X

ফিরে দেখা ত্রিভুবন বিমান দুর্ঘটনাঃ ভাল থাকুক ওপারের নবীন ডাক্তাররা

সম্পাদকীয়
ফিরে দেখা ত্রিভুবন বিমান দুর্ঘটনাঃ ভাল থাকুক ওপারের নবীন ডাক্তাররা

১২ই মার্চ, ২০১৮!
চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা শেষ করে, দেশের পথে উড়ে যাচ্ছে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের কয়েকজন মেডিকেল শিক্ষার্থী। চোখে মুখে পাঁচ বছরের ক্লান্তি। সদ্য শেষ হওয়া দীর্ঘ পরীক্ষার যাঁতাকলে পরিশ্রান্ত। তবুও মনের মাঝে উচ্ছ্বাস, কিছুদিন পরেই নামের পূর্বে ডাক্তার লেখার সম্মান হাতছানি দিচ্ছে।
শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের সদা হাস্য-উজ্জ্বল ছেলেটার নাম পিয়াস রায়। ছোট বেলা থেকেই ভ্রমন পিপাসু ছেলেটা ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়তো, ঘর ছেড়ে। অবসর সময়ে ঘুরতে যেতেন দেশ থেকে দেশান্তরে। কয়েকদিন আগে তারও শেষবর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মত ভ্রমন গন্তব্য হিমালয়ের দেশ, নেপাল। বিমানের সিড়িতে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ ফোন দিয়েছিল মায়ের কাছে, ‘মা, আমি যাচ্ছি। প্লেনের ভিতর নেটওয়ার্ক থাকবে না। কোন চিন্তা করবা না। পৌঁছে ফোন দিব।’ পিয়াস ঠিকই পৌঁছেছিল, কিন্তু মায়ের কাছে আর ফোন দেয়া হয় নি।

কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের শ্রেয়া ঝাঁ! রবিবার টার্ম পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সময়, নেপাল থেকে শ্রেয়া ঝাঁ এর দাদার মৃত্যু সংবাদ আসে। ছুটির আবেদন করেন এবং ছুটি মঞ্জুর হলে সোমবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে।

দুপুর আনুমানিক আড়াইটা। নেপালের কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন বিমান বন্দরের রানওয়েতে বিএস ২১১ ফ্লাইটের চাকা স্পর্শ করে। প্রচন্ড জোড়ে ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে বিমান এবং তারপরই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে। মূহুর্তেই তছনছ হয়ে যায় ইউ-এস বাংলার বিমানটি এবং সাথে কিছু সাজানো স্বপ্ন!

আর ফিরে আসেনি তারা! ছুটি নিয়ে চিরতরে না ফেরার দেশে যাত্রা! যারা এই দুর্ঘটনায় বেঁচে আছে, তারা শুধু বেঁচে আছে ভয়ংকর মানসিক ট্রমা নিয়ে। এই মৃত্যু মেনে নেয়া সম্ভব নয়!

তবুও সময় সময়ের নিয়মে চলে। যথা সময়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হল। জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের নিহত ১২ জন শিক্ষার্থীই আজ ডাক্তার, কিন্তু শুধু তারা নেই। বিমান দুর্ঘটনা থেকে বন্ধুদের মধ্যে, ফিরেছে শুধু একজন, ডা. সামিরা। যে মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছে, তা শুধু সামিরা’ই অনুভব করতে পারবে!
পিয়াসের মা পূর্নিমা রায় আজও হয়ত ছেলের ফোনের অপেক্ষায় বসে থাকে, ‘মা আমি ঠিক ভাবে পৌঁছেছি। খুব শীঘ্রই ফিরবো, চিন্তা করো না।’

শ্রেয়া ঝাঁ’র দাদার মৃত্যু সংবাদের সাথে আরেকটি মৃত্যু সংবাদ যোগ হলো। দাদা এবং নাতনীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এক সাথেই হতে হলো। কিভাবে এই শোক ভুলবে তার পরিবার!

সৃষ্টিকর্তার কাছে কি আর চাইবার আছে! শুধু ওপারে ভাল থাকুক আমাদের সেই নবীন ডাক্তাররা!

-ডা. নিলয় শুভ

ওয়েব টিম:
Related Post