X

সত্যিই ! বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোঁড়ায় গলদ।

একটি দেশের, সমাজের ব্যবহৃত ভাষা, লোকাচার, ধ্যান ধারণা থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারা যায়। আমাদের “নিজের নাক কাটিয়া পরের যাত্রা ভঙ্গ” প্রবাদটা কি এমনি চালু?

শিক্ষাব্যবস্থায় যখন কুশিক্ষিত লোকেরা যুক্ত থাকে এবং কারা কীভাবে শব্দ ব্যবহার করছে, কেন করছে, কতোটা চিন্তা করে করছে তা যদি চিন্তকেরা নিয়ন্ত্রণ না করেন তবে নানান রকমের উদ্ভট ধারণা নিয়ে বড় হবে শিশু কিশোরেরা। বাংলা পাঠ্য বইতে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বোঝাতে গিয়ে যে উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেখানে ডাক্তার জাহেদ সাহেব একজন লোভী মানুষ। সারা জীবন টাকার পিছনে ছুটেছেন। অন্যদিকে তাঁর বন্ধু সগীর সাহেব তাঁর ধন সম্পদ থেকে বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেন। এখানে সগীর সাহেবের পেশা উল্লেখ নাই কেন?

 

প্রশ্ন তো হতেই পারে সগীর সাহেব ধন-সম্পদের মালিক হলেন কী করে? তিনি যদি শিক্ষিত সরকারী চাকুরীজীবী হন তাহলে বাংলাদেশের বেতন কাঠামোতে তাঁর তো ধন সম্পদ হবার কথা নয়। তিনি যদি সাংবাদিক হন, রাজনীতিবিদ হন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, পুলিশ অফিসার বাঁ আর্মি অফিসার হন তাহলেও তো সৎ-ভাবে ধন-সম্পদের মালিক হবার কথা না। তিনি কি ঘুষ খেয়ে সম্পদের মালিক তাহলে? আর কি বাকি থাকে? ব্যবসায়ী? লুটেরা, ঋণ-খেলাপি, ভূমিদস্যু কতকিছু হয়ে ধনসম্পদের মালিক তাঁরা।

তাহলে একজন ডাক্তারকে কেন লোভী ডাক্তার দেখানো হলো? কোন গর্দভ লিখেছে এইসব বাংলা বিভাগের প্রশ্নপত্র, তাও আবার সৃজনশীল বিভাগের?!!!

বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে একজন সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্রছাত্রী অন্যদের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে একটি এমবিবিএস ডিগ্রী পায়। তারপর দিনের পর দিন বিনা বেতনে কাজ করে, পড়ালেখা করতে করতে নানান রাজনীতির প্রভাব কাটিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে যখন একটু স্বচ্ছলতার মুখ দেখে তখন তাঁদের মধ্যবয়েস পার হয়ে যায়। সেই সময় টাকা কামানো কিন্তু অন্যের উপকার করা। একজন মূমুর্ষ রোগীকে মধ্য রাতে হয়তো বাঁচাতে হয়, ডাক পড়লে সংসার ফেলে ছুটে যেতে হয় হাসপাতালে, তখন আপনার বা আপনার আত্নীয়ের কোন বাচ্চা বা প্রিয়জনের জীবন বাঁচাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু দিন শেষে তিনি হয়ে যাচ্ছেন লোভী?

 

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান। একজন ডাক্তার কে দ্বিতীয় ঈশ্বরের মতো সম্মান করে মানুষ। শুধু সম্মান নয়, অর্থ-বিত্তের দিক থেকেও তাঁরা বেশি সম্মানী পেয়ে থাকে। সেখানেও খারাপ ডাক্তার আছে, তাঁর জন্যে আইন আছে। বাংলাদেশেও খারাপ, লোভী ডাক্তার আছে; তাঁদের জন্যে আইন করে সেইসব দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু গুটিকয়েক লোকের জন্যে একটি মেধাবী সম্পদ গোষ্ঠী যারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে একটি উচ্চ মানের মানব সম্পদ তৈরি করতে সাহায্য করবে তাদেরকে হেয় করে লাভ কার? লক্ষ লক্ষ ভবিষ্যৎ মেধাবী ডাক্তার, বর্তমানের তরুণ মেধাবীরাও এই গয়রহ স্টেরিওটাইপের জন্যে সমাজে ঘৃণিত থাকবে। এই কি প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য?

 

সত্যি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোঁড়ায় গলদ। এইসব মূর্খ, নীতিহীন, প্রশ্নকর্তারাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বারোটা বাজিয়েছে। আর এইসব গাড়লদের হাতে-পড়ে নষ্ট হচ্ছে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ; তৈরি হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘৃণাবোধ। অথচ ডাক্তারির মতো পেশা, শুধু পেশা নয়; একটি উন্নত, স্বাস্থ্যবান জাতি তৈরির জন্যে একেবারেই আবশ্যক। এইসব মূর্খদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত, সকলের।

 

লেখক ঃ ডা. সেজান মাহমুদ,Professor of Medicine at University of Central Florida College of Medicine

Ishrat Jahan Mouri: Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

View Comments (1)

  • It is a wrong idea that other professionals except medical doctors cant be rich without making corruption.

Related Post