X

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস ঃ গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ

লিখেছেনঃ ডাঃ মারুফুর রহমান অপু

গুজবে কান্দিবেন না!
আজকালের মধ্যে একটা খবর ভাইরাল হবে বা হচ্ছে সেটা হল “বাংলাদেশে পাওয়া গেছে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী/ জিকা ভাইরাস এখন বাংলাদেশে…..

সাধারন মানুষের কাছে আতকে ওঠার মত খবরই বটে। তবে শিরোনামে বিভ্রান্ত না হয়ে ভেতরে পড়লে বুদ্ধিমানেরা অনেকেই বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশে রোগ বিস্তার নিয়ে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান IEDCR। প্রতিষ্ঠানটির দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অনেক। প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে মহামারী হবার মত রোগগুলোর উপর গবেষণার জন্য আক্রান্ত রোগীদের থেকে তারা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে। ২০১৪ সালে ডেংগু ও চিকনগুনিয়া (দুটোই এডিস মশাবাহিত) রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের থেকে কিছু রক্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে কিছু নমুনাতে ডেংগু ও চিকনগুনিয়া পাওয়া যায় নি কিন্তু রোগীর একই রকম রোগ লক্ষণ ছিলো। সেসব নমুনা আবার পরীক্ষা করার সময় দেখা যায় ২০১৪ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যাক্তির শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনাতে জিকা ভাইরাস এর উপস্থিতি ছিলো অর্থাৎ তিনি সে সময়ে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। IEDCR এর গবেষকেরা বলেন, বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই জিকা ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা আছে এর কারন জিকার বাহক এডিস মশা বহু আগে থেকেই এখানে বিদ্যমান। এর অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশে জিকা মহামারী আছে। আসলে জিকা ভাইরাস বহু আগে থেকেই বিভিন দেশে বিশেষ করে আফ্রিকায় ছিলো (প্রথম সনাক্ত করা হয় ১৯৪৮ সালে)। সম্প্রতি ব্রাজিলে এটি মহামারী আকারে দেখা দেয় এবং একই সাথে ছোট মাথার বাচ্চা (এনেনকেফালি) হবার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। এটা থেকে ধারনা করা হয় গর্ভবতী মহিলারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাচ্চার এনেনকেফালি হতে পারে যদিও সরাসরি সম্পর্ক এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায় নি। আর্জেন্টাইন একদল গবেষক বলছেন ব্রাজিলে সরবরাহকৃত পানিতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়েছে যার থেকে এনেনকেফালির প্রবণতা বাড়তে পারে। এমনিতে জিকায় আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারন জ্বর, শরীরে ব্যাথা ও র‍্যাশ, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি থাকে, এটি ৫-৭ দিনে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত জিকায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বা হসপিটালে ভর্তির রেকর্ড নেই।

তাহলে আমরা কি প্যানিকড হবো?
জ্বি না, দেশ জিকা ভাইরাসে সয়লাব মনে করে দুশ্চিন্তিত হবার কোন কারন নেই। যে নমুনা পাওয়া গেছে সেটি ২০১৪ সালের। এছাড়া ব্রাজিলে জিকা মহামারী জনিত জটিলতা যেমন এনেনকেফালি বাংলাদেশে প্রকট নয়।

তাহলে আমরা কি সচেতন হবো?
জ্বি অবশ্যই। জিকার বাহক জিকা ছাড়াও ডেংগু ও চিকনগুনিয়া রোগ ছড়ায়। এগুলো থেকে বাচতে মশারি ব্যাবহার করুন। বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, জমে থাকা পানি, মশার বাসস্থান ধ্বংস করুন।

সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন

 

Ishrat Jahan Mouri: Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation
Related Post