X

পোস্ট গ্রাজুয়েশনঃ বিষয়টি যখন চোখ

লেখকঃ ডাঃ যাকিয়া সুলতানা নীলা
এম বি বি এস (ডিএমসি;কে ৫৯), এম এস চক্ষু(৩য় পর্ব, থিসিস)
এফসিপিএস(কোর্স), ২৮ তম বিসিএস

চোখ যে মনের কথা বলে কিন্তু মেডিকেল সাইন্সে চোখ মন আর রোগ সবকিছুর কথা বলে। হোক সে ডায়বেটিস অথবা হাইপারটেনশন অথবা ক্রনিক লিভার ডিজিজ চোখ সিগনাল দেবেই । চোখের ভাষা জানতে তাই অনেকে হতে চান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ।

প্রথমেই বলব আনন্দের কথা । Ophthalmology  একটি বহু মাত্রিক বিষয় ।এখানে চেম্বার এবং সার্জারি সব দিকেই সমান সুযোগ আছে ।যে কেউ ফিজিশিয়ান আর সার্জন উভয় ক্যরিয়ার এনজয় করতে পারবে ।এই দেশে গাইনি আর পেডিয়েট্রিক্স এর পর সব চাইতে বেশী কর্ম সংস্থানের সু্যোগ এখানে । সরকারী আর বেসরকারী  উভয় সেক্টরেই প্রচুর কাজ করার সুযোগ আছে । ঢাকার বাইরে এমনকি প্রত্যন্ত মফস্বলেও আছে কাজের ক্ষেত্র । এখন চোখের সুপার স্পেশালিটি অনেক গুলি ঃ    Retina, Neuro- Ophthalmology, Glaucoma, Cataract, Cornea, Oculoplasty and Community Ophthalmology . এই প্রত্যেক শাখায় রয়েছে উন্নত ক্যারিয়ারের সুযোগ। আমাদের দেশের চক্ষু চিকিৎসা এত উন্নত  ও সুলভ যে এখানে  চিকিৎসা যোগ্য অন্ধত্তের হার দ্রুত কমে যাচ্ছে । আমাদের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ গন তাদের সেবা আর শ্রমের মাধ্যমে এই দেশের চক্ষু চিকিৎসা সেবায় বিপ্লব আনতে সক্ষম হয়েছেন।

অনেকের ধারণা এটা খুব আরামের বিষয়  ইমারজেন্সি কোন কাজ নাই । এটা হল ভুল ধারণা । ঢাকায় আই ইন্সটিটিউট থাকায় ডিএমসি আর মিটফোর্ড এ চাপ একটু কম। একটু কম মানে কিন্তু ইমারজেন্সি না থাকা নয়। এই দুই মেডিকেল এর সিএ রাও রাত ৮ টার আগে বাসায় যেতে পারে না । আই ইন্সটিটিউটে আর ঢাকার বাইরে যে কোন মেডিকেল এ ২৪ ঘন্টা ইমারজেন্সি থাকে । এখানকার ইমারজেন্সি গুলিতেও তাৎক্ষণিক সেবা দিতে হবে এবং সেই সেবা শ্রম সাধ্য । তাই আরামের ইচ্ছা থাকলে এখানে না আসাই ভালো ।

এই বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে হলে প্রচুর ধৈর্য আর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে । কারন পড়তে হবে এমন অনেক বই যার নাম কেউ এমবিবিএস লাইফে শোনে নাই । এগুলো পড়া অনেক কষ্ট সাধ্য  ও সময় সাপেক্ষ । এই দেশে সরকার স্বীকৃত পাঁচটি ডিগ্রী করা যায় এই বিষয়ে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী হল ডিপ্লোমা, এমএস ও পিএইচডি । বিসিপিএস এর ডিগ্রী হল এমসিপিএস ও এফসিপিএস ।

ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর সুযোগ পাওয়া যাবে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দেওয়ার ।      পেপার ওয়ানের বই হল   : Ocular Anatomy and Physiology (Khorana) , Neuro Anatomy (Snell), Ocular Anatomy (Snell), Head-Neck part and Brain-Eyeball Part (Dutta),Ocular Anatomy (Wolf), Pharmacology (Vision)

পেপার টু এর বই হল : Ocular Anatomy and Physiology (Khorana) ,Nervous System , Cardio-vascular System, Respiratory System , Endocrine System , Electrolyte-Body fluid , Acid Base Balance, Metabolism ( Ganong, Vision), Biostatistics ( মোজাম্মেল স্যারের বই : ABC)

পেপার থ্রি এর বই হল : Clinical Ophthalmology (Kanski), Basic Pathology (Robbins),Microbiology (Lange,Khaleque), Ocular pathology (Greer’s)

Ocular Anatomy and Physiology (Khorana), Clinical Ophthalmology (Kanski) এই দুই বই পড়তে পড়তে মোটামুটি দাঁত সব ভেঙ্গে যাবে । কারণ এই বই দুইটি একেবারেই অজানা থাকে এমবিবিএস লাইফে । পাসের হার আতংক জনক ভাবে কম । কি আমার কথা ভুল মনে হচ্ছে ?? এই জানুয়ারি( জানুয়ারি,২০১৪) তে ২০+ পাস করেছে এটা খুব রেয়ার । কারণ সচরাচর ৩/৪ জন পাস করে ; এমনকি এমন ও টার্ম আছে যখন একজন ও পাস করে নাই । গত ১০/১২ বছর ধরে  এমনি চলছে । বিসিপিএস এর চারটি বিষয়ে পাস করা খুব কঠিন ঃ Anaesthesia , Ophthalmology, ENT, Radiology . এই পর্যন্ত বিসিপিএস এর ইতিহাসে এই বিষয়ে যতজন পার্ট ওয়ান পাস করেছে তাদের মধ্যে হাতে গোনা ৫/৬ জন প্রথম বার মানে ইন্টার্নশিপ শেষ করার দুই মাসের মধ্যে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পাস করেছে । এখানে ৬ থেকে ১৮ মাসের প্রিপারেশন লাগে । তাই অনেকেই এই সময় প্রিপারেশন নিয়ে এই সময় পার করেই প্রথমবার পরীক্ষা দেয়।। সংগী বন্ধুরা অন্যান্য বিষয়ে পাস করে যখন হাওয়া খেয়ে বেড়াবে তখনও হয়ত তোমাকে বই নিয়ে বসে থাকতে হবে । তাই এই মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। হতাশ হলে চলবে না পথ যত বন্ধুর তা পেরুনোর আনন্দ তত বেশী । আমি বলবো এই বিষয় এ পার্ট ওয়ান করতে হলে কোচিং এর কোন প্রয়োজন নাই । কারন তা কোন কাজে আসবে না । বিসিপিএস এ বেসিক ক্লাস করলে তা বেশী উপকারে আসবে । আসলে এত সময় লাগার কথা ছিল না যদি আমরা Kanski  টাও এমবিবিএস লাইফে পড়তাম । তাহলে আর এই বই নতুন মনে হত না । আমাদের স্যার গণ ফিফথ ইয়ারে এই বই পড়তে বললেও তখন আমরা শুনিনাই । গুরুর কথা না শুনলে মাসুল দিতেই হবে । যারা এমবিবিএস এখনো শেষ কর নাই কিন্তু ভবিষ্যতে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হতে চাও তারা একটু একটু করে Kanski যদি পড়তে পারো তাহলে পরবর্তীতে দেখবে প্রথম বারই পাস হয়ে যাবে ।  ছয় মাসে প্রতিদিনে একপাতা বেশী পড়া তোমার জীবনের একটি বছর বাঁচিয়ে দেবে ।পার্ট ওয়ানের পর তিন বছর ট্রেইনিং এর পর এক বছর কোর্স এর পর পার্ট টু । ১০ বারের মধ্যে তা পাস করতে হবে ।

এমসিপিএস ডিগ্রীর জন্য ইন্টার্নশিপ শেষ হবার পর তিন বছর পার হতে হবে আর Ophthalmology  ট্রেনিং থাকতে হবে এক বছর । পড়তে হবে পুরো এফসিপিএস ২য় পর্বের মত । তাই এই বিষয়ে এখন নাই বা বললাম ।

ডিপ্লোমা আর এমএস এর জন্য ভর্তি  পরীক্ষা দিতে হবে ইন্টার্নশিপ শেষ হবার এক বছর পর ।ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন স্বাভাবিক , সার্জারির অন্যান্য বিষয়ের মত ।

ডিপ্লোমা সহজ মনে হলেও ভর্তি হয়ে তা পাস করার জন্য এফসিপিএস ২য় পর্বের প্রস্তুতি থাকতে হবে । এখন ডিপ্লোমা তে OSPE , রিটেন , ভাইভা সব দিতে হয় কমপ্লিট করতে । তাই এখানেও প্রচুর শ্রম দিতে হবে ।

এমএস দুই ধরণের রেসিডেন্সি এবং নন রেসিডেন্সি । রেসিডেন্সি তে পার্ট এ দুই বছরের এবং পার্ট বি তিন বছরের । নন রেসিডেন্সিতে ভর্তি হবার পর ৬ মাস পার্ট ওয়ান কোর্সের পর পরীক্ষা ঃ পেপার ওয়ানে এনাটমি + ফার্মাকোলজি , পেপার টুতে ফিজিওলজি + বায়োকেমিস্ট্রি , পেপার থ্রি তে প্যাথলজি + মাইক্রোবায়োলজি । রিটেন এর জন্য এমবিবিএস এর সব বই আর এফসিপিএস পার্ট ওয়ানের বই গুলি লাগবে । হার্ড পার্ট এ স্কাল লাগবে , সফট পার্ট এ ভিসেরা তে ব্রেইন , লাংস, হার্ট , লিভার, কিডনি এই গুলি লাগবে । এনাটমি তে হিস্টোলজির স্লাইড আর প্যাথোলজির স্লাইড থাকবে । দুই বছর ট্রেনিং এর পর পার্ট টুতে ৬ মাসের কোর্স । পার্ট টু- তে দুই পেপার ঃ পেপার ওয়ানে রিটেন – Principle of surgery  (Bailey and Love), ভাইভা – Bailey and Love, Makhonlal, S das, Bhattachariya, RCS (long case + Short case) সব লাগবে । পরীক্ষার স্টাইল হুবহু ফাইনাল প্রফের জেনারেল সার্জারির মত হবে লং কেস, শর্ট কেস ,টেবিল ভাইভা( কোন কার্ড প্রশ্ন ছাড়া)। প্রশ্নের মান হবে অনেক কঠিন ; অন্যান্য সার্জারির  ডিসিপ্লিন এর মত প্রশ্ন হবে । Ophthalmology  রিলেটেড কোন প্রশ্ন হবে না । পেপার টু তে থাকবে Biostatistics, Genetics, Immunology and Clinical এই চার টি বিষয়  । এই পড়ার বহর দেখে নিশ্চয়ই পাসের হার কত কম তা বোঝা যাচ্ছে । কিন্তু ইচ্ছা আর শ্রম দিয়ে সব জয় করা যায় । তবে সব কিছুর জন্য ৮ টার্ম ( প্রতি পার্টের জন্য ৮)।  এর পর দুই বছর মেয়াদি থিসিস পর্ব ।

এই বেসিক পোস্ট গ্রেজুয়েশন শেষ করার পর পিএইচডি আর Super specialty তে ফেলোশিপ করা যাবে ।

ট্রেনিং করা যাবে কমপক্ষে সহকারী অধ্যাপক আছেন এমন যে কোন সরকারী মেডিকেল এ , এছাড়া BSMMU, NIO,BIRDEM, ISLAMIA, Lion’s, CHITTAGONG EYE INFERMARY তে।

এইবার ক্যারিয়ার এর বিষয় । এখানে ক্যারিয়ার একটু ব্যয় সাধ্য বটে । বিশেষজ্ঞ হবার পর একটি কাজ করার মত চেম্বার সাজাতে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ এখানে । ভালো একটি স্লিটল্যাম্প, একটি অটো রিফ্র্যাক্টোমিটার, টনোমিটার আর অন্যান্য টুকিটাকি মিলিয়ে এই খরচ হবেই । এই গুলি ছাড়া ত চেম্বার হবে না । টর্চ লাইট দিয়ে ত চেম্বার হয় না । ভালো স্লিট ল্যাম্প এর দাম ই ১০/১২ লাখ টাকা ।  আর যদি ওটির কিছু যন্ত্রপাতি কেনার টারগেট থাকে তাহলে আরো কয়েক গুন বেশী খরচ হতে পারে । তাই এই বিষয়েও প্রস্ততি নিতে হবে ।

আবারো বলছি এই দেশে গাইনি আর পেডিয়েট্রিক্স এর পর সব চাইতে বেশী কর্ম সংস্থানের সু্যোগ এখানে । তাই যারা চাও চক্ষু বিশেষজ্ঞ হতে সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড় বই নিয়ে লাইব্রেরীতে ।

ডক্টরস ডেস্ক: bddoctorsplatform@gmail.com

View Comments (4)

  • Apu ami apnar sate akmot..khali aita bolte chai j slit lamp oto valo na nile 50thousand r modhe motamoty pawa jay.plus autorefractometer chinese 2lac tk e pawa jay.thaole j keo chamber r expense chinta kore ashahoto na hoe minimum 3lac tk e eye chamber dite parbe.

Related Post