X

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস

সুইসাইড শব্দটি ল্যাটিন ” সুই সেইডার ” থেকে আগত যার আক্ষরিক অর্থ ” নিজেকে হত্যা করা ” । মূলত কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়া বিশেষই হল আত্মহত্যা । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যার শিকার এবং সেই হিসেবে আত্মহননের মাধ্যমে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে । উল্লেখ্য , ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে (১৫-২৯) বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে । তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে international association for suicide prevention কর্তৃক প্রতি বছর ১০ই সেপ্টেম্বর ” বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ” পালিত হয় যার এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ” working together we prevent suicide ” । উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের মে মাসে বিভিন্ন দেশ হতে ১৯৪ জন প্রতিনিধি নিয়ে ৬৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে , (২০১৩ থেকে ২০২০ সাল ব্যাপী ) মেন্টাল হেল্থ একশন প্ল্যান নির্ধারণ করা হয় এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চারটি মূল বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় । যথা :
১ . মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ফলপ্রসূ নেতৃত্ব জোরদারকরণ
২. উন্নত এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ
৩. মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রচারণা ও প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন
৪. মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণায় প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সমূহ যাচাইকরণ

আত্মহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনার লক্ষ্যে সমগ্র বিশ্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে SAMSHSA , AAS, AFSP , NSPL, NIMH প্রভৃতি কাজ করে যাচ্ছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী , বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান এবং বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন ব্যক্তি আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে । বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যার হার কমানোর লক্ষ্যে ২০১৩ সালে অলাভজনক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান “কান পেতে রই ” এর যাত্রা শুরু হয় যেখানে , যে কোনো ব্যক্তি শুধু মাত্র ফোনকলের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনো কাউন্সেলিং লাভ করতে পারে । তবে উল্লেখ্য এর ব্যাপ্তি এখনো সীমিত পরিসরে কার্যকর যার দরুন প্রকৃত পক্ষে দেশে আত্মহত্যা রোধে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং পদক্ষেপ সমূহ এখন সময়ের দাবি । The Lancet Psychiatry , volume 6, Issue 1, PE1, January 1, 2019 অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ১০০০০০ জনের জন্য গড়ে ০.০৭৩ জন সাইকিয়াট্রিস্ট রয়েছেন যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য । এছাড়াও একই সূত্রের আরেকটি জরীপে দেখা যায় , দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের কেবল ০.৪৪ শতাংশ ব্যয় করা হয় মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ।

হৃদিতা রোশনী
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ

Platform:
Related Post