X

সেলফিটা না হয় কয়দিন পরেই ফেসবুকে দিস….

” ওকে দোস্ত ভাল থাকিস ” বলে নাহিয়ানের সাথে আলিঙ্গন করে বের হয়ে আসে রনি , ঠিক যেন শেষ বিদায় ;
কিছুটা তড়িঘড়ি করেই রনি বের হয় , চোখের পানিটুকু যেন নাহিয়ানের চোখে ধরা না পড়ে ;
পাঁচ বছর ধরে রুমমেট দুজন ;
এইতো সেদিনও দুজন আলোচনা করছিল , ইন্টার্নিতে দুজন একই ওয়ার্ডে থাকবে যেভাবেই হোক , দুজন মিলে গবেষণা হবে রোগী নিয়ে ;
আজ রনি রুম পেয়ে গেছে ইন্টার্ন হোস্টেলে , চলে যাচ্ছে ;
নাহিয়ান থেকে যাচ্ছে আগের রুমেই ;
একা ;
পার্থক্য শুধু একটা রেজাল্ট , ফাইনাল প্রফে রনি পাস করে গেছে , অথচ নাহিয়ান পাস করতে পারেনি , সার্জারি শর্ট কেস খারাপ হয়েছে ব্যস ;
অথচ ফার্স্ট আর সেকেন্ড প্রফে এক চান্সে পাস করে যাওয়া এই নাহিয়ানই রনিকে কত সাপোর্ট দিয়েছে যখন সে প্রথম দুই প্রফেই খারাপ করেছিল , অথচ আজ রনির কিছুই করার নেই ;
বয়েজ হোস্টেল আর ইন্টার্ন হোস্টেল আলাদা , পাঁচ বছরে প্রথমবারের মত দুজন দুই রুমে ; রনি ব্যস্ত হয়ে পড়বে হসপিটালে ;
.
——————–
ছয় মাস পিছিয়ে যাওয়া নাহিয়ানের এখন এন্টিডিপ্রেসেন্ট খেতে হয় প্রতিদিন , ও তো এমন খারাপ স্টুডেন্ট ছিল না , আর প্রতিদিন তার ব্যাচমেটদের আপলোড করা ইন্টার্ন লাইফের আনন্দগুলো তার বুকে কাঁটার মত বিঁধে ডিপ্রেশনকে বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও শতগুণ ;
.
.
………………………………..
.
এই নাহিয়ান আমাদের প্রত্যেকের ব্যাচেই আছে , হয়ত আমার রুমমেট , বা নিজ ব্যাচের ;
.
একটা ইনবক্সের কথা বলি , একজন নাহিয়ান এর ইনবক্স –
” ভাই কিছু মনে করবেন না , বারবার বলতে যেয়েও থেমে গেছি একটা
বিষয়ে। কারন আমি ডাক্তার হতে পারিনি।
আমার মত আরো অনেকেই আছে। যাদের
প্রতিনিয়ত ফেসবুকে বন্ধুদের ইন্টার্ন
হিসেবে এইটা করছি, ঐটা করছি। এইখানে
সেলফি, ঐখানে সেলফি। দেখতে খারাপ লাগে
না বন্ধুদের আনন্দ। কিন্তু যদি প্রায় সবাই
সকাল-সন্ধ্যা-রাত তিনবেলা করে
ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকে তাহলে
বিরক্তই লাগে। বিরক্তি থেকে বেশি যেটা
অনুভূত হয় সেটা হলো “নিজেকে অনেক
ছোট /খারাপ ছাত্র মনে করা”
—————
আচ্ছা আমাদের নাহিয়ান কেমন আছে ? জানতে ইচ্ছা হয়েছে কখনও ?
অথবা ওয়ার্ড শেষে যখন নদীর পাড়ে একটু হাওয়া খেতে যাচ্ছি , কখনও কি মনে হয়েছে – নাহিয়ান তো আমাদের সাথে যেত , ডাক দেই না ওকে , জানি পড়াশোনা আছে , তাও , যদি একটু ফ্রি থাকে ?
.
আচ্ছা তোরা নাহয় গেলিই মুকুলের চা খেতে , ডাক দে না নাহিয়ানকে , আধা ঘন্টাই নাহয় নষ্ট হবে ;
নাহিয়ান নাহয় যেতে চাচ্ছে না পড়ার অজুহাতে , দে না সেই গালি , দোস্তকে দেওয়া সেই পাঁচ বছরের বাসি গালি যেটা বুকের একদম ভেতর থেকে আসে ;
তাও যেন ও মনে না করে ও ফেল করে আলাদা হয়ে গেছে , যেন ভুলে যায় কিছুক্ষণের জন্য দুজন দুই হোস্টেলে থাকিস ;
.
আজকের তোলা আনন্দঘন মুহূর্তের সেলফিটা মেমরি কার্ডেই থাক না ;
একটু অপেক্ষা করতে পারবি না নাহিয়ান এর জন্য ?
একটু ?
ও আসুক না যুদ্ধটা জয় করে ,,,,
.
.
এরপর নাহয় স্টেথোটা গলায় ঝুলিয়ে দুজন মিলে সেলফিটা তুলিস ? ? ?

লিখেছেন: ডা. যুবায়ের আহমেদ

Banaful:

View Comments (12)

Related Post