X

পিপিই জনিত ত্বকের ক্ষতি এবং প্রতিকার

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার প্রধান ঢাল পিপিই। পিপিই ব্যবহারের সাথে ত্বকের ক্ষতি জনিত সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সাধারণ কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারলে ত্বকের ক্ষতি জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কেন পিপিই ব্যবহার করার কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়?

বর্তমানে ডাক্তারদের পিপিই ব্যবহার অতীতকালের চেয়ে বেশি। বাজারে প্রচলিত পিপিই এককালীন ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা এবং মাস্ক ৪ ঘন্টার বেশি ব্যবহার না করাই ভাল। এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে মানসম্মত পিপিই সংকটের কারণে আমরা একই পিপিই দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করছি। শরীরের ঘাম, গরম, বারবার ত্বকের সাথে পিপিই ঘষা লাগার ফলে আমাদের ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে যা intertriginus dermatitis (এক ধরনের ত্বকের প্রদাহ) এর মূল কারণ।

হাতে দীর্ঘক্ষণ গ্লাভস পড়া, বার বার হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার এর ফলে হাতের চামড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্লাভস হাতের আদ্রতা প্রতিবন্ধক যার ফলে contact dermatitis, maceration and erotion of the epidermis হচ্ছে।

২০০৬ সালে সিঙ্গাপুর এর একটি হাসপাতালে পিপিই ব্যবহার এর সাথে ত্বকের ক্ষতি জনিত সমস্যার উপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপ অনুযায়ী ৩০৭ জন সদস্যদের মধ্য খুব মারাত্মক ত্বকের ক্ষতি লক্ষ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে N95 ব্যবহারকারী ৬০% এর মধ্যে acne, ৩৬% এর মধ্যে rash এবং ৫১% মধ্যে itch and dermatitis সমস্যা লক্ষ করা হয়। এধরনের ত্বকের সমস্যা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।

শুরুতে আমরা জানতাম SARS-CoV-2 ড্রপলেট এর মাধ্যমে ছড়ায়। কিছুদিন পর এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে ফলে সার্জিক্যাল মাস্ক এর পরিবর্তে N95 মাস্কের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। N95 মাস্ক এর ডিজাইন এমন ভাবে করা হয় যেটা স্কিনের সাথে সরাসরি স্পর্শ করে থাকে।দীর্ঘ সময়ের প্রেশার এবং আদ্রতার কারণে কারণে মাস্ক এর আউটলাইন এর সরাসরি স্পর্শে থাকা জায়গা লাল হয়ে যায় । তাছাড়া নাক, গাল কানের পিছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা পরবর্তীতে আলসার এর কারণ হয়ে দাড়ায়।

এ অবস্থায় কিভাবে ত্বকের পরিচর্যা করা যায়?

পিপিই জনিত ত্বকের ক্ষতি চিকিৎসা জন্য ৩ স্তরের একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে।
প্রথম স্তর : সাধারণ এবং ক্ষতহীন ত্বক। (general skin)
দ্বিতীয় স্তর : ক্ষত তৈরি হয় নি কিন্তু চামড়া লালচে হয়েছে যা টিস্যু ক্ষতির সম্ভাবনা নির্দেশ করে। (Non-blanching erythema)
তৃতীয় স্তর (সর্বোচ্চ স্তর) :
যেকোন ধরন এবং ডিগ্রির চামড়ার ক্ষত।

চামড়া লাল হয়ে গেলে সাধারণত ২০-৩০ মিনিট পর তা সেরে উঠে আর যদি লালচে ভাব না যায় তাহলে একে দ্বিতীয় স্তরের ক্ষত হিসেবে ধরে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই চামড়া কে ঘষা যাবে না এতে টিস্যুর ক্ষতি হবে। প্রত্যেক স্তরের জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

প্রথম স্তরের ব্যবস্থাপনা :

পিপিই খোলার পর মুখমন্ডল, হাত ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিত্যদিনের ব্যবহার করা moisturizing cream ব্যবহার করতে হবে। ক্রীমে থাকা acrylate polymers কিংবা dimethicone ত্বকের আদ্রর্তা ধরে রাখতে সাহায্যে করে। এক্ষেত্রে কোণ ধরনের ointment ব্যবহার করা যাবে না।

পিপিই পড়ার ১-২ ঘন্টা আগে ক্রিম দিতে হবে এতে ত্বক ক্রীমকে ভালভাবে শোষণ করে নিবে। ক্রীম শুকানোর পরই পিপিই পড়তে হবে।
Oil based cosmetic যেমন ফাউন্ডেশন কিংবা ভ্যাসলিন ব্যবহার করা যাবে না।

গগজ পড়ার ৫ মিনিট পূর্বে alcohol-free skin barrier wipe ব্যবহার করতে হবে। চোখ এবং মুখ বাদ দিয়ে মুখমন্ডলের নাকি অংশে লাগাতে হবে (T- zone)। পরিপূর্ণ ভাবে শুকানোর পর পিপিই পড়তে হবে।

নিজের সাধারণ ত্বকের যত্নে যথাসম্ভব নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।

দ্বিতীয় স্তরের ব্যবস্থাপনা :

Non-blanching erythema ক্ষেত্রেও প্রথম স্তরের ব্যবস্থাপনা প্রযোজ্য তবে পিপিই পরিধান করার আগে skin barrier wipe ব্যবহার করতে হবে।অতিরিক্ত কিছু ব্যবহার করার আগে অবশ্যই পরামর্শ করে নিতে হবে। skin barrier wipe কুশনের মত কাজ করে যাতে সরাসরি চামড়ার কোন ক্ষতি না হয় তবে প্রেশার কমানোর ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে না। সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে কুশন হিসেবে। এছাড়াও thin adhesive foam, silicone adhesive sheet (perforated or non perforated), thin hydrocolloid sheet ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহারের পূর্বে কেটে উপযুক্ত আকার দিয়ে নিতে হবে। N95 মাস্ক এর নিচে কোন কিছু ব্যবহার করলে তা মাস্ক এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে তাই ব্যবহারের পূর্বে উপযোগিতা এবং সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

তৃতীয় স্তরের ব্যবস্থাপনা (সর্বোচ্চ) :

এক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের মত সাধারণ প্রতিরোধমূলক নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যদি open wound হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ক্ষত শুকানোর জন্য সময় নেয়া উচিত। কোন ধরনের গ্লু ব্যবহার না করাই উত্তম। open wound পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষে জানাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষত শুকানোর আগে বার বার পিপিই পড়ে কাজ করলে ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগবে।

অর্থাৎ, সংক্ষেপে ত্বকের যত্ন‌ের ধাপ সমূহ :

১. বাসায় (পিপিই পড়ার ১-২ ঘন্টা আগে কাজে যোগদান করার পূর্বে)

– হাত মুখ ভালভাবে পরিস্কার করতে হবে এবং শুকাতে হবে।
– হাতে মুখে moisturizing crem লাগেতে হবে এবং ভালভাবে শুকাতে হবে।

২ কর্মক্ষেত্রে পিপিই প্রধানের পূর্বে :

– শুকনো ত্বকে skin barrier wipe দিতে হবে : কপাল, নাক, কান, গাল (যদি দরকার হয়)

– ৯০ সেকেন্ড সময় দিতে হবে শুকানোর জন্য যাতে আঠালো ভাব না থাকে।

৩. পিপিই পরিধান সম্পন্ন।

যারা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন ধরণের ত্বকের সমস্যাতে ভুগছেন তাদের জন্য পিপিই ব্যবহার এর ফলে আরও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ গ্লাভস পড়া, বারবার হাতে সাবান ব্যবহার করার ফলে ত্বকের আদ্রতা কমে যাচ্ছে। এতে eczema এবং psoriasis এর সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মুহূর্তে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজের যত্ন নিতে হবে এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ Medscape

নিজস্ব প্রতিবেদক / বেনজির জাহাঙ্গীর নুয়েল

Platform:
Related Post