X

নিজ সন্তান হত্যা বা ফিলিসাইড

নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করাকে বলে ফিলিসাইড। একে প্রোলিসাইডও বলে। ফিলিসাইড বিরল মানসিক রোগ ‘ম্যানচুজেন সিনড্রোম’ বা ‘মেনচুজেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’ এর মতো। তবে পুরোপুরি মানসিক রোগের কাতারে একে এখনো ফেলা হয় নি। একেক ফিলিসাইড একেক রকম। নির্ভর করবে পারিপার্শ্বিক এর উপর।

সারা বিশ্বেই এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। আমেরিকাতে বছরে প্রায় চারশত শিশু বাবা-মা দ্বারা এরকম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। মা দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে বলে ম্যাটারনাল ফিলিসাইড, বাবা দ্বারা হলে বলে প্যাটারনাল।

বেশির ভাগ মা’রাই জড়িত থাকে। বাবা খানিকটা কম জড়িত। ষাট ভাগ বাই চল্লিশ ভাগ। বাচ্চার অনিশ্চিত পরিণতির কথা ভেবে, কিংবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে। আরো অনেক কারণে হয়ে থাকে। ক’দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম অভাবের তাড়নায় মা তার দুই সন্তান সহ আত্মহত্যা করেছে।

ম্যানচুজেন সিনড্রোম হলো একটি মানসিক রোগ। নিজেকে অসুস্থ ভাবা, ঘোরতর অসুস্থ হিসেবে প্রমাণ করা, নিজেকে অসুস্থ হিসেবে উপস্থাপন করা, অযথা বার বার ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া এবং এর জন্যে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে হসপিটালাইজড হওয়া, এসব হলো এর লক্ষণ।

আবার ম্যানচুজেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি হলো, অন্যকে যেমন নিজের আপন কাউকে, হতে পারে নিজ সন্তান, মা বাবা, ভাইবোনকে অসুস্থ হিসেবে প্রমাণ করা, অসুস্থ বানিয়ে উপস্থাপন করা। এটা করতে যেয়ে অনেক সময় হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে যায়।

গর্ভস্থ সন্তান হত্যা করাকে বলে ফিটিসাইড। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে, অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে অবশেষে গর্ভস্থ সন্তানকে ছুরি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করাও অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এটা ফিলিসাইডের মতো একটা ঘটনা যা অহরহ ঘটে থাকে।

ফিলিসাইড বা ফেটিসাইড কিছুই কাম্য নয়। সম্প্রতি দেশে একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ঘটনার বিভৎস ছবি আর লোমহর্ষক বর্ণনায় অনেকে ট্রমাটাইজড। তবে বাস্তবতা হলো এটাই যে ফিলিসাইড ও ফিটিসাইড দুটোই সাধারণভাবে ঘটে থাকে। এবং পেশাদার জীবনে চিকিৎসকগণ এ ধরনের রোগী প্রায়ই দেখে থাকেন।

ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

Platform:
Related Post