X

সিলেটের সেই ভুয়া “সর্বরোগের’ চিকিৎসক” গ্রেফতার

কোনো রোগের চিকিৎসাই যেন ছেড়ে যায়নি তাকে। মেডিসিন, চর্ম, যৌন, পাইলস, পলিপস, হাঁপানি, বাত-ব্যথা, টিউমার, মা ও শিশু রোগে রয়েছে তার ‘চরম’ অভিজ্ঞতা।

দেশ-বিদেশ থেকে অর্জিত একাধিক ডিগ্রি। অসংখ্য রোগে পারদর্শি। সাইনবোর্ডে লেখা থেকে বাদ যায়নি কোনো কিছুই। এমন ‘বিরল’ চিকিৎসক এম.এ.এম ভূঁইয়া। যার অবস্থান সিলেটে।

রোগীদের আকৃষ্ট করতে এমবিবিএস, এম.সিএইচ, বি.ইউ.এ.এস.এম(ঢাকা), এফ.আর.এস.টি.এম অ্যান্ড এইচ (লন্ডন) এমন অসংখ্য ডিগ্রি সাইনবোর্ডে তুলে ধরেছেন।

রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার দত্তগাতি গ্রামের সামসুল হুদার ছেলে কথিত ডা. এম.এ.এম ভূঁইয়া।

তার বর্তমান আবাসস্থল নগরীর লামাবাজার ভিআইপি সড়ক সংলগ্ন লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পাশে ছায়াতরু ৩০ বাসায়। এখানে চেম্বার বসিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আরেকটি চেম্বার রয়েছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রবাসী অধ্যুষিত গোয়ালাবাজারে গয়াছ মিয়া ম্যানশনে।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল)সিলেট জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খোঁজ মেলে ‘সর্বরোগের’ এই চিকিৎসকের।

দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি ও মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ধরা পড়ে কাঁদলেন ‘কথিত’ চিকিৎসক এম.এ.এম ভূঁইয়া। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন। সংশ্লিষ্ট আইনে মামলার বিপরীতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পেলেন মুক্তি।

সরেজমিন চেম্বারের অভ্যন্তরে ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ সাইনবোর্ডটিও দৃষ্টি কাড়লো বেশ। কনসালটেন্সি ফি ৫০০ টাকা। রোগী না দেখে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয় না। প্রতিটি চিকিৎসাই প্যাকেজে করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন কেউ যদি শর্ত ভঙ্গ করে চলে যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

এসব নির্দেশনার পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য চিকিৎসা ও টাকার পরিমাণ। এরমধ্যে চেম্বারে খৎনা জনপ্রতি ২ হাজার ৫শ’ এবং বাড়িতে ৩ হাজার। নিকটবর্তী কল(১কিলোমিটারের ভেতরে) এক হাজার, কিলোমিটারের ওপরে দুই হাজার। ডায়বেটিস পরীক্ষা ১শ’। আর গর্ভ পরীক্ষা ১শ টাকা।

রোগী দেখার পাশাপাশি কেমিকেল ব্যবহার করে নিজেই তৈরি করেন ওষুধ। অভিযানকালে সেসব ওষুধ জব্দ করে ধ্বংস করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া ওই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ ‘বিসিএমডিসি রেজি: নং-০৫৫০৭’ রেজিস্ট্রেশনও বাংলাদেশের নয়, ভারতের কোনো এক প্রতিষ্ঠানের-স্বীকার করেন এম.এ.এম ভূঁইয়া। তবে প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করতে ব্যর্থ হন তিনি।

অভিযানকালে চেম্বারে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী বলেন, এই চিকিৎসকের ওষুধে কোনো উপকার পাননি। তবে, একাধিক বার দেখাচ্ছেন, যদি ফলাফল পাওয়া যায় এই আশায়।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় কোনো এক প্রতিষ্ঠান স্বীকৃত লাইসেন্স ব্যতিত অন্য কোনো সনদ দেখাতে ব্যর্থ হন। লাইসেন্স বাতিল না হওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে তার প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা যায়নি-বলেন এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

তবে, চিকিৎসা আইনে রোগের বর্ণনা দিয়ে লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করে ওষুধ বিক্রির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরক্রমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সহায়তা করেন ড্রাগ সুপার শফিকুর রহমান, জেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর স্নিগ্ধেন্ধু সরকার।

 

তথ্য ঃ বাংলানিউজ২৪.কম

Ishrat Jahan Mouri: Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

View Comments (2)

Related Post