X

“স্মৃতিতে প্রিয় মঈন উদ্দিন স্যার”- ডা. জোবায়ের আহমেদ

লেখা: ডা. জোবায়ের আহমেদ
বুধবার, ১৫ই এপ্রিল, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ

আজকের সকালটা এত ভারী হবে,এতটা কষ্ট ও বুকফাটা আর্তনাদে আমার হৃদয় বিগলিত হবে ভাবিনি।
তবে আমি কেমন যেন প্রস্তুত ছিলাম।
কিন্ত আজই এমন খবরে আমার চোখ ভিজে যাবে ভাবিনি।

অনেক কষ্ট হচ্ছে।
চিৎকার করে কান্না আসছে।

আমাদের প্রিয়জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন স্যার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল ৭.৫০ এ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থেকে ইন্তেকাল করেছেন।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।

একজন সাদামনের সাদাসিধে পরপোকারী, লোকসেবী, মানবিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হারালো জাতি আজ।

যারা চিকিৎসকদের গালি দেন কথায় কথায় তারা কোনদিন কল্পনাও করতে পারবেন না কিভাবে এবং কতটা পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, লেখাপড়া ও ট্রেনিং এর মাধ্যমে একজন মানুষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন, হাজার হাজার রোগী যাদের হাতের কোমল স্পর্শে জীবনের ছন্দ ফিরে পান।

করোনা ভাইরাস নিয়ে Mass Awareness তৈরী করতে সেই জানুয়ারি থেকেই লেখালেখি করছি।
স্যার আমার অনেক লেখা শেয়ার দিতেন।
এই মার্চের ১৮ তারিখ Break the transmission cycle of corona virus শিরোনামের লেখাটাও স্যার শেয়ার দিয়েছিলেন।
আমি স্যারের ওয়ালে গিয়ে সেই লেখাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এতক্ষণ।

লাইভে কথা বলছি।
প্রায়ই দেখতাম
Moyeen Uddin is watching
এই লাইনটা দেখে বুকটা সম্মানে ভরে যেত।
এতবড় একজন মানুষ আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের কথা শুনছেন।

কিছুদিন আগে ক্ষমতার উলঙ্গ প্রকাশ নামে একটা লিখেছিলাম।
তখন স্যার আমাকে ফোন দেন।
অনেক সাবধান করেছিলেন।
বললেন, তুমি যা লিখছো সব সত্য কিন্ত সত্য বলা যে পাপ জোবায়ের।
নীরব থেকে নিজেকে উন্নত করো। নীরবে মানুষের জন্য কাজ করে যাও। ক্যারিয়ারে ফোকাস করো।

আমি পেশাগত জীবনে ২০১৮ এর মার্চ মাসে অনেক বড় বিপদে পড়েছিলাম। একজন ফ্যামিলি প্লানিং এর ভিজিটর এর ভুল ও ভুয়া চিকিৎসায় একজন প্রসূতি মা মারা গেলে আমি ফেসবুকে একটা সচেতনতা মূলক লেখা লিখেছিলাম।
তারপর সব ইতিহাস। সেই ক্রান্তিকালীন দিনগুলোতে স্যার পরম মমতা ও স্নেহ নিয়ে পাশে ছিলেন। সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে মনোবল না হারাতে উৎসাহ দিয়েছেন।

আফসোস।
স্যার যখন কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়ে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে চাইলেন, এই রাষ্ট্র উনাকে একটা এয়ার এম্বুলেন্স দিলো না।
উনি কিভাবে এম্বুলেন্স ম্যানেজ করেছেন, তা আমাদের জানা।
FDSR এর মহাসচিব Shaikh Munna ভাইকে ম্যাসেঞ্জারে টেক্সট দিয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন একটা এম্বুলেন্স ম্যানেজ করে দিতে।

অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে কিন্ত লিখব না। চুপ হয়ে যাব। নীরবে অপেক্ষা করব মৃত্যুর। কিছু দুঃখ নিজের কাছে থাকাই ভালো।

যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদে কি যন্ত্রনা।
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন কি দিয়ে দিবো সান্ত্বনা।

স্যারের দুইটা অবুঝ ছেলে।
চৌধুরী রিফাত জাহান আপুকে পাড়ি দিতে হবে একটা সমুদ্র, মাঝি ছাড়া এই দুইটা অবুঝ ছেলেকে নিয়ে।
আল্লাহ আমাদের প্রিয় মানুষ প্রিয় স্যারকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। স্যারের পরিবার এই শোক কাটিয়ে উঠুন। আপনি আমাদের স্মৃতিতে ভালবাসা ও সম্মানে উজ্জ্বল থাকবেন স্যার।

হৃদিতা রোশনী:
Related Post