X

স্বাস্থ মন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি

মহোদয়,

সেই ছেলেবেলায় একদিন আমার বাবা আমকে আদর করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলতো বাবা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম কি? সেই বয়সে এটা আমার জানার কথা ছিল না। কিন্তু তারপরো আমি আপনার নামটা বলে আমার বাবাকে খুশী করতে পেরেছিলাম। কারন তখন বিটিভিতে আপনার নাম এতবার জপতো যে আমার মত ছোট বাচ্চার কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। এবারো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে হয়তো আপনার নাম দেশের গন্ডী পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পরতো। দেশ ও জাতির বহু কল্যান সাধিত হত। কিন্তু আফসোস আপনাকে বানানো হয়েছে স্বাস্থমন্ত্রী। যেখানে মিডিয়া মাতিয়ে রাখার খুব বেশী সুযোগ নেই। তাইতো দুদিন পর পর ডাক্তারদের মাথা হয়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধেই চমকপ্রদ একেকটা ঘোষনা দিয়ে দেশে হৈঁচৈঁ ফেলে দিচ্ছেন, সবার আলোচনায় থাকছেন। মারহাবা। দারুন টেকনিক।
গতকালকে ঘোষনা দিলেন ডাক্তারদের তিনবছর গ্রামে থাকা বাধ্যতামূলক। বুকে হাত দিয়ে বলুনতো। আপনি কি ডাক্তারদের গ্রামে থাকার জন্যে গেজেটেড অফিসার হিসেবে ন্যুনতম সুযোগসুবিধা তৈরী করতে পেরেছেন?
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেতো মৌলিক অধিকার টুকুই নিশ্চিত করতে পারেন নি। বিদ্যুত থাকেনা, পানি থাকেনা, ভাঙাচোরা ঘর, নেই কোন আসবাব, নেই কোন নিরাপত্তা, নেই কোন যানবাহন সুবিধা, রোগীদের দেয়ার জন্যে নেই তেমন ওষুধ, যন্ত্রপাতি । তারা কতটা কষ্টে সেখানে থাকে সেটা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন? একজন ডাক্তারের জীবনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বিশেষজ্ঞ হবার পথে এভাবে বাধা দিয়ে ডাক্তার সমাজ এবং দেশের জন্যে সুদূরপ্রসারী যে ক্ষতিটা করতে চাইছেন সেটা কি ভেবে দেখেছেন?? কত ডাক্তারের জীবন কতটা দূর্বীষহ হয়ে যাবে, জীবন নিয়ে কত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে একবারো কি ভাববেন না?
গত পাঁচ মাসে ৮ টা উপজেলায় ডাক্তারদের উপরে হামলা হয়েছে। যেগুলো মিডিয়াতে এসেছে। আরো তো অনেক ঘটনা ঘটেছে যেগুলো মিডিওয়ালারা খোঁজও নেয় নি। প্রতিটা ডাক্তার সবসময় ভয়ে থাকে কখন কি ঘটে যায়, কখন লাঞ্ছিত হতে হয়। এই জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যাবস্থা নিয়েছেন আপনি??? এখনো ডা: পবিত্র কুন্ডু পিজিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। আপনার কি উচিত ছিল না একটাবার তাকে দেখতে যাওয়া। দোষীদের বিরুদ্ধে একটা বার হুঙ্কার দেয়া। অথচ সমপর্যায়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার এ অবস্থা হলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছুটে যান। কি লজ্জা আমাদের। আপনি চিকিৎসক সুরক্ষা আইন করবেন বলেছিলেন। সে আইনের কি হলো???
আপনি ডাক্তারদের এপ্রন পড়ে থাকতে বলেছেন। খুব ভাল কথা। তার আগে সেই ঘোষনা দিন যে ডাক্তার ব্যতীত অন্য কেউ এপ্রন পড়তে পারবে না। কই সেটাতো দিলেন না।
আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সন্ধ্যায় রাতে ডিউটি করতে বলেছেন। আপনি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ, বিশেষজ্ঞ অর্থনিতীবিদ তাদেরকে একটু বলে দেখুনতো রাতে ডিউটি করতে। দেখুন কেমন রে রে করে তেড়ে আসে।
প্রতিটা সরকারী চাকরিজিবী পাঁচদিন অফিস করে। আর ডাক্তারদের ছয় দিন এমনকি শুক্রবারেও ডিউটি থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্মঘন্টা কিন্তু সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। অথচ একজন ডাক্তারকে ন্যুনতম প্রায় ৬০ ঘন্টা কাজ করতে হয়। ডাক্তারদের কি মানুষ মনে হয় না আপনার??
দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোর মূল চালিকাশক্তি ইন্টার্নরা। অথচ আমাদেরকে কতটা বঞ্চিত করছেন আপনি। একজন রিক্সাওয়ালাও দিনে সাত আটশো টাকা আয় করে অথচ একজন ইন্টার্নের বরাদ্দ দিনে ৩২৬ টাকা। এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে?! আপনি কি কোন ব্যবস্থা নেবেন না??
হ্যা ডাক্তারদের পক্ষেও আপনি ঘোষনা দিয়েছিলেন। আপনি বলেছিলেন ডাক্তারদের গাড়ি দেয়া হবে। আমরা হেসেছিলাম। এসব ছেলেভোলানো মূলাঝোলানো কথাবার্তা বাদ দিয়ে সত্যিকারার্থে ডাক্তারদের জন্যে কিছু ভাবুন, কিছু করুন। না হলে যে বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ একেকজন ডাক্তারের মনের মধ্যে তৈরী হচ্ছে তা যেকোন সময় মহাবিষ্ফোরণ ঘটাতে পারে। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে চাই ডাক্তাদের স্বার্থে কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ আপনি নেবেন। মনে রাখবেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সূচকগুলো পুরো পৃথিবীর কাছে রোল মডেল হয়ে মাথা উঁচু করে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেসব আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তার প্রায় সবই স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের জন্যে, ডাক্তারদের সাফল্যের জন্যে। তাইতো বলছি যেই ডালে বসে আছেন সেই ডালটাই না কেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।
আপনার সবরকম সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

– ইতি
একজন নবীন ডাক্তার

Banaful:

View Comments (22)

Related Post