X

ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্য: কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ও চোখের সুরক্ষা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ জুন ২০২০, শনিবার

কোভিড ১৯ মহামারী নিয়ে সবাই এখন চিন্তিত। দ্রুতই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিল স্বাস্থ্য নির্দেশনার কথা। এই নতুন ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আসলেও কতটুকু সফল এই স্বাস্থ্যবিধি?

বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল The lancetএ প্রকাশিত নতুন গবেষনায় মেটা এনালাইসিস করে সায়েন্টিফিক লিটারেচার থেকে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য সমন্বয় করে একদল গবেষক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে- কমপক্ষে এক মিটার সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মুখে মাস্ক পড়লে এবং চোখের সুরক্ষার জন্য চশমা পড়লে কমিউনিটি বা হাসপাতালে উভয় ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই হ্রাস পায়। এই গবেষনাতে গবেষক দল ১৭২টি পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই সিধান্ত দিয়েছেন। প্রথমবারের মতো গবেষকরা কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি এবং হেলথ কেয়ার সেটিংস উভয় ক্ষেত্রে এ সকল সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বোত্তম ব্যবহার পরীক্ষা করে দেখেছেন। তবে দুঃখের বিষয় এই ইন্টারভেনশনগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারেই কমিয়ে আনলেও, কোনোটিই সংক্রমণ থেকে ১০০% সুরক্ষা দেয় না।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ হ্রাস করতে শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে অনেক দেশ এবং অঞ্চল বাকী সবার মতের বিরোধিতা করে আসছে। এছাড়াও, সাধারণ জনগনের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং চোখের আচ্ছাদন কোভিড-১৯ সংক্রমণ হ্রাস করতে পারে কিনা এবং হেলথ কেয়ার সেটিংসে মাস্কের সর্বোত্তম ব্যবহার কী হবে তা নিয়ে মহামারী চলাকালীন বিতর্কতো চলছেই।

বিজ্ঞানীরা একরকম নিশ্চিত করেই বলছেন যে, কোভিড-১৯ সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেট দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত মানুষ যখন হাঁচি এবং কাশি দেয় তখন তা চোখ, নাক এবং মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, তবে তা আগে থেকে ভাইরাস আছে এমন জিনিস স্পর্শ করার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। বিতর্ক চলছে বাতাসে ভেসে ভেসে ছড়ানো নিয়ে।

THE LANCET এর Twitter বার্তায় দেওয়া ছবি

গবেষকদল তাদের ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য প্রাথমিক ভাবে নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া দিয়ে ১৭২ টি গবেষণাপত্রের মধ্যে ৪৪টি গবেষণাকে নির্বাচন করেছেন। সম্মিলিতভাবে এই গবেষণাগুলোতে ২৫,৬৯৭ জন অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।এই ৪৪ গবেষনার মধ্যে ৭টি সমীক্ষা কোভিড-১৯ এর উপর (৬,৬৭৪ জন অংশগ্রহণকারী), সার্স- এর উপর ২৬টি (১৫,৯২৮ জন অংশগ্রহণকারী), এবং মার্স এর উপর ১১টি (৩,০৯৫ জন অংশগ্রহণকারী) । ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে কোভিড-১৯ সমীক্ষাগুলি আলোচ্য তিনটি ইন্টারভেনশনের জন্য যে উপকারের কথা জানিয়েছে তা সার্স ও মার্স এর সমীক্ষার জন্যও প্রায় একই রকম।

শারীরিক দূরত্ব এবং ভাইরাস সংক্রমণের উপর আলোচনা করেছে এমন নয়টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে ১ মিটারের বেশি দূরত্ব বজায় রাখলে ১ মিটারের কম দূরত্ব বজায় রাখার তুলনায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কোনো ব্যক্তি যখন সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে এক মিটারের বেশি দূরে দাঁড়ায় তখন সংক্রমণের ঝুঁকি ৩%, আর যদি এক মিটারের মধ্যে থাকে, তবে ১৩%। গবেষকদের মতে, শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে তাদের প্রমাণগুলির দৃঢ়তা মাঝারি ধরনের এবং আলোচ্য কোন গবেষণাতেই কোনো পরীক্ষায় ২ মিটারের বেশি দূরত্ব কতটুকু বেশি কার্যকর, আদৌও তা উল্লেখযোগ্য কিনা তা পরিমাণগতভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি।

ক্রমবর্ধমান দূরত্বের সাথে আপেক্ষিক ঝুঁকিতে পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান দূরত্বের সাথে নিশ্চিত ঝুঁকিতে পরিবর্তন

৩০টি গবেষণা (তিনটি ভাইরাস নিয়ে ৩,৭১৩জন অংশগ্রহণকারী সহ) চোখের সুরক্ষার উপর বিচার করে দেখা গেছে যে- ফেস শিল্ড, গগলস এবং চশমা- সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমায়। (চোখের সুরক্ষা সরঞ্জামাদি পরা অবস্থায় সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল ৬% যা চোখের সুরক্ষা না পরা অবস্থায় ১৬% )। গবেষকরা বলেন, চোখের সুরক্ষার এক্ষেত্রে প্রমাণগুলির দৃঢ়তা তুলনামূলক কম।

১০ টি গবেষণার প্রমাণ (তিনটি ভাইরাস নিয়ে ২,৬৪৭ জন অংশগ্রহণকারীসহ) সাধারণভাবে ফেস মাস্কের জন্য একই রকম উপকারিতা পেয়েছিল (মাস্ক পরা অবস্থায় সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি ৩% বনাম ১৭% যখন মাস্ক পরা হয়নি) গবেষণায় প্রমাণগুলি মূলত পরিবারের এবং কেস গুলোর সংস্পর্শের ভিত্তির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এটির দৃঢ়তাও তুলনামূলক কম।

কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহ-গবেষক কার্লা সলোর বলেন, “যদিও আমাদের ফলাফলগুলি মাঝারি এবং কম নিশ্চিততর প্রমাণ সরবরাহ করে, তবে এটিই COVID-19 থেকে সরাসরি প্রত্যক্ষ তথ্য বিশ্লেষণ করে করা এই সংক্রান্ত সর্বপ্রথম গবেষণা এবং তাই এটিই বর্তমানে প্রাপ্ত সর্বোত্তম প্রমাণ।”

এতে সন্দেহ নেই যে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান নীতিমালা প্রনয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তবে, সকল গবেষনার মত এই গবেষণাটিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে নন-হেলথ কেয়ার সেটিংসে কিছুসংখ্যক গবেষণা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, কারণ বিশ্বে এ ধরনের গবেষণাই অপ্রতুল। বেশিরভাগই আবার SARS এবং MERS এর অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া।

কোভিড-১৯ নিয়ে এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক যা কিছু প্রকাশ হয়েছে তারমধ্যে এই গবেষণা একটি। এই গবেষণার প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্বই আসলে এই কোভিড ১৯ সংক্রমণ রোধে মানুষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
তথ্যসূত্র/ The lancet, Scitechdaily
মূল গবেষণা :DOI: 10.1016/S0140-6736(20)31142-9

Ruhana Auroni:
Related Post