X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড নাইন্টি থ্রি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ অক্টোবর ২০২০, শনিবার     

ডা. শুভদীপ চন্দ

আমাদের পুরো হাসপাতাল জুড়ে কানাঘুষা চলছে নতুন স্যার নাকি বদলি হয়ে যাচ্ছেন। রটনা যদি সত্যি হয় আমরা এক বছরে চারজন বস পাবো।
প্রগতির জন্য স্থিরতা খুব বেশি দরকার। আমি যতটুকু দেখেছি এ দেশে একজন অফিস প্রধান এতো সম্মান পান যে, তিনি কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করেন। এ সম্মান আসে অফিস সহকর্মীদের কাছ থেকে। আর যদি তিনি যোগ্য ও একটু প্রতিভাবান হোন তবে সাত আসমানের উপর উঠে যান। নিত্যনতুন আইডিয়া ও গাইডলাইন তার মাথায় আসতেই থাকে। আমি বিভাগীয় প্রধান স্যারদের দেখেছি। জ্ঞান ও প্রশংসার ভারে নড়তে পারেন না। উপভোগ করতেন সব ক্ষমতা। টিপেটিপে ক্ষমতা ছাড়েন। এক পরিচিত বড় ভাই ছিল তিনি তার স্যারের চেয়েও বেশি যোগ্য। কিন্তু উপগ্রহের ন্যায় গ্রহের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকতেন। একদিন বলেছিলাম- ‘ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?’ কিছু বলেন নি। কিন্তু বুঝেছিলাম বলছেন- ‘কী লাভ, যেখানেই যাই উপগ্রহ হয়েই থাকতে হবে! তারচেয়ে বরং একজনের বকাই সারাজীবন শুনি।’

ছবিঃ প্রতীকি

তবে বস দুইজনকেই যা দেখলাম- সদিচ্ছার অভাব নেই। কিছু একটা করার মানসিকতা নিয়ে তারা চেয়ারে বসেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেশি পছন্দ করে ‘কিছু না করার মানসিকতা’-কে। ঘনঘন বদলের পেছনে এ এক কারণ হতে পারে। আমাদের এসব ভেবে লাভ নেই। সরকারি মতে এমন ভাবনা ভাবাও অন্যায়। এখন এক আকাশ উঠছে প্রতিদিন। নীল আকাশ, ঝকঝকে রোদ, কোথাও একটুকু মেঘ নেই। কচুরিপানার মাঝে একটুকু কালো জল, সেখানে গোটা আকাশ প্রতিফলিত হয়। সূর্যদেব একদিকে উঠে আকাশ পরিভ্রমণ করে অন্যদিকে অস্ত যায়। গরমে জীবন ওষ্ঠাগত। মাঝ অক্টোবরে সূর্যের এতো তেজ নাকি দেখেনি কেউ। ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ছিটেফোঁটাও আকাশের কান্না নেই।

বাবার জ্বর এসেছে। গলাব্যথা, কুশকুশে কাশি। মা বাবা কয়েকদিনের জন্য এ বাসায় এসেছেন। উদ্দেশ্য পূজা দেওয়া। ঈশ্বরকে আমি ঘাঁটাই নি, তিনিও আমাকে ঘাঁটান নি। তবে এ বিলক্ষণ জানতাম মানবিক গুণ দেবতাদের থাকলেও মানবিক বৈশিষ্ট্য তাদের স্পর্শ করে না। তিনি যতই জীবন্ত হোন জ্বর কখনো ভগবানের হবে না, হবে মানুষের। আমার নিষেধ শুনেনি। এখন কী এক টেনশন গলার কাঁটার মতো গলার ভিতরে আটকে আছে। ভুলে যাই আবার মনে পড়ে ঢোক গিলতে। দিনে যে আমরা কতবার ঢোক গিলি এ কাঁটা না বিঁধলে তাও জানা হতো না। তা সে না জানাই ভাল।
সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর বিখ্যাত তোতা কাহিনী গল্পের শেষতত্ত্ব দিয়েছিলেনঃ ‘মরার আগে যদি মরতে পারো তবেই মোক্ষলাভ।’ আমার তো মনে হয় সবাই মরার আগে কয়েকশো বার মরে। মোক্ষ লাভ তো দূর শিক্ষাও লাভ হয় না। আসলে মানুষ বড়জোর পাঁচ বছর বাঁচে, বাকি জীবন যায় সে পাঁচ বছরের পুনরাবৃত্তি করতে করতে। কখনো প্রস্তুতি নিতে নিতে। অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের মতো প্রতিভাবানদের কথা আলাদা। আমাদের সব কথাই সাধারণকে মাথায় নিয়ে। সাধারণ হলে এরই এক সুবিধা। রোগ, শোক, দুঃখ, কষ্ট, আপদ, বিপদ, আশঙ্কা, অভিমান নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা যায়।

Silvia Mim:
Related Post