ইদানীং অনেক রোগী প্রায়ই অভিযোগ করছেন, তাঁদের ভাইরাস জ্বর বা ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল, কিন্তু জ্বর সেরে গেলেও শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। সাধারণত যেকোনো ভাইরাস বা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যান। অথচ দেখা যাচ্ছে জ্বর ছেড়ে গেলেও রোগী আরও কিছুদিন অসুস্থ ও দুর্বলবোধ করছেন, বিশেষ করে শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা কিছুতেই যাচ্ছে না বা দুর্বলতা, ক্লান্তি কাটছে না। আসলে ডেঙ্গু হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এ রোগটি সম্ভবত ডেঙ্গু জ্বর নয়; বরং অন্য একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যাকে বলে চিকুনগুনিয়া।
চিকুনগুনিয়া কী?
চিকুনগুনিয়া রোগটি ভাইরাসজনিত। আমাদের অতি পরিচিত ডেঙ্গুর সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের মতোই এই ভাইরাসটি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবপ্টিকাস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। চিকুনগুনিয়া মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। মানুষ ছাড়াও বানর, পাখি, তীক্ষ্ণ দন্ত প্রাণী যেমন ইঁদুরে এই ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান।
লক্ষণঃ
চিকুনগুনিয়ার মূল উপসর্গ হলো জ্বর এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা। শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে প্রায়ই ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়, তবে কাঁপুনি বা ঘাম দেয় না। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, গায়ে লাল লাল দানার মতো র্যাশ, অবসাদ, অনিদ্রা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, এমনকি ফুলেও যেতে পারে। তীব্র অবসাদ, পেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা ইত্যাদি জ্বর চলে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি মাসের পর মাসও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা প্রদাহ থাকতে পারে; যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম করে তোলে। রোগী ব্যথায় এতই কাতর হন যে হাঁটতে কষ্ট হয়, সামনে বেঁকে হাঁটেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
চিকুনগুনিয়া সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে ২ থেকে ১২ দিন লাগতে পারে।
চিকিৎসাঃ
অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এর চিকিৎসা মূলত রোগের উপসর্গগুলো নিরাময় করা। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি বা অন্যান্য তরল খেতে দিতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। তীব্র ব্যথার জন্য অন্য ভালো ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। রোগীকে আবার যেন মশা না কামড়ায় এ জন্য তাঁকে মশারির ভেতরে রাখাই ভালো। কারণ আক্রান্ত রোগীকে মশা কামড় দিয়ে কোনো সুস্থ লোককে সেই মশা কামড়ালে ওই ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হবেন।
প্রতিরোধঃ
চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো ভ্যাকসিন বা টিকাও নেই। তাই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো এডিস মশা প্রতিরোধ। এডিস মশার উৎপত্তি স্থল ধ্বংস করা এবং মশা নির্মূল করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাসাবাড়ির আশপাশে যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, তা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ডাবের খোসা, কোমল পানীয়ের ক্যান, ফুলের টব—এসব স্থানে যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগানো, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার। জেনে রাখা ভালো, এডিস মশা মূলত দিনের বেলা এবং ঘরের বাইরেই বেশি কামড়ায়।
চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে জেনেনিনঃ
* চিকুনগুনিয়া রোগটি এডিস মশার কামড় থেকেই হয়। তাই মশা থেকে দূরে থাকুন।
* সন্তান মায়ের দুধ পান করলে সাধারণত চিকুনগুনিয়া হয় না। তাই আক্রান্ত মায়েদের চিন্তিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই।
* চিকুনগুনিয়া হয়েছে এটা বোঝার উপায় হলো জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথা এবং গিরায় গিরায় খুব বেশি ব্যথা হয়। ডেঙ্গুর মতোই গায়ে অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো র্যাশ হয়। তবে রক্তক্ষরণ একেবারেই হয় না, রক্তের প্লাটিলেটও কমে না।
লিখেছেনঃ
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
View Comments (25)
Saddam Hossain ?
মামুনুর রশিদ প্রামাণিক
ঐ লোকটা মনে হয় এই আর্টিকেল রিসেন্টলি পড়ছে!?
Dilder Alam Sohel see
Munia Islam
Orofe gunia
Chikunmunia
duitare thappor ???
Chowdhury Tanvir
Thank you... :-)
Alina Haque Anika
Habiba Jannatun Tuli
Jannatun Nayema Moury
Fatematuz Johora Munmun
Afra Anan Mridu
Sabiha Afrin ?
Mullyoban tothyo!
Pinaki Datta MD Tariqul Islam
Pinaki abar hobe naki??
Thanks so ,,but ,should English format with download link also.