।
আমরা যেইসব খাবার খেয়ে থাকি, তা
পাকস্থলীতে পরিপাক হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যায়, সেখান থেকে শারিরীক চাহিদা মোতাবিক একটি অংশ শোষিত হয়ে রক্তে চলে যায়। বাকি অংশ তরল অবস্থায় বর্জ্য পদার্থ হিসাবে বৃহদান্ত্রে চলে যায়।

কোলনের কিংবা বৃহদান্ত্রের কাজ হচ্ছে তরল বর্জ্য পদার্থ থেকে পানি শোষণ করে এই তরল বর্জ্য থেকে শক্ত মল তৈরি করে রেকটামে পাঠিয়ে দেওয়া। পানির সাথে কিছু ভিটামিন B এবং K শোষিত হয়।

বৃহদান্ত্রের এই পরিবহন কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর বৃহদান্ত্র সংকুচিত (contracton) হতে থাকে, Colon এর এই Contracton এর সময় বর্জ্য পদার্থ সমূহের পরিবহন হয় এবং তা ধিরে ধিরে রেক্টামে চলে যায়। একটি সুস্থ মানুষের বৃহদান্ত্রে এই ধরনের সংকোচনের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, যার কারনে সুস্থ মানুষের মল তৈরি ও মলাশয় পুর্ণ হবার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং তাই তাদের মলত্যাগেরও একটি রুটিন থাকে।

তবে যদি কারো বৃহদান্ত্রের contracton frequency
পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে তার Bowel habit এ পরিবর্তন হয়ে যাবে। বৃহদান্ত্রের স্বাভাবিক কাজ যদি অন্ত্রে কোনো প্যাথলজিক্যাল কারণ ছাড়াই পরিবর্তন হয়ে যায়, যথা কোলনের অভ্যান্তরীন কোনো ইনফ্লামেশন কিংবা প্রদাহ ছাড়াই যদি কোলনের কাজ অস্বাভাবিক হয়ে যায় এবং সেই কারণে যদি bowel habit এ কোনো পরিবর্তন লক্ষ দেখা যায়, তবে এই Dysfuntional colon জনিত bowel habit এর অস্বাভাবিকতা কে irritable bowel syndrome বলে।

IBS এর উপসর্গ
১. Alternating Stool pattern, অর্থাৎ মল ত্যাগের স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন হয়ে যাবে। পূর্বে দিনে দুইবার মলত্যাগ হলে IBS রোগে দিনে তখন ৫-৬ বার টয়লেটে যাওয়া লাগতে পারে, এমনকি আহার করার কিছুক্ষন পরেও মলত্যাগের চাপ আসতে পারে। কারো ক্ষেত্রে IBS এ কেবল এই উপসর্গ বেশি থাকে, তখন এইটাকে বলে IBS-A (Alternating stool pattern)।

২. দীর্ঘস্থায়ী ডায়েরিয়া হতে পারে। যদি ডায়েরিয়া উপসর্গ বেশি থাকে, তাহলে এইটাকে বলে IBS-D।

৩. আবার যদি colon এর Contraction frequency very slow হয়ে যায়, তখন কোষ্টকাঠিন্ন কিংবা Constipation দেখা দেয়। এই প্রকার IBS যেখানে Constipation predominant, তাকে IBS-C বলে।

৪. কারো ক্ষেত্রে কয়েকদিন ডায়েরিয়া আবার কয়েকদিন কোষ্টকাঠিন্ন আবার পুনরায় ডায়েরিয়া দেখা দিতে পারে। আবার কারো কারো শুধু রাত্রে ডায়েরিয়া হতে পারে।

৫. মিউকাস মিশ্রিত মলত্যাগ হতে পারে। রোগী বলবে, আমার আমাশয় হচ্ছে, কিংবা তৈলাক্ত পায়খানা হচ্ছে।

৬. দীর্ঘস্থায়ী পেটে ব্যথা হতে পারে, পেট ফুলে থাকতে পারে। রোগী বলবে, হঠাৎ করে পেট কামড়িয়ে উঠে এবং হঠাৎ পায়খানায় চলে যেতে হয়।

৭. গ্যাস জমতে পারে আবার পায়ুপথে বায়ু নির্গত হতে পারে

৮. খাবার রুচি কমে যেতে পারে

৯. পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে

১০. ওজন কমে যাবে

১১. শারীরিক দূর্বলতা লাগবে, অবসাদগ্রস্ত লাগতে পারে

১২. রাত্রে পরিমিত ঘুম হবে না

১৩. কারো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলেই IBS শুরু হয়। যেমন ময়দার তৈরি খাবার কিংবা বেকারী জাতীয় খাবার, যেইসব খাবারে Gulten থাকে। যা মূলত celiac disease এ হয়ে থাকে।

IBS এর কারণ:
IBS এর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে IBS হয়ে থাকে মুলত Functional abonormality of colon এর কারণে।

আর অস্বাভাবিক ফাংশন নিম্নোক্ত কিছু কারণে হয়ে থাকে:
১. Unknown Etiology

২. ব্রেইন থেকে যদি কোনো কারণে বৃহদান্ত্রে নার্ভ সিগনাল আসতে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে বৃহদান্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে এবং IBS ডেভেলপ হয়।

৩. Post infectious IBS, অর্থাৎ যদি গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে কোনো মাইক্রো অর্গানিজম দ্বারা ইনফেকশন হয়, তাহলে ইনফেকশন পরবর্তী IBS ডেভেলপ হতে পারে। যেমন V.cholerea, E.Coli, S. typhi, rotavirus, এমন কি ডেঙ্গু ইনফেকশন এর পরেও IBS হতে পারে।

৪. Stress Related IBS, দুশ্চিন্তা থেকে কিংবা অতিরিক্ত পেরেশানি, অস্থিরতা, ডিপ্রেশন থাকলে IBS হতে পারে, যেমন কোনো নতুন জায়গায় বাসা নিলে দুশ্চিন্তায় IBS হয়, পরীক্ষার সময়ও দুশ্চিন্তার কারণে IBS এর উপসর্গ দেখা দেয়।

৫. Gut Flora সমূহের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে
IBS হতে পারে।

ইনভেস্টিগেশন:
১. Stoolculture করে কোনো Identifiable ইনফেকশন আছে কিনা তা Exclude করবে।

২. Colonoscopy: Inflammatory bowel disease এর কারণেও IBS এর মত উপসর্গ দেখে দেয়, তাই কোলনস্কপি করে তা শিওর হয়ে নিবে।

ম্যানেজমেন্ট
১. পেশেন্ট কে কাউন্সেলিং করবে যে, এইটা বড় কোনো রোগ না, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন, কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না, রোগী কে যদি নিশ্চিত করা যায় যে এইটা নিরাময়যোগ্য, তাহলে রোগী দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবে এবং ৫০% রোগ মেডিসিন ছাড়াই সুস্থ হয়ে যাবে।

২. সিম্পটোমেটিক ট্রিটমেন্ট দিবে। যথা, ডায়েরিয়া থাকলে Anti- Diarrhoeal Drugs দিবে Constipation থাকলে laxatives দিবে।
Alternating Stool pattern থাকলে Anti-spasmodic কিংবা Anti-cholinergic দিবে।
Antispasmodic এর মধ্যে Drotaverine এবং
Mebeverine ভালো কাজ করে।

৩. দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে Anxiolytic দিবে। যথা Clonazepam অথবা Nortriptyline, Amitriptyline ইত্যাদি।

৪. রোগীকে Gulten জাতীয় জিনিস তথা ময়দার তৈরি জিনিস খেতে নিষেধ করবে।

৫. ফাইবার জাতীয় খাবার যথা শাক শব্জি, ইসুপগুলের ভুসি ইত্যাদি খেতে পরামর্শ দিবে।

৬. পরিমিত ঘুমাতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করবে।

৭. সব সময় হাসিখুশী থাকার চেষ্টা করবে।

সতর্কতা:
IBS হলে নিম্নোক্ত খাবার সমূহ পরিহার করবে, কারণ এই খাবার গুলি IBS এ ক্ষতিকর।
১. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, মিষ্টান্ন খাবার ইত্যাদি।
২. চকলেট, চা, কফি ও অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত খাবার
৩. ময়দা থেকে তৈরী যেকোন খাবার, যথা ময়দার রুটি, বিস্কিট ও অন্যান্য বেকারীজাত খাবার।
৪. যেসব সবজি গ্যাস বাড়ায় যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন ইত্যাদি।
৫. অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার, যথা গরুর গোস্ত, দোকানের পরটা, সিঙ্গারা, কিংবা অন্যান্য তেলে ভাজা খাবার পরিহার করবে।

মোট কথা, যেইসব খাবার খেলে IBS এর উপসর্গ দেখা দেয়, তা পরিহার করবে।

ডা. ইসমাইল আযহারি
DCMC/2013-14

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর

Platform:
Related Post