X

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারদের জন্য স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন

(এই গাইডলাইন তাদের জন্য যারা ৩৫ বিসিএসে নিয়োগ পেয়েছেন! ভবিষ্যৎ এ নিয়োগ পাবেন! বিসিএসের পাইপলাইন এ আছেন! ভবিষ্যৎ এ এই পথে আসতে যারা আগ্রহী)

১ কাগজ পত্র:
কি কি কাগজ পত্র সবসময় দরকার হবে?
প্রথম নিয়োগ প্রজ্ঞাপন,
প্রথম পোষ্টিং প্লেসমেন্ট এর প্রজ্ঞাপন
চাকরিজীবী দের জন্য বাইবেল।

চাকরি থেকে মৃত্যু অবধি এই কাগজগুলো লাগবেই। এই বাইবলের প্রথম পাতা, শেষ পাতা আর নিজের নামের পাতা বেশ কিছু কপি করে বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিবেন। eg. email, web বা যেখানে খুশি।

২ যোগদান ::

SSC, HSC, MBBS, INTERN CERTIFICATE, BMDC CERTIFICATE, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজের ছবি কয়েক কপি করে রেখে দিবেন। পোষ্টিং প্লেসে এসবের ৫ কপি করে লাগবে। সাথে বাইবেল ২ খন্ডের ৫ কপি করে।
যোগদানের দিন অপরাহ্নের মধ্যে যোগদান করবেন। পুর্বাহ্নের মধ্যে করতে পারলে আরো ভালো।
যোগদান স্থলে মানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গমন করে নিজের যোগদান পত্র লিখাবেন। সেটা হাতের বা কম্পিউটার টাইপ করে করতে পারেন। অফিস সহকারীরর সাহায্য নিয়ে ও করতে পারেন। যোগদান পত্রের ৩ কপি করে নিবেন। এক কপি আপনাকে ফেরত দিবে বা সংগ্রহ করে নিবেন। এই কপি আপনার জন্য বাইবেলের ৩য় খন্ড। এটা আজীবন লাগবে। কয়েক কপি করে নিবেন।

৩: যোগদান স্থলের কর্মকাণ্ড :

ক, আপনার অফিসের কর্মচারী কাউকে ভাই বলবেন না! প্রথম রাতেই বিড়াল মারার মত কর্মচারীর নামের পরে সাহেব যোগ করে সম্বোধন করবেন।

খ, আপনার কর্মস্থলের কর্ম পরিবেশ ঐ স্থানের মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিবেন। UHFPO এর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার দরকার নেই।
eg কয়দিন যেতে হয়? কয়দিন ডিউটি করতে হয়? সিভিল সার্জন মাসে বা বছরে কয়দিন পরিদর্শন করেন? ডিডি বা ডিজি বা এডিজি পরিদর্শন করেন কিনা? স্বাস্থ্য অধিদফতর এ শীর্ষপদে চাকরিরত কারো বাড়ি ঐ এলাকায় বা জেলায় কিনা?? কোন মন্ত্রী ঐ এলাকার সাংসদ কিনা??

গ, নতুন কর্মস্থলে যাওয়ার পুর্বে একটি নতুন সিম আর কমদামী মোবাইল সেট কিনে নিবেন। নতুন সংযোগ নাম্বারটি নতুন কর্মস্থলের মানুষগুলো কে দিবেন। একদম UHFPO থেকে শুরু করে ক্লার্ক পর্যন্ত সকলকে এই নাম্বারই দিবেন।

ঘ, প্রথম মিষ্টি অই দিন ই খাওয়াতে পারেন। ভাল হয় প্রথম বেতন হাতে পাওয়ার সময় খাওয়ালে।

ঙ, যোগদানের কাজ শেষ হলে আপনি ৭ দিনের জন্য প্রস্তুতি ছুটি নিবেন! এটা কাজ শুরুর পুর্বে আপনাকে নতুন রিদম দিবে।

চ, আপনার নতুন কর্মস্থলের সকল সহকর্মী কে আপনার বিবাহের তথ্য ব্যতীত বাকী সব তথ্য পেঁচিয়ে উত্তর দিবেন মানে নিজেকে ফ্রি করে দিবে না। উদাহরণ দিয়ে বুঝাচ্ছি ” আপনার সহকর্মী রা আপনার কাছে জানতে চাবে আপনি সপ্তাহের ৭ দিন ফ্রি কিনা?? চেম্বার কর কিনা?? উত্তর হবে হা চেম্বার আছে, না প্রতিদিন ফ্রি নয়, কাজ আছে। যদি এর বিপরীত উত্তর হয় তাহলে আপনাকে শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ইমার্জেন্সি ডিউটি ধরিয়ে দিবে। সাধু সাবধান। বরং কুটনৈতিক উত্তর দিতে পারেন! বলেন কি অসুবিধা ফ্রি থাকলে করে দিতে পারি।

৪, নতুন কর্ম পরিবেশ ::

ক, নৈমিত্তিক ছুটি নিলে অবশ্যই ছুটি সহ কর্মস্থল ত্যাগ প্রসংগে ছুটি নিবেন।

খ, কর্মস্থল জেলার বাইরে গেলে ছূটি সহ কর্মস্থল ত্যাগ প্রসংগে নামে একটি আবেদন অফিসে জমা দিয়ে যাবেন। সাবধানের মার নেই।

৫, চাকরি বিধি:
ফিরোজ মিয়া লাল বই ও হলুদ বই দুটি কিনে এক বার পড়ে ফেলেন। মজার সাথে পড়েন। সারাজীবন কাজে লাগবে।

প্রতি বছর জানুয়ারি আর জুন মাসে পরীক্ষা হয়। সেপ্টেম্বর আর মার্চ মাসে সার্কুলার হয়। ফরম ফিল-আপ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেন। পাশ করে ফেললে ফলাফলের কপি ব্যক্তিগত ফাইল ( ডিজি ও পোষ্টিং প্লেস) এ কপি রাখবেন।

৭, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ :
ডিজি তে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ফাউন্ডেশন ট্রেনিং শেষ করে ফেলেন। এটা আপনার জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় হবে বলে দিতে পারি। এই সার্টিফিকেট ও চাকরি স্থায়ীকরনের সময় লাগবে।

৮, এসি আর প্রসঙ্গ :
ফি বছর সময়মত এসিআর জমা দিবেন। ডিজিতে পৌঁছচ্ছে কিনা খবর রাখবেন।

৯, নিজ অফিসে PDS এবং HRM তৈরি করবেন, আপডেট রাখবেন। সকল ট্রান্সফার, পদোন্নতি, পরীক্ষা ও ডিজি তে যোগাযোগ এর সময় এই ২ টির কপি লাগবেই। এই ২টি ও বাইবেলের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।

১০, জিডি তে ২ টি ফাইল খুলে ফেলবেন খুব দ্রুত!
ক, ব্যক্তিগত ফাইল ( ৯ম তলা, স্বাস্থ্য অধিদফতর)! সব ধরনের সার্টিফিকেট ও প্রজ্ঞাপনের এক কপি করে জমা দিতে হবে)
খ, এসি আর ফাইল (এসি আর জমার পরে খুলবেন; ৯ম তলা, স্বাস্থ্য অধিদফতর, এসি আর রুম)

১১, ফি বছর এসি আর জমা হওয়ার পর তা এসি আর ফাইলে তুলাবেন আর HRM এ তুলাবেন।

১২, আপনার পিডিএস কোড নাম্বার, বিসিএস সিরিয়াল নাম্বার ( মেধা) মনে রাখবেন। এটা ও বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত।

১৩, ২ বছরের মধ্যে বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ, ও ২ টি এসি আর জমা হলে আপনি চাকরি স্থায়ীর জন্য আবেদন করবেন। স্থায়ীর অর্ডারের খোঁজখবর রাখবেন। হয়ে গেলে এই প্রজ্ঞাপন বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলবেন। সারা জীবন কাজে লাগবে।

১৪, চাকরি স্থায়ী হলে গেলে চাকরির ৪ বছরের পরে সিনিয়র স্কেলের পরীক্ষার জন্য বসে যাবেন। সিনিয়র স্কেল পাশ করে গেলে সেই অর্ডার সংগ্রহ করে নিজের PDS, HRM এবং ব্যক্তিগত ফাইল ( ডিজি ও পোষ্টিং প্লেসের ফাইল) এ রাখবেন।

১৫, উপরের সব গুলো হয়ে গেলে ডিজি অফিসে এসি আর এর জন্য ফি বছর ঢু মারবেন আর নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবেন।

১৬, উচ্চশিক্ষা :

MD/ MS/ DIPLOMA/ MPH পরীক্ষা চাকরির ২ বছর পুর্ণ হলে দিতে পারবেন। যারা অলরেডি চান্স পেয়ে গেছেন তারা ডেপুটেশন বিধিমালা তে চোখ বুলাবেন। বেসিক সাবজেক্ট এবং কিছু বিশেষ সাবজেক্ট এ ১ বছর হলেই পরীক্ষা দিতে পারবেন।( eg, DA, Cardiothoracic surgery). কিন্তু মনে রাখবেন যারা ১ বছর পরে ডেপুটেশন এ যাবেন ( সেটা দুর্গম বা পাহাড়ি বা বিশেষ সাবজেক্ট এর জন্যি হোক) তারা পদোন্নতি তে ধরা খাবেন খাবেনই। কারণ সেখানে যারা ২ বছর উপজেলা তে কাটিয়ে যায় তারা অগ্রাধিকার পায়।
FCPS এর কথা কি বলব?? Part 1 বসে বসে দিতে থাকবেন। আর পাশ করা থাকলে দেড় বছর পর ট্রেনিং পোষ্টের জন্য দৌড় ঝাপ শুরু করবেন।

১৭, চেম্বার প্র‍্যাক্টিস:
চেম্বার দিয়ে দিবেন। হাত খরচের টাকা জমাতে পারবেন। বেতন থাকবে ফ্রেশ ফ্রেশ। নির্দিষ্ট বারে নির্দিষ্ট সময় দিবেন। একেবারে ২৪ ঘণ্টা কাটানোর দরকার নেই। অফিস টাইমে চেম্বার করবেন না; সেটা ডিউটি থাকুক আর নাই থাকুক। পারতপক্ষে ক্লিনিক না করাই ভালো।

১৮, জিপি ফান্ড খুলে ফেলবেন চাকরির শুরুতেই। না খুললে অসুবিধা নেই। ২ বছর পর বাধ্যতামূলক ভাবে খুলতে হবে। অল্প টাকা কাটাবেন। ১৫০০ বা ২০০০ টাকা মাস প্রতি। সুদমুক্ত জিপি ফান্ড খুলার ব্যবস্থা আছে। আপনি চাইলেন সুদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে ব্যাসিকের ২৫% এর বেশি জমা রাখা যায় না।

১৯, আসছে জুলাইতে আয়কর দিয়ে দিবেন। TIN নম্বর সংগ্রহ করে ফেলবেন। নতুবা পরবর্তী জানুয়ারি মাসে বেতন নিয়ে ঝামেলায় পরবেন।

২০, আপনি যদি ক্যাডার মাইগ্রেশন করে প্রশাসন ক্যাডারে যেতে চান তবে চাকরি স্থায়ী করত চাকরির ১০ বছর পরে ক্যাডার মাইগ্রেশন করতে পারবেন। ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে পরবর্তী পদে ২৫% টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। আপনার ইচ্ছা থাকলে কেউ আটকাতে পারবেনা আপনাকে। সেজন্য সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা পাশের পর থেকে ক্যাডার মাইগ্রেশনের জন্য একটি পরীক্ষা দিতে হয়। সিনিয়র ভাইদের ও পরিচিত প্রশাসন ক্যাডারের কাছ থেকে সেই ব্যাপারে সাহায্য নিবেন।

২১, এসি আর এ নাম্বার প্রসঙ্গ :
এসি আরে নাম্বার যেন ৯৪ বা তার উপরে হয়। পারলে ৯৮ বা ৯৯ দিতে বলবেন। এটা কম দেয়ার কিছু না। বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের অফিসারদের এসি আর নাম্বার সবসময় ১০০ ই দেয়। প্রশাসন, পুলিশ ও সচিবালয় এ সবাই ৯৮- ৯৯ করেই পায়। যারা ক্যাডার মাইগ্রেশন করবে তাদের জন্য ভীষণ জরুরি।

লেখকঃ

নুরুল আমিন
রংপুর মেডিকেল কলেজ।
( ৩৩তম বিসিএস)

ওয়েব টিম:

View Comments (31)

Related Post