X

ভাং-গাড়ি ডাক্তার


অলস দুপুর।গরম সব পাকাতে ব্যস্ত।পাকাতে হলে তা দিতেই হবে।আম,জাম,লিচুর কথা ভেবে এই গরমকে মেনে নিয়েছি।অনেকটা ইংরেজী বর্ণ ওয়াই মতো শুয়ে আছি।এতে বাতাসের হিস্যা বেশী পাওয়া যায়।যাকগে সে কথা।শুয়ে শুয়ে ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখছি।কে যেনো স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘কার বুদ্ধি সবচাইতে উঁচুতে? ফিলিং স্টুপিড!’ কমেন্টে অনেক ধরনের উত্তর।তবে একটা উত্তর ভালো লাগলো।’সবচাইতে উঁচুতে থাকে জিরাফের বুদ্ধি।মন খারাপ করিস না দোস্ত ইউ ক্যান ক্যাচ হিম!’


নিউজফিডে এর পরে আছেন আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি।ছবির নীচের খবরটা এ রকম বিকেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালে সেবা দিতে হবে।নিউজটা দেখে পরান-টা ভরে গেলো।রোগ শোক তো আর ক্যালেন্ডারের পাতা দেখে আসেনা আবার ঘড়ির টিক টক দেখেও আসেনা।বিকেলে একজন অসুস্থ রোগীর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার হলে বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে না থাকলে চিকিৎসাটা পাবে কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বিকেলে চেম্বারে রোগী দেখতে পারলে সরকারী হাসপাতালে কেনো পারবে না? মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আমিও একমত। কিন্তু বিষয়টা কিভাবে বাস্তবায়ন যোগ্য সেটার একটা সীমা কিংবা পরিসীমারেখা না দিয়ে মিডিয়াতে ‘থাকতে হবে!’ বলে বক্তব্য দিলে চোট এসে লাগবে আমরা যারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না তাদের উপরই। কিভাবে?


তাহলে আগে ‘ভাং-গাড়ী’ তত্ত্বটা দিয়ে নেই।কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের এক সুন্দরীকে ভালোবাসে দুই নেতা,সুন্দরীর কাশি,কে তুশকা সিরাপ কিনে দিবে এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া,সে ঝগড়া গিয়ে থামলো রাস্তায় গাড়ীর উপর।দেদারছে গাড়ী ভাংচুর।বাস,মিনিবাস,প্লাস্টিক(প্রাইভেট কার) কেউই রেহাই পেলো না। রাজাকারের ফাঁসির আদেশ।ঘটনা কোর্টে।ফলাফল রাস্তায়।ভাং-গাড়ী। নেতার ভাইয়ের কুলখানির খিচুড়িতে লবন কম হইছে।ভাং-গাড়ী।


এই ‘ভাংগাড়ী তত্ত্বে’র সাথে নরমাল এম বি বি এস ডাক্তারের ‘মাইর’ খাওয়ার সম্পর্ক কী? পানির মতো সহজ! মাননীয় মন্ত্রী জন-প্রতিনিধি।তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে জনগনকে জানিয়ে দিয়েছেন যে অমুক মেডিক্যালে বিকালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপসবাদী হলে,ঢাকায় পোস্টিং ধরে রাখার বিশেষ প্রয়োজন হলে বিষয়টা ‘হি হা, হে হে’ করে মেনে নিবেন। জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে বলবেন ‘এত বছর ধরে ট্রেনিং করো, কোন রোগের কি চিকিৎসা সেটা তো ভালোই জানো।থাক সে কথা, আজকে বিকেলের রোস্টারে আমি আছি।খারাপ রোগী আসলে ফোন দিও’! -জ্বী স্যার। খারাপ রোগী এবং তার লোকজন চলে এসেছেন। -বিশেষজ্ঞ, ঐ বিশেষজ্ঞ। -জ্বী বলেন। -আপ্নে কী বিশেষজ্ঞ? -আমি এম বি বি এস। -সরকার না কইছে বিশেষজ্ঞ দিবো, হেরে ডাকেন।আম্নের মতো ইন্টান্নিরে দিয়া আমার বাপেরে চিকিৎসা করাইতাম না। -দাঁড়ান স্যারকে ফোন দিচ্ছি। -কি কন বিশেষজ্ঞ নাইক্কা?আম্রার টেহায় ডাক্তর হইয়া পেরাইভেট চেম্বারে বইয়া রুগী দেখতাছে!অই ভাং হাসপাতাল।এই ইন্টানিরেও কিছু দে!তাইলে যদি বিশেষজ্ঞের হুঁশ হয়।


আর বিশেষজ্ঞ যদি আপস-বাদী না হন।কর্পোরেট হাসপাতাল থেকে যদি তাঁর কাছে অফার থেকে থাকে।তিনি সরকারের সাথে বারগেইনিং করবেন।বলবেন, আমি সকাল আট টায় এসে লেকচার ক্লাস নেই, দশটা থেকে রাউন্ড দেই,রাউন্ডের পর ছাত্রদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেই।আমি তো মানুষ?আমার দ্বারা সম্ভব না’।(উনার প্রত্যেকটা কথার ভ্যালিড যুক্তি আছে) তখন সরকার বলবে ‘তা হলে কী সাধারন মানুষ বিকালে বিশেষজ্ঞ সেবা পাবে না?আপ্নারা কী চান না সরকার মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করুক’। বিশেষজ্ঞ স্যারের ইগো বেশী হলে তিনি সরকারী চাকরী ছেড়ে দিয়ে বেসরকারী চাকরীতে ঢুকে পরবেন। হাসপাতালে তখন আবার খারাপরোগী এবং তার লোকজন। -সরকারে না কইছে বিশেষজ্ঞ দিয়া রুগী দেখাইবো।বিশেষজ্ঞ ভাই কো? -উনি চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন! -কী এতবড় কথা!এই সরকার মানি না।মানবো না।ভাং হাস-পাতাল।ইন্টানিরেও কিছু দিস।


সরকারী হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ স্যারেরা কিভাবে বিকেলে সেবা দিবেন সেটার আগে একটা পলিসি ঠিক করতে হবে।উনি ছয় দিন দিবেন না তিনদিন দিবেন।বিকেলে রোগী দেখলে কি সকালে মাফ পাবেন।না পেলে কেনো না।মানুষ তিনি যন্ত্র-না।এর জন্য তিনি বাড়তি কোনো আর্থিক কমপেনসেশন পাবেন কিনা সেটারও একটা লিগ্যাল ফ্রেম থাকা উচিৎ।আমরা চিকিৎসক হই আর বিশেষজ্ঞ হই এক্ষেত্রে সবার আগে চাকুরীজীবী।একজন চাকুরে দিনে কয় ঘন্টা অফিস করবেন তার একটা সুস্পষ্ট নীতিমালা কিংবা পলিসি গাইড লাইন থাকা উচিৎ।


ঘুমানোর সময় সবার আগে আমাদের কী করতে হয়? -চোখ দুটি বন্ধ করতে হয়। কিন্তু আমরা মাঝে মাঝে ঘুমানো ছাড়াই চোখ দুটি বন্ধ করে রাখি। বিকেলে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রাখতে হলে আগে পন্থা ঠিক করতে হবে।চোখ বন্ধ করে ‘থাকতে হবে’ বলে দিলে বিপদে পরবো আমরা ভাং-গাড়ী ডাক্তাররাই।কারন কর্পোরেট হাসপাতাল আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে না।ডাকছে বিশেষজ্ঞদের।

লিখেছেন: ডা. সেলিম শাহেদ
পরিমার্জনায়: বনফুল

Banaful:
Related Post