X

রাতের ডিউটি ক্যান্সার ও হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ায়

Doctor and nurse conferring in hospital corridor


ঘুম শুধুমাত্র শরীর ও মস্তিষ্কের বিশ্রাম নয়। এটি একটি জটিল জৈবিক ক্রিয়া (Critical biological function) যার মাধ্যমে শরীর নিজেকে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত করে। বর্তমানে শিফটিং ডিউটিরত কর্মীদের নিয়ে কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, সাধারণ কর্মঘন্টার বাইরে যারা কাজ করে বিশেষ করে যারা নাইট ডিউটি করে তাদের আয়ু অন্যদের থেকে কম হয়।

ব্রাইহ্যাম এন্ড উইমেন্স হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট ডঃ ইভা চার্নহ্যামারের নেতৃত্বে ‘আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’ এ একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করে ৭৪,৮৬২ জন নার্স। এখানে দেখান হয় নাইট ডিউটি কিভাবে তাদের শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।

গবেষণা শুরুর ২২ বছর পর গবেষকগণ লক্ষ্য করেন, যে সকল নার্স পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নাইট ডিউটি করছেন তাদের শতকরা ১১ ভাগ বেশি মৃত্যুঝুঁকি থাকে যারা করেননি তাদের থেকে। যারা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে নাইট শিফটে ডিউটি করেন তাদের অন্যদের থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৩৮ ভাগ বেশি। অবাক করা বিষয় হল, নাইট ডিউটিরত নার্সদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ঝুঁকি অন্যদের থেকে শতকরা ২৫ ভাগ বেশি এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৩৩ ভাগ বেশি। ডঃ চার্নহ্যামার বলেন, “ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার কারণ সম্ভবত রাতের শিফটের কর্মীদের অতিরিক্ত ধুমপান”। লম্বা সময় ধরে নাইট শিফটে কাজ করা নার্সেরা জানান যে তাদের মাঝে ওজন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস এবং ধুমপানের প্রবণতা বেড়ে যায়।

এই গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্ত নিশ্চিতভাবে সমর্থণ করে যে, রাতে কাজ করা এবং দিনে ঘুমানো শরীরের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যায় যদি সেটা অনিয়মিতভাবে করা হয়। ডঃ চার্নহ্যামার বলেন, “এটা অনেকটা তিনদিন পরপর লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক বিমান ভ্রমণের মত যেখানে আপনি ক্রমাগত ‘জেট ল্যাগ’ এ ভুগবেন। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক ভ্রমন করলে জেট ল্যাগ কয়েকদিন পর্যন্ত ভোগায় এবং একই ধরনের সমস্যা নাইট ডিউটি করা কর্মীদের নিয়মত ঘটনা”।

ঘুমের সময় পরিবর্তন হলে শরীর কেন বিদ্রোহ করে? পুর্বের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, খুব কম ঘুম বা অনিয়মিত ঘুম শরীরের মেলাটোনিন লেভেল এর পরিবর্তন ঘটায়। সে কারণে শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়াগুলো নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া বা শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পায় না। এই সময়টা শরীরের কোষগুলোর সংস্কার ও পুষ্টি উপাদানগুলোর পূনর্বন্টনের জন্য খুবই জরুরী। এই বিশ্রামের সময়টা না পেলে প্রদাহ (Inflammation), চর্বি ও শর্করা বিপাক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় যা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। শিফটিং ডিউটির ফলে এ সকল স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণাগুলোর কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ২০০৭ সালে একটি “সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ডঃ চার্নহ্যামার এবং তার দলের মতে এই গবেষণাগুলো উপকারী কিন্তু সবার পক্ষে রাতের ডিউটি এড়ানো সম্ভব নয়। তাঁরা বর্তমানে খুঁজে দেখছেন কিভাবে অনিয়মিত ডিউটির খারাপ প্রভাবগুলো নিবারণ করা যায়। কারণ ঘুমের ঔষধ বা এই ধরণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো খুব বেশি উপকারী নয়। তিনি বলেন, “ শিফটিং ডিউটিরত কর্মীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে এবং তা কমানোর জন্য কিছু ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। যেমন, ধুমপান পরিহার করা, পরিমিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিশেষত হৃদরোগ ও ক্যান্সারের জন্য”। তিনি আরো বলেন, “ আমরা আশা করতে পারি যে খুব তাড়াতাড়ি এই অনিয়মিত ও রাতের ডিউটির ফলে দেহঘড়ির এই অসামঞ্জস্যতা দূর করার জন্য কিছু উপায় খুঁজে বের করতে পারব। যেমন, একজন কর্মীর স্বভাবজাত ঘুমের অভ্যাসের (দিবাচর বা নিশাচর) সাথে তার ডিউটির সময় মিলিয়ে দেওয়া”।

……………..
লিখেছেনঃ
ডাঃ এ এস এম মুনিম হোসেন
মেডিকেল অফিসার,
নিউরোসার্জারি বিভাগ,
ল্যাবএইড স্পেসালাইজড হাসপাতাল,
ধানমন্ডি, ঢাকা।

drferdous:
Related Post