X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে এইটি থ্রি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

একজন মেয়ে যখন প্রথম বিদ্রোহ করে সে কেন মেয়ে হয়ে জন্মালো; মেয়ে হয়ে সে রান্নার অধিকার পায়, বাচ্চা মানুষ করার অধিকার পায়, কাপড় ধোয়ার অধিকার পায়, ঘর সাজানোর অধিকার পায়, নিজে আরো সুন্দর দেখানোর অধিকার পায়- কিন্তু সব ভেঙ্গেচুরে পৃথিবীর মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার অধিকার পায় না, দশ পাতা পড়ে বিশ পাতা সমালোচনা করার অধিকার পায় না- তখন তার দ্বিতীয় জীবন শুরু হয়। সে ওই দ্বিতীয় জীবনের স্বাদ পেল তার সাথে পরিচিত হবার পর।

যখন ম্যাসেজ আদানপ্রদান শুরু হলো সে বুঝতে পারলো- সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্য অবস্থায়ও একটি বাড়ি টিকে থাকতে পারে। ঝড়ে উড়ে যায় না। সেখানেও জীবন চলে- হাসি ও প্রাচুর্য সহ। পৃথিবীর ধর্মই এটি, একপাশে যখন রাত ওপর পাশে তখন দিন। কেউ অন্য মতের মানেই সে ‘খারাপ’ না, ভুল না।

একদম বিপরীত মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষ বুঝে না পৃথিবীতে আজব বলে কিছু নেই। সে মাঝেমাঝে এটাই খুঁজতো তাদের মধ্যে মিলটা কোথায়। প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে তারা বিপরীত এবং বৈপরীত্য সঙ্গ সে এতোদিন বর্জন করে এসেছে।

সে ছিল প্র‍্যাক্টিসিং মুসলিম, সর্বধর্মে সমান সম্মানী, গণতন্ত্রমনা, এবং রাজনীতি এড়িয়ে চলা লোক। অপরদিকে ছেলেটি বিশ্বাস করছে- পৃথিবীর সকল ক্যাওসের মূলে ধর্ম, কঠিনভাবে স্বৈরতন্ত্রপন্থী, এবং রাজনীতি দ্বারা আদ্যপ্রান্ত প্যাঁচানো, মেলানকোলিক ন্যাচার। এমন লোক ভাল হওয়ার কোনো কারন নেই। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটি একটু বেশিই ভালো। তার আদর্শ নিয়ে সে এত মাত্রায় অবিচল যে অন্য আদর্শকে তার পাশে ‘বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে’ মনে হয়।

তখন মেয়েটির তার এক্সিটিং রিলেশনশিপের অনেক অজানা কিছুই স্পষ্ট হলো। সে বুঝতে পারলো রিলেশনশিপে ‘স্পেস’ মানে মহাশূন্য। এটি একটি বিদেশি ল্যাংগুয়েজ- যা তার বয়ফ্রেন্ড এতোদিন বলে গেছে সে বুঝতে পারে নি। তারপর নিজেই যখন সে মহাশূন্যে অবস্থান নিলো তার এতোদিনের ঢেকে রাখা রঙ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল। বের হয়ে আসলো অবহেলা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার ছোট ছোট দিনপঞ্জি।

আগে সে ভাবতো ইগনোরেন্স ইজ ব্লিজ অন্তত ভালোবাসার ক্ষেত্রে। ভাবতো অতদূর এসে মাঝ নদীতে নৌকা না নাড়ানোই ভাল। এখন সে সাহস পেলো তার জানাটা প্রকাশ করতে। যে ভিজতে জানে তার আর পানিতে নামার ভয় কী! ও পাশ থেকেও বুঝছিলো বদলে যাচ্ছে অনেকখানি। স্যরির পশরা সাজিয়ে সেও এসেছিল। একমাস আগে এলে সে হয়তো ধন্যই হয়ে যেত। কিন্তু এখন সে স্বাধীনভাবে আকাশ দেখা শুরু করে দিছে। দ্বিতীয় জীবনে প্রবেশ করে গেছে। তার মিথ্যে জীবনের আনন্দের চেয়ে সত্য জীবনের আনন্দই বেশি বাজছে।

ছোটবেলায় গল্প শুনতে শুনতে যখন বুজে আসতো; ভাবতো সে ঘুরে বেড়াচ্ছে ম্যাজিক কার্পেটে, ভেসে বেড়াচ্ছে উত্তুঙ্গ নিল সমুদ্রে, ট্রেনের লাইন ধরে ছুটছে, কাউকে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি কাসাব্লাঙ্কা- তখন মনে হয় সে সময়টা ফিরে এসেছে। স্বপ্নে নয়, বাস্তবে। মেয়ে বলে কোনোকিছু আর আটকে নেই।

তখন সে প্রতিদিন সকালে আয়নায় নিজেকে দেখতো। কি বদলেছে খুঁজতো। বদলে নি কিছুই আবার আগের অবস্থাতেও নেই কিছুই।

‘জীবন মানে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো’। সত্য গল্পের এ মিথ্যে মেয়েটি তখন তা বুঝতে শুরু করেছে। এটি এক রাত থেকে আরেক রাতের মাঝখানে একটি দিনের গল্প।

এরমাঝে আরেকটি জিনিস উল্লেখযোগ্য- এতো পরিবর্তনের মাঝে সে সবকিছু গোপন করছিলো তার বান্ধবীদের থেকে ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। বলে না- প্রশান্তি গোপন করা যায়, অস্থিরতা গোপন করা যায় না। সে এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে বড়কিছুর জন্য অপেক্ষা করছিলো।

প্রত্যেক তালার জন্য একটি চাবি থাকে। আলাদা কারো কথা কিভাবে লিখবো যখন প্রায় সবকিছু লেখা হয়ে গেছে। বলা হয় যতক্ষণ না আপনি রোমিওর চোখ দিয়ে জুলিয়েটকে দেখছেন অথবা জুলিয়েটের চোখ দিয়ে রোমিওকে দেখছেন- তাদের কাউকে পাবেন না। উপযুক্ত পাঠকের অভাবে বইয়ের ফাঁকে থাকা চিঠিগুলো তাই সবসময় অর্থহীন।

Platform:
Related Post