X

মানব শরীরে জঙ্গী ও জঙ্গী বিরোধী অভিযান !

সম্প্রতি সিলেটে ঘটে যাওয়া জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সাথে খুব সুন্দর উপমা দেয়া যায় ক্যান্সারের চিকিৎসায় immunotherapy এর ব্যাবহার কে!!

আব্দুল্লাহ ভাই!! এসব কী বলেন??

তাহলে শুনো বৎস! তোমাকে কাহিনী বলে যাই।

আমাদের দেশে যেরকম গর্ব করার মত দক্ষ, কৌশলী, সাহসী সেনাবাহিনী আছে, ঠিক তেমনি আমাদের প্রত্যেকের দেহের ভিতরে এক অদম্য সাহসী সেনাবাহিনী আছে। এদের নাম Immune system!! এরা আছে বলেই আমরা টিকে আছি, নাহলে অনেক আগেই মানবসভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যেতো।

Immune system বিভিন্ন রকমের শত্রুর সাথে মোকাবিলা করে আমাদের রক্ষা করে।

আচ্ছা আব্দুল্লাহ ভাই!! ইমিউন সিস্টেম মোকাবিলা করে শত্রুর সাথে সেটা বুঝলাম। তবে এটার সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক কী??

শুনো বৎস, ক্যান্সার হলো ব্রেইনওয়াশড হয়ে যাওয়া একদল জঙ্গী।

ক্যান্সার কোষগুলো আমাদের নিজের দেহেরই কোষ ছিলো। নরমাল কোষ। কিন্তু পরবর্তীতে এদের মধ্যে বিভিন্নভাবে মিউটেশন হয়ে এরা ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়ে যায়। একদম ব্রেইনওয়াশড জঙ্গীদের মত।

বুঝলাম ভাই! তারপর বলেন!!

ক্যান্সার কোষগুলা প্রথমে একটা জায়গায় আস্তানা গড়ে। অনেকটা আতিয়া মহলের মত।

কিন্তু আমাদের ইমিউন সিস্টেম সেই আস্তানাকে খুঁজে বের করে ফেলে।

আব্দুল্লাই ভাই! কীভাবে খুঁজে বের করে? একটু খুলে যদি বলতেন।

শুনো, যখন কোন নরমাল কোষ ক্যান্সার কোষে পরিণত হয় তখন এর গায়ে নতুন কিছু Antigen প্রকাশিত হয়। এদের বলে Tumor associated antigen (TAA)

আমাদের ইমিউন সিস্টেম এসব TAA দেখে চিনে নেয় জঙ্গী ক্যান্সার কোষদের এবং এদের আস্তানা ঘিরে ফেলে।

শুধু তাইনা, আমাদের সাহসী সেনা সদস্য Lymphocyte এবং NK cell অদম্য সাহস নিয়ে একদম জঙ্গী আস্তানার ভিতরে ঢুকে জঙ্গীদের সাথে লড়াই আরম্ভ করে দেয়!

যেহেতু Lymphocyte এবং NK cell গুলা জঙ্গী আস্তানা অর্থাত টিউমারের একদম ভিতরে ঢুকে যায় (Infiltrate করে) তাই এদেরকে সম্মানসূচক পদবী দেয়া হয় “Tumor infiltrating lymphocyte”

আব্দুল্লাহ ভাই!! Lymphocyte গুলা যদি ক্যান্সার কোষের সাথে লড়াই করেই, তাহলে ক্যান্সার ভালো হয় না কেন??

শুনো বৎস!! ক্যান্সার কোষ গুলা খুব দ্রুত proliferate করে। তাই lymphocyte একদিকে ক্যান্সার কোষ মারতে থাকে, অন্য দিকে নতুন নতুন ক্যান্সার কোষের আবির্ভাব ঘটে। তাই ক্যান্সার ভালো হয় না।

তো এই সমস্যা সমাধানের কি কোন উপায় নাই আব্দুল্লাহ ভাই??

আরে বৎস, সমাধানের উপায় নিয়েই তো এখন কথা বলবো।

আমরা যদি Lymphocyte এর সংখ্যা হাজারগুণ বাড়িয়ে দিই, তাহলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

কিন্তু আব্দুল্লাহ ভাই!! lymphocyte এর সংখ্যা আপনি কীভাবে বাড়াবেন??

শুনো বৎস, টিউমারের ভিতরে যে Tumor infiltrating lymphocyte (TIL) আছে সেগুলা কিন্তু ওই স্পেশিফিক টিউমারের বিরুদ্ধে Activated!! সো আমরা মাইক্রোসার্জারী করে টিউমারের ভেতরের TIL গুলো আলাদা করবো। তারপর সেই TIL গুলার কালচার করবো। তখন হাজার হাজার TIL তৈরি হবে এবং এরা প্রত্যেকেই ওই স্পেশিফিক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (Activated against cancer Antigen).

তারপর কী হবে আব্দুল্লাহ ভাই??

তারপর আমরা তৈরি হওয়া হাজার হাজার TIL কে ওই ক্যান্সারের রোগীর দেহে দিয়ে দিবো। TIL গুলা ক্যান্সার কোষগুলোকে খুঁজে বের করে যুদ্ধ শুরু করে দিবে।

আর এটাই হলো Cancer immunotherapy!

..
আব্দুল আজিজ আব্দুল্লাহ,
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

drferdous:
Related Post