X

ডা কাওসার আফসানাঃব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি বিষয়ক পরিচালক

দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে কজন নারী নিজেদের আলোকিত করে তুলে ধরেছেন তার মধ্যে কাওসার আফসানা অন্যতম।বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি বিষয়ক পরিচালক হিসেবে।

১৯৫৮ সালের ২৭ নভেম্বর নীলফামারীর এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাওসার আফসানা।তার বাবার নাম আবু নাজেম মো.আলী আর মায়ের নাম আমিনা বেগম।দুইভাই এক বোনের মধ্যে তিনিই ছোট।

কাওসার আফসানার বাবা যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে মাস্টার্স পড়ছিলেন তখন দেশভাগ হয়ে যায়। দেশভাগের পর তিনি আর কলকাতাতে ফিরে যাননি।পরবর্তীতে মাস্টার্স পরীক্ষা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়াও তিনি আইন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করেন।একই ঘটনা ঘটে তার মায়ের ক্ষেত্রেও।কিন্তু কাওসার আফসানার বাবা ও মা গ্রামের মানুষের সেবা করার জন্য আর কলকাতাতে ফিরে যাননি।   বাবা রাজনীতিবিদ,সমাজসেবক এবং মা নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বড় ভাই আসাদুজ্জামান নূর একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য। ছোট ভাই আহাদুজ্জামান মো.আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক।

কাওসার আফসানা নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি পাশ করেন।বেগম বদরুন্নেসা কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন।১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।   ইন্টার্নশিপ ও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে ১৯৮৩ সালে যোগদেন মাছিমপুর হেলথ কমপ্লেক্সে।সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর বদলি হয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদকে।   ১৯৮৫ সালে ইমতিয়াজ আহমেদ কানাডায় পিএইচডি করতে কাওসার আফসানাকে সঙ্গে নিয়ে যান।তারা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।ফিরে এসে কাওসার আফসানা ১৯৯২ সালে ব্র্যাকে গবেষণা ও মূল্যায়নে কাজ শুরু করেন।   এখান থেকেই নতুন করে কর্মজীবন শুরু হয় তার।পরবর্তীতে কাওসার আফসানা ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। অবশেষে ২০১২ সালে যোগ দেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি বিষয়ক পরিচালক হিসেবে।

কাওসার আফসানা কখনো নিজের পড়ালেখা, কখনো স্বামীর পড়ালেখা, আবার কখনো বা অফিসের কাজে ঘুরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র,সিংগাপুর,জাপান,নেপাল,ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপাইন,ইউরোপ,ইতালি,ইংল্যান্ড,ল্যাতিন আমেরিকা,পাকিস্তান,কানাডা,সুইজারল্যান্ড,আফগানিস্তানসহ অসংখ্য দেশ। মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন একেক দেশের একেক রকম সৌন্দর্য। তবে তার সবচেয়ে ভাল লেগেছে লেবানন। লেবানন সম্পর্কে তিনি জানান,দেশটি দেখতে অনেকটা গল্পের মত।দেশটির শহরগুলো পুরাতন কিন্তু নতুনের ছোঁয়া রয়েছে।

কাওসার আফসানার বাবা নিজে কবিতা পড়তেন এবং পরিবারের সবাইকে পড়তে দিতেন।একই সঙ্গে পড়া ও উচ্চারণ দুটোই শেখাতেন।এছাড়া ছোটবেলায় শুক্রবার কোন একটা সময় রেডিওতে নাটক হতো পরিবারের সবাই মিলে সেই নাটক শুনতেন।সিনেমা হলে ইংরেজি কিংবা ভালো কোনো সিনেমা হলে সবাই মিলে দেখতেন।থাকতেন নীলফামারীতে কিন্তু ভালো সিনেমা দেখার জন্য চলে যেতেন রংপুর।

কাওসার আফসানা শুধু কর্মময় জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সংসার-সন্তান ঠিকভাবে সামলে নিয়েছেন।একমাত্র ছেলে শাকিল আহমেদ সিঙ্গাপুর থেকে পড়ালেখা করে ২০১২ সালে  দেশে এসে যোগদান করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে।   দেশের অবহেলিত মানুষকে কাওসার আফসানা কম ভাবেন না।ভবিষ্যতে কিশোরীদের জন্য পার্লার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও বয়স্কদের জন্য নার্সিং হোম খোলার ইচ্ছা রয়েছে তার।

সূত্রঃ বাংলামেইল

rajat:
Related Post