X

পাল্স অক্সিমেট্রি এবং কোভিড-১৯

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২ এপ্রিল, ২০২১, শুক্রবার

লেখাঃ ডা. মুশফিক নেওয়াজ আহমেদ
এমডি রেসিডেন্ট (পালমোনোলজি)
ফেজ বি, এন আই ডি সি এইচ

কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অসম্ভব বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে সীমাবদ্ধতা। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় ভর্তি পরিহার করে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া এবং বাসায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি পূর্বানুমান করতে পারার কোনো বিকল্প নেই।

রক্তে অক্সিজেনের ঘনমাত্রা যাকে এখন বলা হচ্ছে “ফিফথ ভাইটাল সাইন” তার পরিমাপক মাধ্যম হিসেবে পাল্স অক্সিমিটার এর ব্যবহার আমরা সবাই জানি। কিছু ছোটখাটো ব্যাপার মাথায় রাখলে এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা এর সর্বোচ্চ প্রায়োগিক দিক বের করে আনতে পারব।

কখন ব্যবহার করতে হয়?

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত বাসায় আইসোলেশন এ থাকা যেকোনো সিম্পটমেটিক ব্যক্তি যদি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন ঠিক তখন অথবা শ্বাসকষ্ট অনুভূত না হলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর অক্সিজেনের ঘনমাত্রা দেখতে পারেন(দেখার ফ্রিকোয়েন্সীর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকলেও দুটি রিকমেন্ডেশন বলছে দিনে অন্তত ২ অথবা ৩ বার দেখা। অযাচিত উৎকন্ঠার ভয় থাকলেও এর চেয়ে বেশি বার দেখা তে বাধা নেই। যেহেতু কোভিড-১৯ এ লক্ষণ ছাড়াও রক্তে অক্সিজেনের ঘনমাত্রা কমে যেতে পারে যাকে বলা হচ্ছে Happy Hypoxia/ Silent Hypoxia।

কিভাবে ব্যবহার করা উচিত?

✓ ব্যবহারের আগে হাত একটু ঘষে উষ্ণ করে নেওয়া
✓ রুমে আলোর পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে নেওয়া
✓ যেকোনো হাতের ইন্ডেক্স অথবা মিডল ফিংগার কে প্রাধিকার দেওয়া
✓ আঙ্গুল এমনভাবে প্রবেশ করানো যেন আংগুলের অগ্রভাগ ডিভাইসের শেষ প্রান্তে স্পর্শ করে
✓ নেইল পলিশ (লাল ব্যতীত অন্য যেকোনো) থাকলে সে আঙ্গুল পরিহার করা, সবগুলো আংগুলেই যদি নেইল পলিশ থাকে সেক্ষেত্রে জরূরী মুহূর্তে ডিভাইসটি আংগুলে উপর-নিচ স্থাপন না করে পাশাপাশি স্থাপন করা
✓ যে হাতের আঙ্গুল এ ডিভাইসটি ব্যবহৃত হচ্ছে তা যেন স্থির থাকে তাই সমতলে হাতটি রেখে তারপর ডিভাইসটি সংযুক্ত করা
✓ প্রথম রিডিং দেখেই সিদ্ধান্তে না পৌঁছে অন্তত ৩০-৬০ সেকেন্ড পর যে রিডিং পাওয়া যাবে তাকে আমলে নেওয়া
✓ সর্বোপরি একটি ভালো মানের পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করা এবং ব্যাটারি হেলথ এর ব্যাপারটা মাথায় রাখা

ইন্টারপ্রিটেশন কি হবে?

অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে যদি আগে থেকে ফুসফুসের কোনো রোগ না থাকা কারো SpO2 ৯৪% এর নীচে চলে আসে। দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের রোগে ভোগা ব্যক্তির বেলায় এক্ষেত্রে SpO2 হবে ৮৮% এর কম!

পরিশ্রম জনিত হাইপোক্সেমিয়ার কোনো ভূমিকা আছে কিনা?

কিছু রিকমেন্ডেশন বলছে Early Predictor হিসেবে Exercise induced Hypoxia র ভূমিকা আছে। দুটো উপায় এখানে বলা হচ্ছে- একটি One Minute Sit to Stand Test(STST), অপরটি 40 step walk test! এখানে ভ্যালিডেটেড হচ্ছে One minute STST!

প্রথমে স্থির অবস্থায় SpO2(বেইসলাইন) দেখে নিতে হবে, এরপর একটি চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমর রেখে এবং শিরদাঁড়া সোজা রেখে যতটা দ্রুত সম্ভব চেয়ারে বসা এবং উঠা, ১ মিনিট শেষে পুনরায় SpO2 দেখে নেওয়া- ১ মিনিট পর যদি SpO2 বেইসলাইন এর চেয়ে ৩% এর বেশি কমে আসে তাহলে বুঝতে হবে তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে(যদিও কোনো কোনো রিকমেন্ডেশন হচ্ছে এই পরীক্ষাটি হসপিটাল সেট আপ এ করা এবং বেইসলাইন ৯৬ % এর কম থাকলে না করা। কিন্তু বাস্তবতা সাপেক্ষে এবং জটিলতা তথা মৃত্যুহার এড়াতে বাসায় এ পরীক্ষাটি করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।)

তথ্যসূত্রঃ
https://www.bmj.com/content/372/bmj.n677

https://emj.bmj.com/content/38/2/88

হৃদিতা রোশনী:
Related Post