X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে নাইনটি টু

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ জুলাই ২০২০, শনিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

এক সরকারি অফিসের কথা শুনলাম। খুব বেশি বাইরের মানুষের আনাগোনা নেই। সীমিত আকারে অফিস চলছে। কিন্তু কর্মকর্তাবৃন্দ এতো সচেতন- এতো সচেতন- যে সবাই টাইট মেডিকেল মাস্ক পরে বসে থাকেন। ফেস শিল্ড পরেন, মোটা গগলস পরেন, গ্লাভস পরেন। বস সাধারণত টাকা হাত দিয়ে স্পর্শ করেন না। তার পিয়ন এসে উঠিয়ে নিয়ে যায়, তিনদিন রোদে শুকায়। তিনদিন পরে সেটা মানিব্যাগে ঢোকে। দৈনিক পত্রিকাও তাই। সকালের রোদে আগে পবিত্র করে নেওয়া হয়। করিডোরে বাঁকে বাঁকে স্যানিটাইজার, স্প্রেয়ার, টিস্যু। লোকে বোতলের পেট টিপে হ্যাক্সিসল ঢালে- যেন প্রতিবার হাত ধোয়া নিশ্চিত হয়। সবার বায়োলজিকাল ক্লক ত্রিশ মিনিটে সেট করা। গ্লাভস না পরলে ত্রিশ মিনিট পরপর হাত ধোয়, টেবিল মোছে।

ছবি – প্রতীকী

অথচ বায়ুবাহিত অসুখ ঘোষণা হওয়া মাত্র অনেক প্রেসক্রিপশন বদলে যাবে। এতোদিন লকডাউনে থাকার পর এখন জানা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি- ঘরেতে! খোলা আকাশের নিচে বিপদ সবচেয়ে কম। আজকের প্রবন্ধটিতে বলা হলো- ‘যতটা সম্ভব ঘরের বাহিরে থাকুন..!’ এমনকি ভীড়ে ঠাসা সী বিচও নাকি নিরাপদ। কারন বাতাস সব ড্রপলেট সব এরোসল উড়িয়ে নিয়ে যায়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা- এতোদিন নিয়ম করে দুইবার ডোরবেল ঘষামাজা করার পর আজ জানলাম- ঘরের দরজা জানালা হা করে খোলা রাখতে হবে। যেন ভেন্টিলেশন ভাল হয়!

এ কোভিড উনিশ কিছু নন্দ লালের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। নেতা, সচিব, বিচারক, ডাক্তার, পুলিশ- সব পেশায়ই এরা আছেন। এবং পৃথিবীতে এক শ্বাস বেশি নেয়ার জন্য এরা এমন কোনো হেন কাজ নেই যে করতে পারবেন না। ক্লিনিকের বাইরে বাবাকে রেখে পালিয়ে যাওয়া, ডাক্তার হাসপাতালে এসে রোগী না দেখা, শত প্রয়োজনেও কোভিডের দোহাই দিয়ে ঘরে বসে থাকা- এসব নন্দলালদের চরিত্র। এদের চিনে রাখা উচিত। ছোট করে কাগজে নামও লিখে রাখা উচিত। কোভিড টেস্টে তারা নিগেটিভ হলেও ‘অমানুষ’ টেস্টে তারা পজিটিভ।

সরকারি অর্থে এমন অদ্ভুত সচেতনতাও ‘নন্দলাল’ চরিত্র। বোতল বোতল স্যানিটাইজার যখন টেবিলে গড়ায় কষ্ট লাগে- হাসপাতালে সাপ্লাইয়ের অভাবে এক মাস্ক দিয়ে কতদিন আমরা নেবুলাইজেশন করে গেছি! অক্সিজেনের ন্যাজাল ক্যানুলা, ফেস মাস্ক একটি। অক্সিজেনের দুঃখ করি না, সাধারণত মৃতপ্রায়দের এগুলো লাগানো হয়!! রোগীর পর রোগী, মাসের পর মাস, শিশুর পর বুড়ো, বুড়োর পর শিশু। ফ্রি নিতে আসা জীবনের মূল্য আর কত? এসব হাসপাতাল যেন রাষ্ট্রের দুয়োরাণী। সর্বস্তরের বঞ্চনা ও অভিশাপে কাঁপছে।

অথচ শুরুটা হয়েছিল সবকিছু বদলে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্ন এখন নিজেকে বদলে নেয়ার- যেন অতটুকুও আর চোখে না পড়ে!

এখন টের পাই- সময়ের সাথে সাথে অপেক্ষা কষ্টের রূপ নেয়। কষ্ট রূপ নেয় নীরবতার। নীরবতা রূপ নেয় একাকীত্বের। একাকীত্ব- সুগভীর বিশাল সমুদ্রের…।
জীবন মানে তো সমুদ্র।

স্টারগ্রেডেড মহামানব ও প্রতিনিধিদের জন্য সবকিছু, আমরা কীটপতঙ্গ। কিছুটা ভাল হয়তো থাকতাম যদি পোকামাকড়ের সাথে থাকতে পারতাম।

নন্দলালদের দেখি, নন্দলালদের কিচ্ছা শুনি! পৃথিবীটা তো তাদের জন্যই। তারা কেন মরতে চাইবে?
ঠিকই আছে!!

Platform:
Related Post