X

ভার্চুয়াল সেল্ফকেয়ার

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪জুন, ২০২০, রবিবার

বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে চারপাশে বিদ্যমান আতঙ্ক আর হতাশার মাঝে সেল্ফ কেয়ার বা নিজের যত্ন নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যপার। কেননা নিজেকে ভালো রাখতে না পারলে চারপাশের সবকিছু ভালো রাখা দূরহ হয়ে পড়ে। বরং নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমেই নিজেকে পূর্ণতা দান করা সম্ভব।

সেল্ফকেয়ারের বিভিন্ন ধাপের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ভার্চুয়াল সেল্ফকেয়ার, যার শুরুতেই রয়েছে সব ধরনের গুজব পরিহার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার করাই গুজব। যেমন – কালিজিরা খেয়ে করোনামুক্তি, তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে করোনা সারানো অথবা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা ঔষধ প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কোনো ওষুধ খাওয়ার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করতে পোস্ট দেওয়া। ভার্চুয়াল সেল্ফকেয়ারের অর্থ এসব তথ্য যাচাই না করে কখনোই বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করা কিংবা শেয়ার করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা। যেহেতু কোভিড-১৯ বা সার্স কোভ-২ ভাইরাস সমগ্র বিশ্বের কাছেই নতুন একটি ভাইরাস তাই বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ভার্চুয়াল মিডিয়াতে। সেক্ষেত্রে সঠিক তথ্য পাবার জন্য এবং সব ধরনের গুজব এড়াতে শুধুমাত্র ভেরিফাইড বা নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোতেই চোখ রাখতে হবে।

এছাড়াও, বাড়িতে থাকাকালীন সারাদিন ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে যেন কেউ অনলাইন আসক্ত না হয়ে যায় সে ব্যাপারেও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বয়ে আনতে পারে নানান ধরনের শারীরিক এবং মানসিক ঝুঁকি। এ থেকে পরিত্রাণের একটি উপায় হচ্ছে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ অর্থাৎ দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ইন্টারনেট বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা। ব্যক্তি, বয়স এবং কর্মভেদে এই সময় কমবেশি হতে পারে। এর মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেমন বাঁচা যায় তেমনি শারীরিক ঝুঁকির হারও কমে। সেইসাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও কিছুটা বিরতি নেওয়া প্রয়োজন যা মানসিক চাপ শিথিল করতে সাহায্য করে। সারাক্ষণ করোনা মহামারী সংক্রান্ত খবরাখবর জানতে থাকলে সেটি মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা নিউজ সাইটের এলার্ট অপশন বন্ধ করে রাখার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিটক্স মেনে চলা সহজতর করা যায়।

সেল্ফকেয়ারের খাতিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মতামতের গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন না করার দিকটিও সকলের খেয়াল রাখতে হবে। ভিন্ন মতামত পোষণ করায় অন্যের প্রতি অশ্রাব্য বা অশালীন ভাষা প্রয়োগ, কোনো অপ্রয়োজনীয় লিঙ্ক শেয়ার এবং নিজের সাইবার সুরক্ষা ব্যহত হয় এমন কিছু থেকেও নিজেকে সংযত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।

বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনাতীত হলেও প্রযুক্তির অপব্যবহার মানবজীবনকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে নিমিষেই। তাই প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থেই ভার্চুয়াল সেল্ফকেয়ার নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।

মূল: অধ্যাপক সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ
সম্পাদনা: ডা. টি এইচ এম এনায়েত উল্লাহ খান

হৃদিতা রোশনী:
Related Post