X

শ্বাসকষ্টঃ হিস্ট্রি থেকে সম্ভাব্য ডায়াগনোসিস

শ্বাসকষ্ট

হিস্ট্রি থেকে সম্ভাব্য ডায়াগনোসিস

১ শ্বাসকষ্ট কতক্ষণ/কত দিন?
-হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট
-কয়েক ঘন্টা/কয়েক দিন
-অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে
-মাঝে মাঝে হয়

২ শ্বাসকষ্টের ধরন?
-বুক ভার/চাপ লাগা
-দম বন্ধ লাগা
-নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
-লম্বা/গভীর শ্বাস, লম্বা শ্বাস নিতে না পারা
-দ্রুত শ্বাস/অস্বাভাবিক ছন্দে শ্বাস

৩ শ্বাসকষ্ট কখন হয়?
-রাতে শোবার পর(বিকল্প প্রশ্ন ঘুমাতে উঁচু/একাধিক বালিশ
লাগে?)
-শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে ঘুম ভাঙ্গে
-বাড়তি পরিশ্রম করলে(বিকল্প প্রশ্ন হাঁটলে/সিঁড়ি ভাঙলে হাঁপিয়ে
উঠেন?)

৪ শ্বাসকষ্টের সাথে অন্যান্য উপসর্গ?
-বুক ব্যথা
-বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম, বমিভাব
-কাশি, কাশির সাথে রক্ত, জ্বর
-অতিরিক্ত ক্লান্তি
-মুখ ফুলে যাওয়া, চুলকানী

৫ শ্বাসকষ্টের সাথে পূর্বে কোন সম্পর্কিত অসুখ, ইনহেলার ব্যবহার,
অপারেশন?

৬ নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা- গর্ভবতী, অতিরিক্ত ওজন?

৭ রোগী একটি পূর্ণ বাক্য একটানা বলতে পারে? (অজ্ঞান বা
অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের রোগীর ক্ষেত্রে)
-কোন আঘাত পেয়েছে
-দূর্ঘটনাবশত কোন কিছু গিলে ফেলেছে যা শ্বাসনালীতে পৌঁছায়
-পোকার কামড়, ধোঁয়া, এলার্জি জনিত কারণ
-মানসিক দুশ্চিন্তা আছে
-আগে থেকে কোন শ্বাসকষ্ট ছিল

উপসর্গ এবং হিস্ট্রি থেকে শ্বাসকষ্ট থেকে সম্ভাব্য ডায়াগনোসিসঃ

১ কাশি+মিউকয়েড স্পুটাম+ধূমপায়ী+ বাড়তি পরিশ্রম করলে/হাঁটলে/সিঁড়ি ভাঙলে/রাতে শোবার পর+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট= সিওপিডি(৪০ বছর বয়সের বেশী পুরুষ রোগী)

২ কাশি+ট্রিগারিং ফ্যাক্টরস(ধূলো, ব্যায়াম, ঠাণ্ডা বাতাস, অন্যান্য এলার্জেন)+হুইজ=সকালে/রাতে বাড়ে+বুকে চাপ/ভার লাগা মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট=এজমা

৩ শুকনো কাশি+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=ডিপিএলডি(সাবেক আইএলডি)

৪ আঘাত/ পূর্বের ফুসফুসের অসুখ+বুকে ব্যথা+হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=নিউমোথোরাক্স(কম ওজনের লম্বা কম বয়স্ক পুরুষ রোগী)

৫ কাশির সাথে রক্ত+ওজন হ্রাস+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=ব্রংকোজেনিক কারসিনোমা(লোবার কলাপ্স)(বয়স্ক রোগী)

৬ কাশি+ বুকে ব্যথা যা কাশি/লম্বা নিঃশ্বাস নিলে বাড়ে+জ্বর(নিউমোনিয়া,টিবির কারণে হলে)+বুকে ভার লাগা শ্বাসকষ্ট=ম্যাসিভ প্লুরাল ইফিউশন

৭ বুকে ব্যথা যা কাশি/লম্বা নিঃশ্বাস নিলে বাড়ে+কাশির সাথে রক্ত+মাথা ঘোরানো+অজ্ঞান হওয়া+রিস্ক ফ্যাক্টর(সাম্প্রতিক সার্জারি, দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী, ডিভিটি, ক্যান্সার)+দম বন্ধ লাগা শ্বাসকষ্ট=পালমোনারি এম্বোলিজম(ম্যাসিভ/একিউট)

৮ পূর্বে বুক ব্যথা/বুক ধড়ফড়/অতিরিক্ত ঘাম/বমিভাব(হৃদরোগ)+অতিরিক্ত ক্লান্তি+রাতে শোবার পর+কয়েক ঘন্টা/দিনে বুকে চাপ লাগা শ্বাসকষ্ট=লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফেইলর(এম আই/এরিথমিয়ার কারণে)

৯ লালচে ফেনা জাতীয় কফ+লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফেইলর এর হিস্ট্রি ও উপসর্গ=পালমোনারি ইডিমা

১০ বুকে ব্যথা+বুক ধড়ফড়+অজ্ঞান(মাঝে মাঝে)+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট= পালমোনারি হাইপারটেনশন

১১ পা ফোলা/পেটে পানি আসা+ রাতে শোবার পর+ শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে ঘুম ভাঙ্গে+অস্বাভাবিক ছন্দে শ্বাস(নিঃশ্বাস ধীর হতে হতে কয়েক সেকেন্ড বন্ধ থাকে এরপর দ্রুত নিঃশ্বাসঃ চাইন স্টোকস রেস্পিরেশন)+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=ক্রনিক হার্ট ফেইলর

১২ বাড়তি পরিশ্রমে বুকে ভার/চাপ লাগা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=এনজাইনা ইকোয়াভ্যালেন্ট(যখন এম আই এর একমাত্র উপসর্গ শ্বাসকষ্ট থাকে তাকে এনজাইনা ইকোয়াভ্যালেন্ট বলে)

১৩ বুক ধড়ফড়+দূর্বল লাগা+মাথা ঘোরানো+বুকে ব্যথা/অস্বস্তি+অজ্ঞান(সব সময় নয়)+মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট=এরিথমিয়া

১৪ বুকে ব্যথা+বুক ধড়ফড়+অজ্ঞান(মাঝে মাঝে)+অতিরিক্ত ক্লান্তি+কাশির সাথে রক্ত+ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=মাইট্রাল স্টেনোসিস (এছাড়া এমআর, এএস অর্থাৎ ভালভুলার হার্ট ডিজিসে শ্বাসকষ্ট হয়) (গর্ভবতী অবস্থায় শ্বাসকষ্ট বেশী বাড়ে)

১৫ অজ্ঞান+হাত পা অবশ+দ্রুত শ্বাস ও লম্বা শ্বাস নিতে না পারা+হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=সাইকোজেনিক/কনভার্সন ডিসোর্ডার(বিশ্রামের সময় হয়, ঘুম ঠিক থাকে, কম বয়স্ক মহিলা রোগী)

১৬ মুখ ফুলে যায়+চুলকানি+ট্রিগারিং ফ্যাক্টর(পোকার কামড়,খাবার, প্রসাধনী, ওষুধ)+দ্রুত শ্বাস+হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=এনাফাইলেক্সিস

১৭ পূর্ববর্তী অসুখ+লম্বা/গভীর নিঃশ্বাস প্রস্বাস+নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কয়েক ঘন্টা/দিনে হওয়া শ্বাসকষ্ট=মেটাবোলিক এসিডোসিস(কুসমাউল রেস্পিরেশন বলে, কুসমাউল সাইন নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে প্যারাডোক্সিকাল জেভিপি বাড়ার সাথে সম্পর্কিত)

১৮ বমি/বমি ভাব+অতিরিক্ত প্রস্রাব/তৃষ্ণা/দূর্বলতা+পায়ে ক্র্যাম্প+ঝাপসা দৃষ্টি+পেটে ব্যথা+দ্রুত শ্বাস+কয়েক ঘন্টা/দিনে হওয়া শ্বাসকষ্ট=ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস(কম বয়স্ক নতুন ডায়াগনোসিস হওয়া টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রোগী)

১৯ অজ্ঞান রোগী/সম্প্রতি অপারেশন/সম্প্রতি স্ট্রোক+দূর্ঘটনা বশত কিছু গিলে ফেলা যা শ্বাসনালীতে পৌঁছে+দম বন্ধ লাগা হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=এস্পিরেশন অফ ফরেন বডি/গ্যাস্ট্রিক কন্টেন্ট

২০ জন্মগত বুকের আকৃতিগত ত্রুটি+ঘুমের মাঝে বাড়ে+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=কাইফোস্কোলিওসিস (চেস্ট ওয়াল এবনর্মালিটি)

২১ সকালে মাথা ব্যথা+পূর্বের অসুখ+শ্বাসকষ্ট=মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজিস
ক) জন্মগত/শিশুকাল+কাঁধ/কোমড়ের মাংসপেশির দূর্বলতা+মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া+মাঝে মাঝে হওয়া শ্বাসকষ্ট=মাস্কুলার ডিস্ট্রফি
খ) পরিশ্রমের পর মাংসপেশীর দূর্বলতা(চোখের পাতা, কথা বলতে, গিলতে অসুবিধা)+ পূর্বে থাকা অসুখে হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিস
গ) প্যারালাইসিস পা থেকে পর্যায়ক্রমে উপরের দিকের মাংশপেশীতে উঠতে থাকে+কয়েক ঘন্টা থেকে ৪ সপ্তাহের মাঝে হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে=গুইয়ান ব্যারেই সিন্ড্রোম(! জিবিএসের সঠিক উচ্চারণ সম্ভবত এটি)

২২ অতিরিক্ত দূর্বলতা+দৈনন্দিন কাজে অধিক ক্লান্তি+বুক ধড়ফড় করা+মাথা ঘোরানো(বিশ্রামে কমে)+ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট=এনিমিয়া

২৩ এস্পিরেশন অফ গ্যাস্ট্রিক কন্টেন্ট/ধোঁয়া শ্বাসনালীতে যাওয়া/নিউমোনিয়া/পানিতে ডুবে যাওয়া+এসকল রোগীর(সেপসিস সহ) এক সপ্তাহ পর হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট=এআরডিএস(একিউট রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম)

এছাড়া গর্ভবতী, অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তি, হিউজ এসাইটিসের রোগীর মেকানিক্যাল ইমপেয়ারম্যান্ট অফ ডায়াফ্রামের জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে। নিউমোনিয়া, ভাইরাল রেস্পিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, রাপচার অফ এওর্টিক এনিউরিসমেও শ্বাসকষ্ট হয়।

মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের শেষের দিকে একটি হেলথ ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার দ্বিধা দেখে একজন সিনিয়র চিকিৎসক প্রথম শিখিয়েছিল জ্বরের রোগী যদি শর্দি/ঠান্ডা কমপ্লেইন করে তবে সেটা ভাইরাল ফিভার, শর্দি ছাড়া অন্য কিছু কমপ্লেইন করলে ব্যাক্টেরিয়ার কারণ থাকতে পারে যদি ফোকাল সাইন যেমন প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কাশি ইত্যাদি পাও। এই গল্পটা এখানে জুড়ে দেবার মানে হলো, ততদিনে এনাটমি, ফিজিওলজি থেকে শুরু করে মাইক্রো প্যাথো পড়লেও সেটা প্র্যাক্টিক্যাল ফিল্ডে ব্যবহার করার মত পরিষ্কার ধারণা যোগাড় করে উঠতে পারিনি।

এই পোস্টটি আশা করি সকল থার্ড ইয়ার থেকে শুরু করে ইন্টার্ন, এমনকি যারা নতুন জিপি প্র্যাকটিস করেন তাঁদের কাজে লাগবে। যে কোন রোগীর ইতিহাস নেবার সময় যদি চিফ কমপ্লেইন শুনে আমরা মনে মনে একটা সম্ভাব্য রোগের তালিকা তৈরি করি, সে তালিকায় মোস্ট লাইকলি সিস্টেম ধরে যদি প্রশ্ন করি তবে ডায়াগনোসিসের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হবে।

একাডেমিকালি এখনো নভিস, প্র্যাক্টিসের অভিজ্ঞতাও তেমন নেই। কেবল মাত্র ৮-১০টি টেক্সট বই থেকে পড়ে এ লেখাটি তৈরি করা। এখানে আমার শিক্ষকেরা আছেন, কোন ভুল করলে ক্ষমা এবং শুধরে দেবার অনুরোধ করছি।

চট্টগ্রামের ভাষায় শ্বাসকষ্টকে সম্ভবত “নিয়াস বড় হই যাই” বলে, কোথাও কোথাও “শ্বাসটান,” “হাসানি” বলে। আপনি যদি আর কোন আঞ্চলিক ভাষায় শ্বাসকষ্ট শব্দটি জেনে থাকেন দয়া করে জানান। চীফ কমপ্লেইনে ডিসনিয়া বলা যাবে না সম্ভবত, ব্রেথলেসনেস আউটডেটেড টার্ম, স্যারেরা শর্টনেস অফ ব্রেথ(এস ও বি শর্ট ফর্ম) শুনতে চান।

পূর্ববর্তী লেখা, “কাশি” এর লিংকঃ https://www.facebook.com/groups/platform.bd/permalink/880465218759605/

চমেক ২০০৫-৬, ৪৮ তম প্রজন্ম
স্বত্ব প্ল্যাটফর্ম

drferdous:
Related Post