X

‘বিসিপিএস’ বরাবর এক ভুক্তভোগীর খোলা চিঠি

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ০৮ মে, ২০২১, শনিবার

‘বিসিপিএস’ বরাবর খোলা চিঠি

শ্রদ্ধেয় স্যারবৃন্দ,
প্রথমেই সংযুক্ত ছবি তে দেখুন। আশা করি চিনতে পেরেছেন। এটা বিগত জানুয়ারি ২০২১ সেশনের সার্জারি পার্ট ১ পরীক্ষার ফলাফল, কিছু ছাত্র-ছাত্রীর মার্কস এর নমুনা সহ:

উল্লেখ্য,
১. প্রথম ৪৪১ জনের মধ্যে কেউ পাশ করেনি। রোল ৪৮০০০১-৪৮০৪৪১ এর অনেকের এই ধরনের মার্কস দেখা গিয়েছে (পেপার ১ ও ৩ এ ৭০-৮০ নম্বরপ্রাপ্ত কিন্তু পেপার ২ তে ৩০-৪০ নম্বর প্রাপ্ত)

২. যে পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং নেই, সেই পরীক্ষায় ৩০ এর ঘরে নাম্বার পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও দুটি পেপারে ৭০+ মার্ক, সেখানে একটি পেপারে এতজন ছাত্রছাত্রীর পেপার ২ তেই শুধু ৩০-৪০ মার্ক , ব্যাপারটি অস্বাভাবিক।

অত্যন্ত দুঃখের সাথেই জানাচ্ছি, এই সমস্যার সমাধানে আপনাদের ভূমিকাতে আমরা সবাই আশাহত।

আমাদের তো কোন অযৌক্তিক দাবী ছিল না স্যার, এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিলাম, সঠিক ফলাফল পাওয়াটা তো আমাদের অধিকার ছিল। আপনাদের সাথে যখন আমাদের কয়েকজন কথা বলেছিল তখন আপনারও স্বীকার করেছিলেন এই রেজাল্টের অস্বাভাবিকতার ব্যাপারে। স্বীকার না করারও কিছু ছিল না আসলে, এত পরিষ্কার অসামঞ্জস্যতা দেখে। আপনারা মেনেও নিলেন, টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য হতে পারে। এটার সমাধান সম্ভব। আপনাদের নির্দেশনা মতই আশায় বুক বেঁধে আবেদন পত্র লিখে জমা দিলাম। কিন্তু বরাবরের মতই আশায় গুড়ে বালি। কি যে রিভিউ হল এবং আমাদের অফিশিয়াল আবেদনপত্রের উত্তরে আপনারা আনঅফিশিয়ালি একটা ফোন কলে জানিয়ে দিলেন “আমাদের কোন ভুল খুঁজে পাওয়া যায়নি রিভিউ করে। আপনারা সবাই একটানা ৪৪১ জন পরীক্ষা খারাপ দিয়েছেন।” কি কাকতালীয় একটা ব্যাপার! রোল ০০১-৪৪১ এর সবাই খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে। অদ্ভূতভাবে এদের সবাই পেপার ২ তেই ৩০-৪০ পাওয়ার মত পরীক্ষা দিয়েছে। এই কাকতালীয় ব্যাপারটা ৪৪১ এরপর থেকে কারো মাঝে দেখা যায়নি।

একটু পরিস্কার ভাবেই বলি স্যার, এই পরীক্ষাটার জন্য আমরা একেকজন ১০০০০-১১০০০০ টাকা করে দিয়েছি। আমরা আপনাদের থেকে কোন দয়া ভিক্ষা চাইনি। সঠিক ফলাফল জানাটা আমাদের প্রাপ্য। আপনাদের ভুলের মাশুল আমরা দিচ্ছি। তারপর ভুলটা যখন ধরিয়ে দিয়ে আবেদন করলাম, তখনও আপনারা চূড়ান্ত কপটতা দেখালেন। এমন অসামঞ্জস্যতা আমাদের বলার আগেই তো আপনাদের খেয়াল করা উচিত ছিল এবং সমাধান করা উচিত ছিল। এবারে তো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২ দিন সময়ও পেয়েছিলেন রেজাল্টের আগে। কেউই কি খেয়াল করলেন না? তারপর দেড় মাস পার হয়ে যখন আমরা আমাদের মার্ক্স উঠানো শুরু করলাম, তখন নজরে আসল এই কাহিনী যেটা জানার পরও আপনারা দায়িত্বহীন আচরণই দেখিয়েছেন। আপনাদের একটা পরীক্ষা বোর্ড আছে। সেটার কাজটা কি আসলে? ৬ মাস পর পর গতানুগতিক পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি কপি পেস্ট করে শুধু ছেড়ে দেওয়া আর কোন মতে একটা তিন দিনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে মেশিনে রিড করানো? আপনাদের আর দায়িত্ব নেই? আপনারা পরীক্ষার রেজাল্ট গুলো বিচার বিশ্লেষণ কিছু করেন না? পর্যাপ্ত মনিটরিং করেন না? আমাদের একেকজনের এতগুলা কষ্টের টাকা কি হালাল হচ্ছে আপনাদের জন্য? এখন এসে আপনারা বলছেন, রিভিউ এপলিকেশন করার নিয়ম পরীক্ষার ৩ সপ্তাহের মাঝে। আমরা দেরী করে ফেলেছি, তাই আর রিভিউ হবে না।

আপনারাই বলুন, ‘বিসিপিএস’ থেকে কি পরীক্ষার ৩ সপ্তাহের মধ্যে মার্ক্স উঠানো যায়? কিভাবে তখন এপ্লাই করতাম আমরা? আর যখন আপনাদের সাথে দেখা করলাম, তখনও তো এই অযৌক্তিক নিয়মের কথা বলেননি। তার মানে আপনারা নিজেই এই অদ্ভুত নিয়মের ব্যাপারে জানতেন কিনা সন্দেহ। আমরা কিভাবে জানবো? আর আমাদের এই সব নিয়মের দোহাই দিয়ে আপনাদের ভুলটা ঢাকতে চাওয়া অনৈতিক লাগছে না? অনেকে আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন কনফিডেন্স থাকলে রিট করার জন্য। কনফিডেন্ট ছিলাম আমরা ঠিকই , কিন্তু বাস্তবতা যদি চিন্তা করি, রিট করা আমাদের জন্য উচ্চাভিলাষী একটা ব্যাপার। পরীক্ষার ১০০০০ টাকা যোগাড় করতে যাদের হিমশিম খেতে হয়, রিটের জন্য এত টাকা জোগাড় করা আমাদের লেভেলে নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, আপনারা একেক সময় যে কপট আচরণ দেখালেন তাতে এটুকু পরিস্কার যে এই রেজাল্ট পরিপূর্ণ রিচেকের ব্যাপারে আপনাদের সদিচ্ছা নেই। সুতরাং আমাদের উত্তরপত্র গুলো যেখানে এখনো আপনাদের হাতে, রিট করার পর সেগুলো যে ম্যানিপুলেটেড হবে না সেই ভরসা হারিয়ে গিয়েছে।

ভুলটা আপনাদের যার মাশুল এতগুলো ছাত্র-ছাত্রী দিল। এটা জানামাত্র আপনাদের তো ক্ষমাপত্র সহ শুধরে নেওয়া উচিত ছিল যদি নূন্যতম এথিক্স থাকত। আপনারা আমাদের মত জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রী দের দৃষ্টান্তের সহিত শিখিয়ে দিয়ে গেলেন যে আমার ভুল হলেও আমি যেন কখনো দুঃখিত না হই, নিজের ভুল/ দায়িত্বহীনতা যেকোনো অনৈতিক উপায়ে চেপে দিয়ে যাই। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে যাবো পরবর্তী জেনারেশন যেন আপনাদের মত নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত না হয়। আপনারা আপনাদের সম্মানের জায়গাটা এতগুলো ছাত্রছাত্রীর কাছে ধরে রাখতে পারেননি। আপনারা একেকজন ‘বিসিপিএস’ এর নীতি নির্ধারক ছাড়াও আরো অনেক বড় বড় পোস্টে আছেন, অনেক ব্যস্ত সবাই জানে। কিন্তু স্যার, এত রাজনীতি করে পোস্ট গুলো শো পিসের মত দখল করে রেখে কি লাভ যদি ঠিকমত দায়িত্ব পালন নাই করতে পারেন!! যে ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং নূন্যতম নৈতিকতা আছে যার তার হাতে ছেড়ে দিন। অন্ততপক্ষে এত গুলো ছাত্র-ছাত্রী আপনাদের ভুলের ভুক্তভোগী হতো না। একেকজন ছাত্রের কত কষ্ট, ত্যাগ, সময়, মানসিক চাপ, সামাজিক চাপ এই একটা পরীক্ষার পিছে একটু স্মৃতি হাতড়ালেই তো বোঝার কথা। আপনাদের যদি এখন বলা হয় “আপনাদের ‘এফসিপিএস’ ডিগ্রী বাতিল। আবার পরীক্ষা দিন”। দিবেন??

এত অন্যায় করে আপনারা আসলেই ভালো থাকেন স্যার? ভালো থাকা সম্ভব? এতগুলো ছাত্রছাত্রীর ক্ষমা পাবেন তো?

ইতি,
জনৈক ভুক্তভোগী।

Platform:
Related Post